Tajpur Port: ধাক্কা খেয়েছে আদানি গোষ্ঠী, তাজপুরে প্রস্তাবিত বন্দরকে ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ-সংশয়
Tajpur Adani Group: পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর. কী হবে ওই প্রকল্পের? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঋত্বিক প্রধান, তাজপুর: একের পর এক প্রকল্পের আশ্বাসই সার। কিন্তু কোনওটাই বাস্তবায়িত হয়নি। উইন্ডমিল, সৌরবিদ্যুতের পর, তাজপুর বন্দর নিয়েও আশার আলো দেখছেন না পূর্ব মেদিনীপুরের বেঙ্গল সল্ট প্রকল্পের প্রাক্তন কর্মী ও তাঁদের পরিবার। ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিস্ফোরক রিপোর্টে বিতর্কের মুখে গৌতম আদানি গোষ্ঠী। তা নিয়ে সারা দেশ যখন তোলপাড়, তখন বঙ্গবাসীর কপালেও চিন্তার ভাঁজ!! এর কারণ অবশ্যই পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর. কী হবে ওই প্রকল্পের? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গৌতম আদানির সংস্থার হাতে, ওই বন্দর গড়ে তোলার দায়িত্ব দেন মুুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিস্ফোরক রিপোর্টের পর আদানি গোষ্ঠী যেভাবে ধাক্কা খেয়েছে, তাতে তাজপুরে প্রস্তাবিত বন্দরকে ঘিরেও বাড়ছে উদ্বেগ আর সংশয়। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাজপুর লাগোয়া মন্দারমণি থানার অন্তর্গত, বেঙ্গল সল্ট প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা।
বেঙ্গল সল্টের প্রাক্তন কর্মী মদনমোহন দাস বলেন, "আমাদের বকেয়া ও দাবি নিয়ে কারোর হেলদোল নেই। এখন আবার বলা হচ্ছে তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্ভরশিল্প এখানে গড়ে উঠবে। কিন্তু যা অবস্থা দেখছি তাতে তা হবে কিনা সন্দেহ আছে।"
আরও পড়ুন, স্কুলে চাকরি বিক্রির টাকাতে সিনেমা, মিউজিক ভিডিও? নিয়োগ দুর্নীতিতে এজেন্টদের তথ্য প্রকাশ্যে
স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে, ১৯৩৪ সালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে দাদনপাত্রবাড়ে গড়ে উঠেছিল বেঙ্গল সল্ট প্রজেক্ট। ২০০৬ সালে, বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় এই প্রকল্প পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে প্রাক্তন কর্মীদের ৭৫টি পরিবার প্রকল্প এলাকাতেই বসবাস করে আসছেন। পুকুরে মাছ চাষ আর অল্পবিস্তর নুন উৎপাদন করে কোনওমতে দিন কাটছিল তাঁদের।
রাজ্যে পালাবদলের পর, কখনও উইন্ড মিল, কখনও সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প, এখন আবার তাজপুর বন্দর সংক্রান্ত প্রকল্পের চিন্তাভাবনা চলছে বেঙ্গল সল্টের জমিতে। কিন্তু এখানে না হয়েছে উইন্ড মিল, না হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। তাজপুর বন্দর নিয়েও খুব একটা আশার আলো দেখছেন না এখানকার বাসিন্দা ও পুরনো কর্মীরা। উপোরন্তু, প্রকল্প পুনরুজ্জীবনের নামে জলাজমি ভরাট করায় রুটিরুজিতে কোপ পড়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে, বেঙ্গল সল্টের ভবিষ্যত নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। রামনগরের কারামন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি বলেন, 'জাপানি সংস্থা চুক্তি বাতিল করায় সৌর বিদ্য়ুৎ প্রকল্প হয়নি। তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর হবে। দেখা গেছে দাদনপাত্রবাড়ের দিকে নাব্যতা বেশি। এখানে একটি প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে।' অন্যদিকে, কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, 'এই সরকার পুরো ধাপ্পাবাজিতে চলছে। মানুষের রুজিরোজগার নেই। সমুদ্রতীরবর্তী প্রান্তিক অঞ্চলে রুজিরোজগার কেড়ে নিজেদের লোকেদের পকেট ভরানোর ফন্দি মানুষ ধরে ফেলেছে।'
বন্ধ বেঙ্গল সল্টের বিস্তীর্ণ জমিতে আদৌ গড়ে উঠবে কোনও শিল্প? কবে মেটানো হবে বকেয়া পারিশ্রমিক? সেই দিকে চেয়ে এখানকার আবাসিকরা। প্রতিবারই সমীক্ষা হয়েছে। জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে শিল্পের জন্য। কিন্তু তা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি। তাই এই যে জায়গা পড়ে রয়েছে, সেই জায়গার ওপরে কবে শিল্প বাস্তবায়িত হয়, সেদিকে তাকিয়ে বেঙ্গল সল্টের প্রাক্তন কর্মী থেকে বাসিন্দারা।