এক্সপ্লোর

Bibhutibhushan Bandyopadhyay: তাঁর 'মানস পুত্র' আছে মহানগরের অলিগলিতে, সত্যজিৎ-র ফ্রেমে আজও 'অপরাজিত' বিভূতিভূষণ

Bibhutibhushan Bandyopadhyay Birth Anniversary : বাংলার কিংবদন্তি লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে, সত্যজিতের ফ্রেমে একবার ফিরে দেখা যাক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

কলকাতা: একজন লেখক হোক, গীতিকার হোক, পরিচালক হোক, কিংবা সুরকার, তাঁদের একটা সৃষ্টিই যথেষ্ট, গোটা প্রজন্মর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দিতে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের  (Bibhutibhushan Bandyopadhyay) অসংখ্য বইয়ের মধ্যে যদি শুধু একটা সৃষ্টিতেই আরোহণ করা যায়, তা জীবনের এক অন্যতম মুহূর্ত হবে। বাকিগুলি অমোঘ টানে ওমনি আসবে। তবে প্রথম প্রেম ভোলার নয়, একথা পাঠকের জন্যও সত্য। ধরে নেওয়া যাক, সেই বইটা 'অপরাজিত।' অপুকে বিভূতিভূষণের 'মানস পুত্র' বলা হয়। তাই সেই একা অপুই যথেষ্ট, চিন্তাভাবনার প্যারামিটারকে নাড়িয়ে দেবার জন্য। এবার রইল বাকি সত্যজিৎ রায় (Satyajit Roy)। কারণ বিভূতিভূষণ এবং সত্যজিৎকে যিনি মিলিয়েছেন, তিনি বোধহয় অপুই। বই পড়ে ছবি দেখা এবং ছবি দেখে বই পড়া, এই দুটোর মধ্যে একটা বিস্তর ফারাক রয়েছে। বই পড়ে যে ইমাজিনেশনটা তৈরি হয়, ছবি দেখার পরেও সেটা থেকে যায়। দুটোই ভাবনার আলাদা স্তর। তবে ছবি দেখে পরে বই পড়লে, ধাওয়া করে অডিও ভিস্যুয়াল। পিছু ছাড়ানো মুশকিল। চলুন বাংলার এই কিংবদন্তি লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে, সত্যজিৎ-র ফ্রেমে একবার ফিরে দেখা যাক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

'অচেনার আনন্দ'

কনে দেখা হল আলোয়, দিঘির জলে তখন প্রতিফলনের দৃশ্য। 'অপুর সংসার'-এ পালকি করে এল পাগল বর। খবর চাউর হতেই, তখনও মেয়ের বাবা বলে চলেছেন, জামাইয়ের প্রচুর সম্পত্তি আছে। বহাল তবিয়তে থাকবে মেয়ে। এদিকে মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হোক, কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না মা। সুতরাং এই বরের সঙ্গে কিছুতেই বিয়ে হতে পারে না। কিন্তু তাহলে মেয়ের কী হবে ? কেউ কি আছে সেই সন্ধ্যায়, যে তাঁর মেয়ের গলায় মালা পড়াবে। পড়ল খোঁজ। তখন নদীর পাড়ে শুয়ে আছে, বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে আসা এক যুবক। যে সদ্য তাঁর মাকে হারিয়েছে। নিজের বলতে কিছু যে নেই তাঁর। আছে শুধু স্বপ্ন, একটা বাঁশি আর একখানি পান্ডুলিপি। যাইহোক, অবশেষে তাঁকেই করা হল অনুরোধ। প্রথমে সে রাজি না হলেও, পরে তিনিই হলেন বর। বিবাহ সম্পূর্ণ হল। বিয়ের পর স্ত্রীর কাছে কিছুই লুকোতে চাইলেন না তিনি। আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ তাঁর, কী করে এত বড় বাড়ির মেয়ে, তাঁর সঙ্গে মানিয়ে নেবে ? এসব চিন্তা যখন মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন এসবের উর্ধ্বে গিয়ে যে তাঁদের সম্পর্ক প্লাবিত হতে পারে, কল্পনাও করতে পারেননি অপু। ছবিতে ১৩ বছরের শর্মিলা ঠাকুরকে বিয়ে করে, কলকাতার বাড়িতে নিয়ে এলেন বছর চব্বিশের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 

'অনুশোচনা' 

