CV Ananda Bose: 'নিন্দা জানাবেন কি প্রধানমন্ত্রী?..', রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি অভিযোগে প্রশ্ন শশী-চন্দ্রিমাদের
Shashi Chandrima Governor Molestation: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি অভিযোগের দিনেই পূর্ব নির্ধারিত সফরসূচি অনুযায়ী রাজভবনে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী, কী বলছে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব ?
রুমা পাল, দীপক ঘোষ ও সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: ১৮০৩ সালে তৈরি। ব্রিটিশ জমানায় ছিল ভাইসরয়ের সরকারি বাসভবন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য়পালের ঠিকানা। বাংলার সেই রাজভবনের ইতিহাসে বেনজির ঘটনা। সেখানকার প্রধান বাসিন্দা রাজ্য়ের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্য়পাল সি ভি আনন্দ বোসের ((WB Governor CV Ananda Bose) বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির (Molestation Case) অভিযোগ করলেন রাজভবনেরই অস্থায়ী কর্মী। বৃহস্পতিবার রাতেই হেয়ার স্ট্রিট থানায় এই লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। ইতিমধ্য়েই এই ঘটনায় তীব্র আক্রমণ করেছে শাসকদলের শীর্ষ নের্তৃত্ব। কী বলছেন মেঘালয় প্রাক্তন রাজ্য়পাল তথাগত রায় ?
আমরা নিন্দা জানাচ্ছি : শশী পাঁজা
তৃণমূল বিধায়ক ও শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, 'আজকে তাঁর রাজভবনে একটি মেয়ে, একটি মহিলা সে অভিযোগ করছে এবং প্রথমবার তাঁর ওপর শ্লীলতাহানি নয়, অনেকবার হয়েছে। সে কোনওরকম সাহস জোগাড় করে পুলিশকে কোনওরকমে হেয়ার স্ট্রিট থানাতে অভিযোগ করেছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য়পাল মনোনীত করেন তাঁরা। সে উদ্দেশ্য় থাকে যে নির্বাচিত সরকারগুলোতে বিরক্ত করা। যেমন এখানে বিরক্ত করছিল পরপর রাজ্য়পালগুলো।' শেষ অবধি পাওয়া খবরে ইতিমধ্যেই রাজভবনে পৌঁছে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তবে তাঁর পৌঁছনোর আগেই শশী পাঁজা বলেছিলেন,' আজকে রাতে মহামান্য় প্রধানমন্ত্রী আসবেন বাংলায়, কালকে মিটিং করার জন্য়। আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা অপেক্ষায় রইলাম, যে নিন্দা জানাবে কি বিজেপি? নিন্দা জানাবেন কি প্রধানমন্ত্রী? রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।'
রাজ্যপাল নারীর অপমান করছেন : চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য
মূলত পূর্ব নির্ধারিত সফর সূচি অনুযায়ী এদিনই রাজভবনে এসে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি পৌঁছনোর আগেই এদিন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির আগামীকাল নাকি তিনটে সভা আছে। কোথায় থাকবেন ? রাজভবনে থাকবেন। রাত্রিবাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজভবনে। তার আগে একী কাণ্ড ! রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র জমা দিতে গিয়েছেন একজন মহিলা। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। এ কী ধরণের ঘটনা ঘটছে ? রাজ্যপাল তিনি নারীর অপমান করছেন। অসম্মান করছেন । তাও বাংলার মাটিতে ।'
এটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, লজ্জার ঘটনা : তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ
এদিকে এই প্রতিক্রিয়ার পরেই অসংসদীয় মন্তব্যের অভিযোগ তুলে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের রাজভবনে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেছেন,'বাংলার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, এটা ভয়ঙ্কর। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মহিলাকে শ্লীলহানির অভিযোগ। এটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, লজ্জার ঘটনা।'
পাল্টা কী দাবি রাজভবন সূত্রে ?
রাজভবন সূত্রে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, যখন থেকে রাজ্য়পাল ময়দানে নেমে গুন্ডাদের চ্য়ালেঞ্জ করতে শুরু করেছেন, তখন থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে হুমকির পর হুমকি এবং আজব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সন্দেশখালির পর রাজভবনে বোমা রাখার ও রাজ্য়পালকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। রাজ্য়পালের গতিবিধির ওপর সরকারিভাবে রাশ টানা হয়েছিল। কিন্তু, রাজ্য়পাল কখনও ময়দানে নেমেছেন, কখনও পিস রুমে হাজির থেকেছেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ময়দানে নামায় এবং বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ব্য়াপারে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায়, রাজ্য়পালের বিরুদ্ধে একের পর এক গল্প ছড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে এই অভিযোগের অশুভ উদ্দেশ্য় রয়েছে। রাজ্য়পাল সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন এবং ২ মন্ত্রীর বিচার প্রক্রিয়ায় ছাড়পত্রও দিয়েছেন।
কী বলছে কলকাতা পুলিশ ?
