Aparupa on Kalyan: ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’, কল্যাণের পদত্যাগ চান অপরূপা, অভিষেককে নিয়ে বিভাজন বাড়ছে তৃণমূলে
Aparupa on Kalyan: করোনা আবহে ধর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি দু’মাস বন্ধ রাখার পক্ষে সওয়াল করেন অভিষেক। এটা তাঁর ‘ব্যক্তিগত মতামত’ বেল জানান। তাতেই তাঁর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন কল্যাণ। সেই থেকে ঝামেলা চলছে।
কলকাতা: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ নিয়ে তৃণমূলে (TMC) সংঘাত অব্যাহত। বরং যত সময় যাচ্ছে বিভাজন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। তাতে এ বার নয়া সংযোজন আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার (Aparupa Poddar)। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পাশে দাঁড়িয়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে (Kalyan Banerjee) তীব্র আক্রমণ করেছেন তিনি। অপরূপার দাবি, নিজের বক্তব্য দলের অন্দরে রাখলেি পারতেন কল্যাণ। তা না করে কল্যাণ আসলে ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’-এর মতো আচরণ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন অপরূপা। দলের মুখ্য সচেতকের পদ থেকে কল্যাণের পদত্যাগও দাবি করেছেন তিনি।
শুক্রবার এবিপি আনন্দকে দেোয়া সাক্ষাৎকারে কল্যাণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন অপরূপা। নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন দু’-দু’বারের লোকসভা সাংসদ, তেমনই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। চিফ হুইপ হিসেবে কোনও বক্তব্য থাকলে, উনি দলের মধ্যেই তা বলতেন, বাইরে নয়। আদারে মাথার উপর মমতাদি রয়েছেন। আমরা তাঁর আদর্শ মেনে চলি। আমার মনে হয়, এমন আচরণের পর ওঁর পদত্যাগ করা উচিত। কারণ উনি সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন, যা ঠিক নয়। প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করে ঠিক কী করতে চাইছেন উনি, পুরোটাই মানুষের সামনে। ওঁকে ঘরশত্রু বিভীষণ ছাড়া কী বলব?’’
এর আগে, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও অভিষেকের পক্ষ নিয়েছিলেন। প্রকাশ্যে কল্যাণের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিলেন তিনিও। কুণালের যুক্তি ছিল, ‘‘দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই রয়েছেন অভিষেক। তাই তিনি কিছু বললে দলের সাধারণ সৈনিক হিসেবে, তা চুপ করে শোনা উচিত আমাদের। কোনও মন্তব্য করার আগে সব দিক ভেবে দেখা উচিত।’’
আরও পড়ুন: Municipal Election: ‘জোর করে ভোট করার চেষ্টা হলে শৃঙ্খলাভঙ্গের পদক্ষেপ,’ হুঁশিয়ারি সৌগতর
কিন্তু কুণালের এই মন্তব্য ভাল ভাবে নেননি কল্যাণ। সাফ জানিয়ে দেন, মমতা ছাড়া কাউকে নেতা বলে মানেন না তিনি। একই সঙ্গে অভিষেকের দক্ষতা-যোগ্যতা নিয়েও কার্যত প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন কল্যাণ। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘ অভিষেক যদি ত্রিপুরা আর গোয়া জিতিয়ে দেখাতে পারেন, তাহলে ওঁকে নেতা বলে মেনে নেব।’’
প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্যে দলের বিভাজন যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তা বুঝতে পারছিলেন তৃণমূল নেতৃত্বও। তাই সৌগত রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা সকলকে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও প্রকাশ্য বাদানুবাদ, কটাক্ষ বিনিময় থামছে না।
এ দিন অপরূপার মন্তব্যের পর, সব পক্ষকে ফের সতর্ক করেন সৌগত। তিনি বলেন, ‘‘দলের মধ্যে কোনও বিতর্ক হলে, সেটা সংবাদমাধ্যমে আসা উচিত নয়। দলের মধ্যেই মীমাংসা হয়ে যাওয়া উচিত। যে মিটিংয়ে মমতা অভিষেককে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করেন, সেখানে আমিও ছিলাম। আমরা সকলেই সেটা মেনে নিয়েছিলাম। লকডাউন সম্পর্কে অভিষেকের মন্তব্যকে আমি সমর্থন করেছি, কারণ আমার সেটা ন্যায্য এবং যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, করোনা আবহে বকেয়া পুরভোট নিয়ে অভিষেকের মন্তব্য থেকেই গোটা বিতর্কের সূত্রপাত। বিরোধীদের তরফে ভোট পিছনোর দাবি উঠলেও, রাজ্য সরকার এবং কমিশনের মধ্যে এ নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজের ‘ব্যক্তিগত মতামত’ জানাতে গিয়ে করোনা আবহে দু’মাস সমস্ত রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কর্মসূচি বন্ধ রাখার পক্ষে সওয়াল করেন অভিষেক।
তা নিয়েই তাঁর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন কল্যাণ। তিনি যুক্তি দেন, দলের উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তির পক্ষে প্রকাশ্যে এমন ‘ব্যক্তিগত মতামত’ করা সমীচীন নয়। তাঁরও অনেক ‘ব্যক্তিগত মতামত’ রয়েছে, তিনিও এ বার তা প্রকাশ্যে জানাতে শুরু করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন কল্যাণ। বিষয়টি যখন আদালতে বিচারাধীন, সেই সময় অভিষেকের মন্তব্য় দল তথা মমতার সিদ্ধান্তের পরিপন্থী বলে অভিযোগ কল্যাণ অনুগামীদেরও। সেই নিয়েই দ্বন্দ্ব ক্রমশ বেড়ে চলেছে।