ভোরবেলা দোতালার ছাদে, তখন ভেসে আসছে রেলগাড়ির হুইসেল। নিজের স্ত্রীকে ঘুঁটে-কয়লা নিয়ে উনুন ধরাতে দেখে 'অনুশোচনায়' ভুগছেন অপু। একটা কাজের লোক রাখতেই হবে। না হলে কী করে হয় ! কিন্তু সেই টাকা যোগাবার জন্য যে অপুকে আরও বেশি টিউশনি বাড়িতে দিতে হবে। তাহলে বউকে সময় কখন দেবে সে ? ঠিক এই প্রশ্নটা করেই অপুর হৃদয় জিতে নিয়েছিল স্ত্রী। পারলে অপু আরও টিউশনি ছাড়ুক, বাড়ুক খাটনি, সে মেনে নেবে, তবুতো কথার বলার সময় বাড়বে। সত্যজিৎ-র ফ্রেমে তখন রবিশঙ্করের সেতার পাহাড় ছুঁয়েছে। দীর্ঘদিনের বস্তাপচা কনসেপ্টের উপর পাহাড় বেয়ে নেমে এসেছে জলপ্রপাত। বউ হাতপাখা করছে বরকে, মেঝেতে বসে বর খাচ্ছে। যুগযুগ ধরে হয়ে আসা মান্ধাতা আমলের সেই দৃশ্যে এসেছে বদল। রেনেসাঁ। বর হাতপাখা করছে বউকে। বউও ভাত খাচ্ছে।

উত্তরণ

কিছুদিন পরেই ছবিতে জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা অপুর স্ত্রী। কিন্তু কিছুতেই শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীকে পাঠাতে মন চাইছে না। স্টেশনে ট্রেন হুইসেল দেয়। অপুর চোখ ভিজে আসে। এর কিছুদিন পরেই আসে দুসংবাদ। অপুর দাঁড়িয়ে আছে ছাদে। একজন এসে খবর দেয়, তাঁর স্ত্রী, পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু প্রসবের পরেই মারা গিয়েছে স্ত্রী। যন্ত্রনায়, রাগে, হিংস্রতায় খবর বয়ে আনা ব্যাক্তিটিকেই মুখ পেচিয়ে ঘুসি মারে অপু। সিনেমার এই অংশে একলহমায় পাহাড় থেকে খাদে এসে পড়ে অপুর জীবন। বাঁচার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে সে। কলকাতার ঘর ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি দেয়। পেট চালাবার জন্য চাকরি খোঁজে। হতাশায় একটা সময় পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে ভাসিয়ে দেয় পান্ডুলিপি। আর এইখানেই কি কোথাও যেনও ছুঁয়ে গেল বিভূতিভূষণের জীবন ? মিল খুঁজতে যাওয়া, হয়তো ঔদ্ধত্য হবে।

যদি যেতে চাও, এভাবেই যেয়ো-
ঠিক যেভাবে গেছ
ঠিক যেভাবে, আলগোছে, টের না পাই
দরজা আধখোলা রেখে
ফিরে আসবে ভেবে যেন কোনওদিন খিল না দিই।

'অপরাজিত'

তবুও তথ্য বলছে, তখন ১৯১৯ সাল। হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়ায় দ্বারকানাথ হাইস্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ানোর সময়, বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা, গৌরীদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু বিয়ের একবছরের মধ্য়েই মারা যান গোরীদেবী। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। ১৯২৯ সালে তাঁর লেখা উপন্যাস 'পথের পাঁচালি' এবং ১৯৩২ সালে 'অপরাজিত' প্রকাশিত হয়। জানা যায়, পথের পাঁচালি লিখতে প্রায় তিনটি বছর সময় নিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এসময় তিনি পাথুরিয়াঘাটার জমিদার বাড়িতে কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এই জমিদার বাড়ির অন্যতম অংশ ছিল বিহারের ভাগলপুর সার্কেলে। যেখানে ছিল ঘনজঙ্গল। তবুও আকাশ ঢাকা গাছ গাছালির মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো এসে পৌঁছত এক বুক আশা নিয়ে। বলতে গেলে এই সময়ের মাঝেই তাঁর লেখা 'অপরাজিত'। পাশাপাশি 'আরণ্যক'ও।

পুজো আসছে

১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তি লেখক। জন্মের পর চড়াই উতরাই কম নয়। তবুও তাঁর লেখায় , প্রেম-প্রকৃতির মাঝেই আছে বেঁচে থাকার দর্শন। শরৎ-এর ভোরে ফুঁটে ওঠা একরাশ শিউলি ফুলের স্পর্শ। যেখানে রিয়েল টাইম পিছোতে চাইছে। জড়িয়ে যাওয়া রিল, ছোটবেলার সদর দরজা হাট করে খুলে দিয়েছে। কাশফুল পেরিয়ে দুর্গার হাত ধরে এগিয়ে চলেছে অপু। হুঁইসেল বাজিয়ে ছুটে আসছে রেলগাড়ি। কোথাও কোনও কান্না নেই।  

