এভাবেও ফিরে আসা যায় : পড়তে পড়তে বিয়ে, গার্হস্থ্য হিংসার শিকার ; পরে আমলা, অনুপ্রেরণার নাম সবিতা
Success Story : কমবয়সে বিয়ে, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে জীবন দিতেও গিয়েছিলেন। পরে আমলা হন সিভিল সার্ভিস দিয়ে।
IAS Success Story : লড়ার আগে বারবার হেরে যেতে হয় যাঁদের, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে পারে হার না মানা এক লড়াকু মেয়ের অনবদ্য লড়াই। তিনি এখন প্রশাসনিক পদে। আমলা। তবে যত সহজে পড়তে পারা যায় এই বাক্যগুলি, ততটা সহজ ছিল না তাঁর লড়াই। কম বয়সে বিয়ে, গার্হস্থ্য হিংসার (Domestic Violence) শিকার থেকে মাথার উপর থেকে ছাদ চলে যাওয়া, সব সয়েছেন। হারতে হারতেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। হয়েছেন আমলা।
মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রাম মান্ডি। এক আদিবাসী পরিবারে জন্ম হয় মেয়েটির। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার, তাই সে পরিবারে যে যুদ্ধটা কেমন লড়তে হয়, যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁরাই জানেন। পরিবারের তৃতীয় সন্তান সবিতাকেও লড়াইটা লড়তে হয়েছিল ছোট থেকেই। হার না মানা মনোভাব নিয়ে ক্লাস টেনের পড়াশোনা শেষ করে মেয়েটি। গ্রামে সেই ছিল প্রথম মেয়ে যে এই গণ্ডি টপকেছিল। পড়াশোনায় খারাপ ছিল না। এগিয়ে যাওয়াটা সম্ভব হত না, যদি না মেধার জোরে স্কলারশিপের শিকে না ছিঁড়ত।
মাধ্যমিক তো হল। এরপরে কী ? স্কুল যে বড় দূর। গাড়ি করে যাওয়ার চিন্তাও তখন সবিতার কাছে বিলাসিতা। অগত্যা, মেয়ে ঠিক করে, পায়ে হেঁটেই স্কুল করবে সে। সাত কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই যাতায়াত শুরু। শুরু উঁচু ক্লাসের পড়াশোনা করে আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা। সঙ্গে রোজকার গাড়িভাড়ার দু’টাকা বাঁচিয়ে ফেলার আনন্দ।
তবে সুখ কপালে থাকলে তো। বয়স তখন ষোলে-সতেরো হবে। পড়াশোনা শেষ হতে না হতেই সবিতার জন্য সম্বন্ধ আসতে থাকে। গরিব পরিবার, তাই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার চিন্তা হয়তো ছিল পরিবারের। তাই আর্থিকভাবে স্বচ্ছন্দ পরিবার থেকে একটা যোগাযোগ আসতে না আসতেই বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়ে যায় সবিতার। বিয়ের পরে কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বমূর্তি ধারণ করে সবিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। স্বামীও।
যত দিন গিয়েছে, নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে মেয়েটিকে। বাড়ির অন্যদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে খাওয়া চলত না। সিনেমার গল্পের মতো, সবার খাওয়া হয়ে গেলে তবেই জুটত খাবার। জোরে হাসি ছিল মানা। ইতিমধ্যেই মা হয়েছে সবিতা। কিন্তু, অত্যাচার থামেনি। মারত স্বামী, মেরে ফেলার হুমকি দিত।
সহ্যের সীমা ছাড়ায় একদিন। আর না পেরে নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মেয়েটি। একদিন ফ্যানে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সবিতা। জানালায় ছিল শাশুড়ির মুখ। বাঁচানোর চেষ্টা তো দূর অস্ত, কোনও হেলদোল ছিল না মহিলার।
এখান থেকেই সবিতার ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। কেন এদের মতো লোকের জন্য নিজের জীবন দেবেন তিনি ? এই উপলব্ধি সবিতাকে ফিরিয়ে আনে সর্বনাশী সিদ্ধান্ত থেকে। শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। দুই বাচ্চাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন সবিতা।
কাজ শুরু করেন স্যালোঁয়। শুরু করেন টিউশন। একইসঙ্গে শুরু করেন পড়াশোনা। ছোটবেলার তেজ ফিরিয়ে আনেন লেখাপড়ায়। প্রথমবারের চেষ্টাতেই স্নাতক হন। তারপর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে স্নাতকোত্তর।
পরের ধাপ আরও কঠিন। তবে বজ্রকঠিন ছিল সবিতার প্রত্যয়। জানতে পারেন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ব্যাপারে। মনস্থির করে ফেলেন। পরীক্ষায় বসেন সবিতা। তারপর, একেবারে প্রথমবারের চেষ্টায় সফল হন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে। কর্মজীবন শুরু করেন, চিফ মিউনিসিপ্যাল অফিসার হিসেবে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI