(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Strand Road Fire : ফের আগুন কলকাতার বহুতলে, এক নজরে মহানগরীর সর্বনাশা অগ্নিকাণ্ডের ইতিহাস
ক্ষত মেলানোর আগেই সেই ঘটনাস্থল থেকে ঠিক ৫০০ মিটার দূরে আবার ভয়াবহ আগুন।
কলকাতা : ৮ মার্চ। স্ট্র্যান্ড রোডে ভয়াবহ আগুন নেভাতে গিয়ে, আগুনের গ্রাসেই প্রাণ হারালেন কয়েকজন দমকলকর্মী। বদ্ধ লিফটের মধ্যে থেকে উদ্ধার হল মৃতদেহ। স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের অফিসে প্রায় ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। সেই আগুনে ২টি লিফটে আটকে ঝলসে মৃত্যু হয় ৯ জনের। সেই আগুনের ঘা এখনও দগদগে। ক্ষত মেলানোর আগেই সেই ঘটনাস্থল থেকে ঠিক ৫০০ মিটার দূরে আবার ভয়াবহ আগুন। বুধবার সাতসকালে এই আগুনের ঘটনা প্রায় নড়িয়ে দিয়েছে শহরবাসীকে। আগুনের শিখা কলকাতাবাসীকে মনে করিয়ে দিল এগারো বছর আগের আরেক অভিশপ্ত মার্চের কথা।
২০১০ সালের ২৩ মার্চ। সেদিন আগুন লাগে আঠেরোর এ’ পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টে। পাঁচ ও ছ’তলায় আটকে পড়েন বহু মানুষ ৷ বাড়ি থেকে বেরোতে না পেরে প্রাণ হারান ৪৩ জন। তার দু’বছর আগে আরেক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী ছিল এই শহর।
২০০৮ সালের ১২ জানুয়ারি । আগুন লাগে বড়বাজারের নন্দরাম মার্কেটে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় বাড়ির সাত-সাতটি তলা। প্রায় চারদিন ধরে জ্বলে সেই আগুন ৷ পুড়ে ছাই হয়ে যায় বারোশোর বেশি দোকান।
নন্দরাম মার্কেটের সেই অগ্নিকাণ্ডের অভিশপ্ত স্মৃতি ফিরে আসে দশ বছর পর বাগড়ি মার্কেটে। ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। মধ্য কলকাতার ক্যানিং স্ট্রিটের বাগরি মার্কেটের এই ছ’তলা বাড়িতে আগুন লাগে। ধীরে ধীরে লেলিহান শিখা গ্রাস করে নেয় গোটা বাড়িটাকে। তিনদিন ধরে তাণ্ডব চালিয়ে এত বড় বাড়িটাকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে ভয়াবহ আগুন। কোটি কোটি টাকার জিনিস ছাই করে দিয়ে, সেই আগুন বহু মানুষকে সহায়-সম্বলহীন করে দিয়েছিল। ঠিক যেমন ঢাকুরিয়া আমরির আগুন কেড়ে নিয়েছিল ঊননব্বইটি প্রাণ।
২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর । শীতের ভোরে আগুন লাগে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে৷ কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে গোটা হাসপাতালে। মৃত্যু এগিয়ে আসছে দেখেও অসুস্থ মানুষগুলো বেরিয়ে আসতে পারেননি। অসহায়ভাবে ছটফট করতে করতে মৃত্যু হয় তাঁদের। কিছু রোগীকে দড়ি বেঁধে নীচে নামানো হয়।
২০১২-র ২২ মার্চ । আরেক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল হাতিবাগানে। দমকলের ৩২টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল সেই আগুন। ১৯৯৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ময়দানে বইমেলা চলাকালীন আগুন লেগে যায়। আগুনের লেলিহান শিখার গ্রাসে চলে যায় অসংখ্য বই।
২০০২ সালের ২৪ এপ্রিল নিউ মার্কেট এলাকায় ফিরপো মার্কেটে আগুন লাগে। ভস্মীভূত হয়ে যায় বহু দোকান। ২০০৬ সালের ২২ নভেম্বর তপসিয়ায় চামড়ার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যু হয়।
সর্বনাশা আগুন গিলে খেয়েছে এশহরের অনেক কিছু। ফের কলকাতার বুকে আরেক দগদগে ক্ষতচিহ্ন এঁকে দেয় নতুন কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের আরেক অগ্নিকাণ্ড। তারপর ফের ৩১ মার্চ। সাতসকালে স্ট্র্যান্ড রোডে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আগুন। সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ এন সি দত্ত রোডে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের চারতলায় আগুন লাগে। ওই তলায় ক্যান্টিন ও কয়েকটি দফতর রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। চারতলা থেকেই আগুন লাগে বলে প্রাথমিক অনুমান। দমকলের ৬টা ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। আবারও কোনও ভয়ঙ্কর স্মৃতি তৈরি যাতে না হয় মহানগরীর বুকে, সেই চেষ্টাতেই লড়াই চালাচ্ছেন দমকল কর্মীরা।