Malda: ৫ টাকার লক্ষ্ণণভোগ, ১০ টাকায় হিমসাগর! ক্রেতা খুশি, উদ্বেগে চাষি-বিক্রেতা
Mangoes: চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। খুচরো বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি পাঁচ টাকায়। কেন এত পড়েছে দাম?
অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: আমের ভরা মরসুম। এবার ফলনও হয়েছে বিপুল। ফলে গ্রীষ্মের গোড়া থেকেই আমের স্বাদে মজেছে রাজ্যবাসী। বাজারে এখন চারিদিকে আম। পকেটেও বেশি চাপ পড়ছে না। কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকায় যা দামে খুচরো বাজারে আম বিকোচ্ছে, সেটা যদি কারও সস্তা মনে হয়। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসতে পারেন মালদায়। চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। খুচরো বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি পাঁচ টাকায়। মালদা আম চাষের জন্য বিখ্যাত। ফলনের জায়গায় দাম একটু হলেও কম থাকে। কিন্তু তাই বলে এত?
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এবার মালদায় আম ফলেছে বিপুল। একদিকে প্রচুর ফলন হলেও অন্যদিকে রফতানি তেমন একটা হয়নি। সেই কারণেই রাজ্যের বাজারে বা স্থানীয় বাজারে জোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম পড়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, লক্ষ্মণভোগের মতো আম বাজারে বিকোচ্ছে পাঁচ টাকা কিলো দরে। বাগানে চলে গেলে ওই আম বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি ১-২ টাকাতে। যেগুলো একটু নামকরা আমের প্রজাতি। সেগুলোর দামও তুলনায় অনেকটই কম। মালদা শহরের বিশ্বনাথ মোড়ের বাজারে আম বিক্রি করছিলেন দুল্লি চৌধুরী৷ তিনি বলেন, 'লক্ষ্মণভোগ এখন পাঁচ টাকা কিলো দরে বিক্রি করছি৷ হিমসাগর আর ল্যাংড়ার দাম প্রতি কিলো ১০-১৫ টাকা৷ এবার গাছে প্রচুর আম আছে৷ তাই দর নেই৷ আমরা বাগান থেকে এক থেকে তিন টাকা কিলো দরে পাকা আম কিনছি৷ যেমন পাচ্ছি, বাগান থেকে তেমনই আম নিয়ে আসছি।' আর এক খুচরো বিক্রেতা, জহুরাতলা হলদি পুকুরের শেফালি মণ্ডল বলেন, 'এবার লক্ষ্মণভোগ, রাখালভোগ সহ বিভিন্ন জাতের পাকা আম পাঁচ থেকে আট টাকা দরে খুচরো বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কিলো ক্ষীরসাপাতি বা হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়। ল্যাংড়ার দামও একইরকম৷ বাইরে আম যাচ্ছে না৷ তাই আমের দাম অনেকটা কমে গিয়েছে৷'
আপাতত বিহার ও অসম ছাড়া বাইরে কোথাও আম রফতানি হচ্ছে না। বাংলাদেশেও আম রফতানি হচ্ছে না। তার মধ্যে তুঙ্গে উঠেছে জোগান। এবার মালদা-মুর্শিদাবাদের সঙ্গে একই সময় মুকুল এসেছিল দক্ষিণবঙ্গের বাগানেও। ফলে একইসঙ্গে সব জায়গার আম বাজারে নেমেছে। তার উপর এবার অন্য রাজ্যগুলিতেও আমের ফলন বেশ ভাল হয়েছে। বাংলাদেশে আম রফতানি বন্ধ রয়েছে। তাই এবার জেলায় আমের দর আর ওঠার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
উদ্বেগে আম বিক্রেতা-চাষিরা:
আমের দাম কমায় ক্রেতারা খুশি হলেও, উদ্বেগ বেড়েছে ব্যবসায়ী ও চাষীদের। নিজে আমের চাষ করেন স্বপন পোদ্দার, একইসঙ্গে পাইকারি ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। তাঁর বক্তব্য, 'এবার ধারণার বাইরে আমের ফলন হয়েছে। দামও পড়ে গিয়েছে ধারণার বাইরে। আমরা ভাবতেই পারিনি, দর এতটা তলানিতে চলে আসবে। গাছপাকা লক্ষ্মণভোগ এক টাকা কিলোতেও বিক্রি করতে হচ্ছে। নইলে সেই আম ফেলে দিতে হবে। যা পরিস্থিতি তাতে বাজারে আম নিয়ে যাওয়ার খরচটুকুও উঠছে না৷ এ বার সব জায়গায় একইসঙ্গে আম পেকেছে। ফলে জেলার আম বাইরেও যাচ্ছে না৷ প্রচুর ঋণ নিয়ে বাগান লিজ নিয়ে আমচাষ করেছিলাম৷ এখন চিন্তা হচ্ছে, লিজের টাকা শোধ হবে কি না, দর আর চড়বে বলে মনে হয় না।'
কোতওয়ালি মরাপুকুর এলাকার আমচাষি সন্দীপ চৌধুরী বলছেন, 'এবার আমের খদ্দেরই নেই৷ আমের দর একেবারে তলানিতে৷ আমাদের অবস্থা খুবই সঙ্গীন৷ এখন ফজলি আর আশ্বিনার বাজারের আশায় বসে রয়েছি৷'
আরও পড়ুন: একের বেশি ফর্ম ১৬ থাকলে কীভাবে ফাইল করবেন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ? রইল সহজ সমাধান