কলকাতা পুলিশ সূত্রে দাবি, অভিযোগকারী মহিলা দাবি করেছেন, রাজ্য়পাল দু'বার তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন। সূত্রের দাবি, অভিযোগপত্রে তিনি দাবি করেছেন, ২৪ এপ্রিল রাজ্য়পাল তাঁকে অফিস রুমে ডেকে বিভিন্ন আলোচনার পর কুপ্রস্তাব দেন, গায়ে হাত দেন। বৃহস্পতিবার ফের কনফারেন্স রুমে ডেকে, চাকরির প্রোমোশনের প্রলোভন দেখিয়ে কথা বাড়ান। গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টাও করেন। পাল্টা রাজভবন সূত্রেও চাঞ্চল্য়কর দাবি করা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোট পর্বের হিংসার অভিযোগ শুনতে রাজভবনে পিস রুম খুলেছিলেন সি ভি আনন্দ বোস।
ঠিক কী হয়েছিল ?
সেই প্রসঙ্গ টেনে রাজভবন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, আগেই সন্দেহ ছিল, পিস রুমে কেউ খবর বিকৃত করছে এবং রাজনৈতিক দলের কাছে খবর পৌঁছে দিচ্ছে। এও জানা যায়, ওই মহিলা কর্মী মিথ্য়ে রিপোর্ট দেন যে, পিসরুমে আসা অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংবাদ মাধ্য়মকে জানায়, তারা অভিযোগ পায়নি। অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, ওই মহিলা কর্মী তাঁর বয়ফ্রেন্ড যিনি রাজভবনেরই কর্মী, তাঁর সাহায্য়ে, নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ পাঠানোর পথে বাধা তৈরি করছিলেন। এনিয়ে তিরষ্কার করা হলে, তিনি বইরে গিয়ে হেনস্থার অভিযোগ করেন। সহকর্মীদের সঙ্গেও তাঁর খামখেয়ালিপনা দেখানোর অভ্য়েস ছিল বলে জানা গেছে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কি রাজ্য়পালের বিরুদ্ধে ব্য়বস্থা নিতে পারে? কী বলছেন আইনজ্ঞরা ?
তবে এখন প্রশ্ন হল, এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কি রাজ্য়পালের বিরুদ্ধে ব্য়বস্থা নিতে পারে? আইনজ্ঞরা বলছেন, তার কোনও সম্ভাবনাই নেই। তার কারণ, রাজ্য়পাল পদে থাকাকালীন রক্ষাকবচ থাকে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৬১ ধারায় রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্য়পালকে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ দেওয়া আছে। পদে থাকাকালীন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা শুরু করা যায় না। রাজ্য়পাল বা রাষ্ট্রপতিকে জিজ্ঞাসাবাদও করা যায় না।
আরও পড়ুন, 'আমার সম্মানহানী করে..', শ্লীলতাহানির অভিযোগে কী প্রতিক্রিয়া রাজ্যপালের ?
রাজ্য়পালের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি নালিশ করা যায় না : মেঘালয় প্রাক্তন রাজ্য়পাল তথাগত রায়
কলকাতা পুলিশ সূত্রে দাবি, এই সাংবিধানিক রক্ষাকবচের জন্য় লিখিত অভিযোগ করা হলেও, রাজ্য়পালের বিরুদ্ধে কোনও মামলা শুরু করা যাচ্ছে না। তবে গোটা ঘটনা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কিংবা রাষ্ট্রপতির কাছে জানানো যায় কিনা, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যায় কিনা, সে ব্য়াপারেও আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। মেঘালয় প্রাক্তন রাজ্য়পাল তথাগত রায় বলেন, রাজ্য়পালের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি নালিশ করা যায় না। ৩৬১ নম্বর ধারায় বার আছে। ক্রিমিনাল কেস করা যায় না। যে মহিলা এটা করেছেন, তিনি হয়তো এটা জানেন না। বা তাঁকে এটা যারা পড়িয়েছে, তাঁরা এটা জানে না।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।