Freedom Fighters: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীরা ‘সন্ত্রাসবাদী’ হয়ে গেলেন? তুঙ্গে বিতর্ক
Vidyasagar University: যদিও এই ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয় বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল।

কলকাতা: পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রশ্নপত্র ঘিরে বিতর্ক। বুধবার স্নাতক স্তরে ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইতিহাসের পরীক্ষা ছিল। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৩-এই তিন বছরে মেদিনীপুরে বিপ্লবীদের হাতে খুন হন তিন ম্যাজিস্ট্রেট। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে লেখা হয়েছে, ‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম করো, যাঁরা সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হন?‘ প্রশ্নপত্র সামনে আসতেই নিন্দায় সরব হয়েছেন অধ্যাপকরা। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। (Kolkata News)
১২ নম্বর প্রশ্নে বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে যোগাযোগ করলে ফোনে সাড়া দেননি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তবে এ নিয়ে নিন্দায় সরব হয়েছেন অধ্যাপকরা। তাঁদের বক্তব্য, "স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা গৌরবান্বিত ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসকে এতটা অপমান করা হল! এই বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী বলে উল্লেখ করা যায় না। এটা সম্পূর্ণ ভুল। যেখান থেকে, যেভাবেই হোক না কেন, ভুল ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এটা খুব হতাশাজনক, দুঃখজনক, লজ্জাজনক।" (Vidyasagar University)
বিষয়টি সামনে আসতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ই-মেলে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, "মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সরাসরি সন্ত্রাসবাদী বলা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁদের আজ সন্ত্রাসবাদী বলা হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভুলিয়ে দেওয়া, কালিমালিপ্ত করা, তাঁদের অবদানকে অস্বীকার করার চক্রান্ত করছে তৃণমূল।"
সম্প্রতি বলিউড ছবি 'কেশরী'র বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষুদিরাম বসুকে ছবিতে 'ক্ষুদিরাম সিংহ' হিসেবে উল্লেখ করায়, প্রফুল্ল চাকির নাম পাল্টে দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাকে অসম্মান করা হচ্ছে, বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করার অভিযোগে তোলেন। বিদ্যাসাগর কলেজের প্রশ্নপত্র নিয়েও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলছে বিরোধী শিবির। যদিও এই ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয় বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল।
তবে গোটা ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং বিস্ময়কর। যিনি প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন, তিনি কী ভাবেন, উপাচার্য ব্য়াখ্যা চাইতে পারেন। ভারতের যে বিশাল জনমত, যে বিপ্লবীরা সন্ত্রাসবাদী নন, তাঁরা দেশপ্রেম। ক্ষুদিরাম বসু, মাতঙ্গিনী হাজরার মতো স্বাধীনতা সংগ্রামী দিয়েছে মেদিনীপুর। সেখানে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী বলা হবে, আমাদের স্তম্ভিত করে দিয়েছে এই ঘটনা। যে অধ্যাপক প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন, নিশ্চয়ই তাঁর কাছে ব্য়াখ্যা চাইবেন উপাচার্য। সেই ব্যাখ্যা আমাদের শোনা দরকার। তাঁর ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের বোধ ও বিচারের বিরুদ্ধে গিয়েছে। তাঁর লজ্জিত হওয়া দরকার। "
১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেমস পেডিকে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে গুলি ছুড়ে হত্যা করেন বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত, জ্যোতিজীবন ঘোষ। একবছর পর ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল, আর এক ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট ডগলাসকে জেলা বোর্ডের অফিসে ঢুকে হত্যা করেন বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, প্রভাংশুশেখর পাল। পরের বছর ১৯৩৩-এর ২ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুরের একটি মাঠে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্নাড ই জে বার্জকে খুন করে বিপ্লবী অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন দত্ত, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায় ও নির্মলজীবন ঘোষ।
গুগল ট্রান্সলেটে ফেলে ট্রান্সলেট করতে গিয়েই এমন বিপত্তি ঘটেছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে। কিন্তু কারও চোখে পড়ল না কেন, দায়িত্বজ্ঞান নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে চাপের মুখে পড়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রশ্নকর্তা কে, মডারেশনের দায়িত্বে কে ছিলেন, তা নিয়ে পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থার কাছ থেকে বিশদ রিপোর্ট তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। আজকের মধ্যেই রিপোর্ট জমা পড়ার কথা। এর পর কী করা হয়, সেদিকে তাকিয়ে সকলে।
ইংরেজ শাসকরা ভারতীয় বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' বললে উল্লেখ করতো। স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর নিজের দেশেই কেন বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' বলে অভিহিত হতে হবে, সেই নিয়ে বিতর্ক চরমে। এর আগে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের 'বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী' বলা হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রে সরাসরি বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' বলা হয়েছে।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI






















