Saugata Roy vs Madan Mitra: যতক্ষণ রাজনীতিতে আছি, মাথা উঁচু করেই থাকব, মদন মিত্রর আক্রমণের জবাব সৌগত রায়ের
TMC: তৃণমূলের শীর্ষস্তরে ফাটলের জল্পনার মধ্যেই এবার মদন মিত্র ও সৌগত রায়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল। দু’দিন আগে নাম না করে সৌগত রায়কে নিশানা করেছিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র।
বিজেন্দ্র সিংহ, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও জয়ন্ত পাল, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: পুরভোটে (Municipal Election) তৃণমূলের (TMC) প্রার্থী তালিকা (Candidate List) নিয়ে অভূতপূর্ব বিক্ষোভের আবহেই প্রকাশ্যে চলে এসেছে তৃণমূলের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা মদন মিত্র (Madan Mitra) ও সৌগত রায়ের (Saugata Roy) দ্বন্দ্ব। কামারহাটিতে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ। তার জেরেই তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে লাগাতার নিশানা করে চলেছেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র।
কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক দলীয় বিধায়ককে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘একজন নেতা, বার বার এখানে এক কথা বলেন আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গিয়ে ভুল বোঝান। কর্মীদের সঙ্গে কুকুরের মতো ব্যবহার করেন আর শুধু লুঙ্গি পরে বসে বসে কাজু খান, কাবাব খান।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মদন মিত্র ফেসবুক লাইভ করে ঘোষণা করেছেন, পুরসভা নির্বাচনে স্থানীয় সাংসদের কোনওরকম সাহায্যই নেবেন না! তাঁর বক্তব্য, ‘কথা দিচ্ছি, আমার যে পোস্টার হবে, তাতে একটা পয়সাও আমার পশ্চিমবঙ্গ পার্টিকে খরচ করতে হবে না। এমপি সাহেবকেও না। উনি করেনও না, দেনও না। নেন কি না জানি না। ওঁকে করতে হবে না। সৌগত রায়ের কথা বলছি। এই ৩১টি ওয়ার্ডে কামারহাটির ভোটার লিস্ট আমি ছেপে দেব। পোস্টার-ব্যানার যা খরচ হবে, আমি করে দেব। চুরি করি, ডাকাতি করি আমার ব্যাপার।’
পাল্টা সৌগত রায় বলেছেন, ‘যে সব নোংরা জঘন্য কথা বলছে, তার জবাব দিতে রুচিতে বাধে। কেউ গালাগাল দিয়ে, নোংরা কথা বলে, আমাকে রাজনীতি থেকে সরাতে পারবে না। ফলে ৬৫-৬৬ থেকে একটানা রাজনীতি করতে পারতাম না, কংগ্রেস, সিপিএম, নকশাল, সব আমলই দেখেছি। এই আমলটাও দেখে যাব। যতক্ষণ রাজনীতিতে আছি, মাথা উঁচু করেই থাকব। আর ধুতি পরেই থাকব, কারও কথায় আমার পরিবর্তন হবে না। যারা আমার বিরুদ্ধে খারাপ কথা বলছে, পাবলিকলি, তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। কর্মীরা প্রতিক্রিয়া দেবে। আমি কারও বিরুদ্ধে নাম করে বলে জাতে তুলতে চাই না। আমি কারও বিরুদ্ধে কিছু বলতেও চাই না। দল যে সিস্টেম দিয়েছে, সেই সিস্টেমে পার্থ-সুব্রতরা লিস্ট ফাইনাল করেছে। তাতে মমতার অ্যাপ্রুভাল আছে, সেটাই হবে।’
কিছুদিন আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে তরজায় জড়িয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দাররা। মুখ খুলেছিলেন মদন মিত্রও। সেইসময় সবপক্ষকে শৃঙ্খলা রক্ষার বার্তা দেন দলের মহাসচিব ও শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এবার পুরভোটে প্রার্থী-অসন্তোষ নিয়ে যেভাবে দলের দুই নেতার মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে কি কোনও ব্যবস্থা নেবে দল?
আরও পড়ুন আইপ্যাকের সঙ্গে চুক্তি ভেঙে গেছে, অসুবিধা হবে, মন্তব্য সৌগত রায়ের
ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘আমাদের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি আছে। সৌগত রায় যদি অভিযোগ করেন তাহলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে কমিটি।’
মদন মিত্রর মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কখন কী যে বলে! কোনটা নিয়ে বলব ওর? কামারহাটিতে তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব ঠিক করে দিয়েছেন। কামারহাটিতেও দেখা হয়েছে।’
পুরভোটের মুখে তৃণমূলে প্রার্থী অসন্তোষ এবং তাকে কেন্দ্র করে সৌগত-মদন সংঘাতের প্রসঙ্গে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘উনি কী বলছেন, তার কী জবাব দেব! আসলে সবটাই তোলা তোলার লড়াই চলেছে। একটা টিকিট মানে তোলাবাজির লাইসেন্স। তবে মদন মিত্রকে উত্তর দিতে হবে, কেন সেদিন বনধ হল? কার স্বার্থে? উনি সমর্থন করলেন? আর মমতা তো বনধ-বিরোধী। এখানে চুপ করে বসে ছিলেন কেন?’
শুধু মদন মিত্রই নন, পুরভোটে প্রার্থিপদ ঘিরে অসন্তুষ্ট হন আরেক বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। সূত্রের খবর, পুরভোটে প্রার্থিপদ ঘিরে অসন্তোষের জেরে রবিবার তৃণমূলের বারাকপুর সাংগঠনিক জেলার পুরভোটের প্রস্তুতি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান খড়দার বিধায়ক তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়! তিনি বলেছেন, ‘তাৎক্ষণিক একটা দুঃখ লেগে ছিল যে আমি ৯ বার জেতা এমএলএ। পার্থ হোক বক্সী হোক, টেলিফোন করে হলেও তো একবার জিজ্ঞেস করলে ভাল লাগত।’
সবমিলিয়ে তৃণমূলের অন্তর্কলহ ঘিরে তরজার পারদ ক্রমশঃ চড়ছে।