আরও পড়ুন, স্বপ্ন ছিল 'বায়োকেমিস্ট' হওয়ার, স্কুলের চাকরি ছেড়ে বলিউড যাত্রা হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের

ঋণ: তসলিমা নাসরিন, সত্যজিৎ রায় ডকুমেন্টারি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বায়োগ্রাফি, সরকারি ওয়েবসাইট 

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Jalpaiguri News: দ্বিতীয়ায় হকার উচ্ছেদ অভিযান, 'কেন বারবার এই অত্যাচার ?', লাঠির আঘাত, আটক ব্যবসায়ী
দ্বিতীয়ায় হকার উচ্ছেদ অভিযান, 'কেন বারবার এই অত্যাচার ?', লাঠির আঘাত, আটক ব্যবসায়ী
Delhi Doctor Murder Update : ‘খুন করতে পারলে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেব’, দিল্লির ডাক্তারকে খুন করার সুপারি দিয়েছিল নার্সের স্বামী !
স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ, দিল্লির ডাক্তারকে খুন করার সুপারি দিয়েছিল নার্সের স্বামী !
New Star in Sky: রাতের আকাশে এবার নয়া নক্ষত্র, টেক্কা দেবে ধ্রুবতারাকেও
রাতের আকাশে এবার নয়া নক্ষত্র, টেক্কা দেবে ধ্রুবতারাকেও
Posthumous Reproduction: ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি দিল আদালত
ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি দিল আদালত
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

SSKM Hospital: নতুন সাফল্য পেল SSKM | এই প্রথম সরকারি হাসপাতালে IVF পদ্ধতিতে কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা | ABP Ananda LIVEJaynagar: আমরা পুলিশের অপরাধমূলক অবহেলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি', মন্তব্য প্রাক্তন SUCI বিধায়কের।RG Kar Protest: দোষী সাব্যস্ত ইন্টার্নরা হস্টেলে থাকতে পারবেন না, সিদ্ধান্ত কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে | ABP Ananda LIVERG Kar Protest: পুজোর মধ্যেই আমরণ অনশনে জুনিয়র ডাক্তাররা, প্রথম দফায় আমরণ অনশনে ৬জন জুনিয়র ডাক্তাররা | ABP Ananda LIVE

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Jalpaiguri News: দ্বিতীয়ায় হকার উচ্ছেদ অভিযান, 'কেন বারবার এই অত্যাচার ?', লাঠির আঘাত, আটক ব্যবসায়ী
দ্বিতীয়ায় হকার উচ্ছেদ অভিযান, 'কেন বারবার এই অত্যাচার ?', লাঠির আঘাত, আটক ব্যবসায়ী
Delhi Doctor Murder Update : ‘খুন করতে পারলে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেব’, দিল্লির ডাক্তারকে খুন করার সুপারি দিয়েছিল নার্সের স্বামী !
স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ, দিল্লির ডাক্তারকে খুন করার সুপারি দিয়েছিল নার্সের স্বামী !
New Star in Sky: রাতের আকাশে এবার নয়া নক্ষত্র, টেক্কা দেবে ধ্রুবতারাকেও
রাতের আকাশে এবার নয়া নক্ষত্র, টেক্কা দেবে ধ্রুবতারাকেও
Posthumous Reproduction: ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি দিল আদালত
ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি দিল আদালত
Madhabi Puri Buch: ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার্থে পক্ষপাতিত্ব? আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ, SEBI প্রধানকে তলব করল PAC
ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার্থে পক্ষপাতিত্ব? আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ, SEBI প্রধানকে তলব করল PAC
Malda News: গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে জমি, ফের নদী ভাঙন মালদায়, আতঙ্কে স্থানীয়রা
গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে জমি, ফের নদী ভাঙন মালদায়, আতঙ্কে স্থানীয়রা
Junior Doctors Protest: ঘড়ি হাতে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, কেন ঘড়ি ? কী জানালেন তাঁরা
ঘড়ি হাতে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, কেন ঘড়ি ? কী জানালেন তাঁরা
RG Kar Case : 'দুর্গাপুজো? সে তো অনেক খরচ' ! মেয়ে বলেছিল, 'সব পারব মা', ঘরভরা শূন্যতার মাঝে ডুকরে উঠলেন মা
ঠাকুরঘরে মা দুর্গার শাড়ি, এবারও বায়না হয়ে গিয়েছিল ঢাকির, এখন শুধুই ঘরভরা শূন্যতা-হাহাকার
Embed widget