West Bengal Government : বাম জমানা হোক বা তৃণমূল আমল, শিল্প এবং শিল্পী বারবার শাসকের কোপে
District News : প্রশ্ন উঠছে, এই ধারা থামবে কবে? শিল্পের ওপর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের এই প্রবণতায় দাঁড়ি পড়বে কবে ?
কলকাতা : শহিদ মিনারে ডিএ আন্দোলনকারীদের (DA Protest) মঞ্চে নাটক মঞ্চস্থ করায় শাসকের রোষে নাটকের দল ? ডিএ বঞ্চনার প্রতিবাদে শহিদ মিনারে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন মঞ্চে নাটক মঞ্চস্থ করার পরেই নদিয়ার চাকদার নাট্য়জনের বুকিং বাতিল করে দেওয়ার অভিযোগ। আর যারপরই ফের একবার সামনে উঠে আসছে, শিল্প ও শিল্পীর বারবার শাসকের রোষে পরার ধারা। বাম আমল হোক বা তৃণমূল জমানা, রাজ্যের ছবিটা একইরকম।
সোভিয়েত চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর লেখায় সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, সরকার যেখানে শিল্পের সংজ্ঞা নির্দেশ করে দেবেন, সেখানে শিল্পীর স্বাধীনতা এই নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যেই আবদ্ধ। সেই তাঁর রাজ্য়েই বারবার শাসকের কোপে পড়েছে শিল্প এবং শিল্পী। বাম জমানা থেকে তৃণমূল আমল। সেই ধারা চলেছে সমানে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Budhhadeb Bhattacharya) আমলে চাপের মুখে বন্ধ হয়েছিল ব্রাত্য বসুর লেখা নাটক ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’-এর শো।
২০১১ সালের মার্চে হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় ‘পশু খামার’ নাটকের শো বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে। তবে তার বিরুদ্ধে প্রেস বিবৃতি দিয়ে সমালোচনা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ মহাকরণ থেকে প্রেস বিবৃতি দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নাটক বন্ধ করা হয়েছে ৷ হুগলিতে ওই নাটকের প্রদর্শন বন্ধ করা অনুচিত হয়েছে বলে আমি মনে করি ৷
২০১২ সালের অক্টোবরে উত্তর ২৪ পরগনার বরানগরে, সিপিএমের (CPM) সভায় যোগ দেওয়ায়, মাছ বিক্রেতাদের বাজারে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল বিরুদ্ধে। তারই প্রতিবাদে করে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল নাট্যকার বিমল চক্রবর্তীকে। ঘটনাচক্রে সেই সময়ই সরকারি কর্মী বিমল চক্রবর্তীকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল সরকার। এই ঘটনার নিন্দায় পথে নামেন বিদ্বজ্জনেরা।
২০১২ সালে কলকাতা পুরসভা পরিচালিত স্টার থিয়েটারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডের ওপর তৈরি ছবি ‘তিন কন্যা’র প্রদর্শন। ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির ত্রয়োদশ নাট্যমেলা থেকে বাদ পড়েছিল কৌশিক সেনের ‘স্বপ্ন সন্ধানী’ ও সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘তৃতীয় সূত্র’৷ যেখানে উঠেছিল আমরা-ওরার অভিযোগ।
২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে আগে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় নাটকের দল তাঁকে বহিষ্কার করে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন, অভিনেতা কৌশিক কর। ২০২২-এর ডিসেম্বরে, বেলেঘাটায়, জোর করে নাট্যমেলা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়ে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেছিলেন, আমার পরের অভিনয় ১৫ জানুয়ারি, রবীন্দ্র সদন মঞ্চে, এসে মেরে যান। আমি প্রতিবাদ করছি, এটা জেনেই যে এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যাঁর গায়ে হাত উঠেছে, তাঁর গায়ে আবার হাত উঠতে পারে। যিনি হাত তুলেছেন, তিনি তাঁর সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন। পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব আনন্দযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে। অনেক জলঘোলার পর, অবশেষে জানুয়ারিতে জায়গা বদলে সেই নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
চলতি বছর ৯ এপ্রিল রূপকের মাধ্য়মে হাথরস, বগটুই এবং হাঁসখালির ঘটনা তুলে ধরে তৃণমূল (TMC) ও বিজেপির (BJP) সমালোচনায় নাটক মঞ্চস্থ করায় রানাঘাটে নাট্য়কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে পঞ্চায়েত সদস্য-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেনের মতো নাট্য়ব্য়ক্তিত্বরা তার প্রতিবাদে সরব হন।
এবার ডিএ আন্দোলনের মঞ্চে দুর্নীতি-বিরোধী নাটক মঞ্চস্থ করায় শাসক-রোষে সরকারি প্রেক্ষাগৃহে চাকদা নাট্যজনের শো বাতিলের অভিযোগ উঠল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এত সমালোচনায় তাহলে কাজ হচ্ছে কোথায় ? এই ধারা থামবে কবে? শিল্পের ওপর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের এই প্রবণতায় দাঁড়ি পড়বে কবে ?
আরও পড়ুন- DA আন্দোলনের মঞ্চে নাটক করায় শাসকের রোষে? বুকিং বাতিল নাট্যদলের