Rahool Mukherjee: ফেডারেশনের কোপে পরিচালক, 'রাহুলের পাশে' টলিউডের বড় অংশ, সরব দেব-প্রসেনজিৎ-রাজ-রুদ্রনীলরা
Rahool Mukherjee Banned: প্রযোজনা সংস্থা SVF-এর এবার পুজোর ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রাহুল মুখোপাধ্যায়। ফেডারেশনের নির্দেশের পর, তিনি সেই ছবি পরিচালনা করতে পারবেন না বলে শনিবার পরিচালকে জানানো হয়।
কলকাতা: টলিপাড়া উত্তাল। ফেডারেশনকে না জানিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে শ্যুটিং সেরে আসার অভিযোগ পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের (Rahool Mukherjee Banned) বিরুদ্ধে। ৩ মাসের জন্য তাঁকে পরিচালনার কাজ করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় পরিচালকের পাশে টলিউডের (Tollywood Industry) একটা বড় অংশ। ঘটনায় মুখ খুলেছেন দেব (Dev), অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী (Aniruddha Raychowdhury), রাজ চক্রবর্তীর (Raj Chakraborty) মতো তারকা শিল্পীরা।
ফেডারেশনের কোপে রাহুল, ঠিক কী ঘটেছে?
পুজোর অনুদান নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পুলিশের সার্কুলার নিয়ে সজল ঘোষের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ঘিরে বিতর্কের পর, এবার কি ক্রমশ অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পুজোর সিনেমাও? কারণ, বিশেষ কোনও নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য হল না দেওয়া থেকে শুরু করে বিশেষ কোনও ছবি ঘুরপথে না চালাতে দেওয়ার অভিযোগ আগেই উঠেছিল, এবার, পরিচালককে 'ব্যান' করা নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়া।
বিতর্কের শুরু বাংলাদেশে শ্যুটিং করতে যাওয়া নিয়ে। গত বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের একটি OTT প্ল্যাটফর্ম 'চরকি'র একটি কাজের পরিচালনার দায়িত্ব পান পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের 'পথ হারাব বলে' উপন্যাসের অবলম্বনে ওয়েব সিরিজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের OTT সংস্থাটি। সেই সিরিজের নাম দেওয়া হয় 'লহু'। যেখানে মাওবাদী নেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করছেন সোহিনী সরকার। এছাড়াও রয়েছেন ওপার বাংলার আরিফিন শুভ। সিরিজের শ্যুটিং হওয়ার কথা ছিল এ পার বাংলাতেই। সেই সময় কলকাতায় চার দিনের শ্যুটিংও হয়। সূত্রের দাবি, সেই সময় আন্তর্জাতিক শ্যুটিংয়ের কারণ দেখিয়ে বিভিন্ন কলাকুশলীদের জন্য দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দাবি করা হয় টালিগঞ্জের কলাকুশলী ও টেকনিশিয়ানদের সংগঠন 'Federation Of Cine Technicians & Workers of Eastern India'-র তরফে। সেই মতো বাংলাদেশের OTT সংস্থার সঙ্গে কথা বলে দ্বিগুণ পারিশ্রমিকের ব্যবস্থাও করে দেন পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়। কিন্তু দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়ে কলকাতায় শ্যুটিং করতে চায়নি বাংলাদেশের সংস্থাটি।
এখান থেকেই শুরু সমস্যা। বাংলাদেশের OTT সংস্থার কাজ শেষ করতে এরপর নিজেই বাংলাদেশে যান পরিচালক। সঙ্গে শুধু ছিলেন ক্যামেরাপার্সন। অভিযোগ ফেডারেশন বা গিল্ডের কাউকে না জানিয়েই তিনি বাংলাদেশে শ্যুটিং করতে চলে যান। কিন্তু এখবর প্রকাশ্যে আসতেই, ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (ডিএইআই)-এর সভাপতি সুব্রত সেন এবং সম্পাদক সুদেষ্ণা রায় ইমেল করেন পরিচালককে।
২০ জুলাই, ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া বা DAEI-র তরফে ইমেল করে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে বলা হয়, 'এবছর এপ্রিল-মে মাসে, আপনি বাংলাদেশে একটি প্রজেক্টের জন্য ফেডারেশনের নিয়ম না মেনে শ্যুটিং করেছেন। আপনি প্রথমে তা স্বীকার করেননি। পরবর্তীতে তা প্রমাণিত হওয়ায়, ফেডারেশনে গৃহীত নিয়ম অনুযায়ী, আপনাকে তিন মাসের জন্য কর্মবিরতির নির্দেশ দেওয়া হল।'
প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফের এবার পুজোর ছবির পরিচালনার দায়িত্ব রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ওপর ছিল। ফেডারেশনের নির্দেশের পর, তিনি সেই ছবি পরিচালনা করতে পারবেন না বলে শনিবার পরিচালকে জানানো হয়। এরপর সোমবার প্রযোজনা সংস্থার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, গিল্ড এবং ফেডারেশনের নির্দেশ মেনে তাঁরা রাহুলকে নতুন ছবির পরিচালক রাখবেন না। ছবি পরিচালনা করবেন চিত্রগ্রাহক সৌমিক হালদার। বদলে সৃজনশীল প্রযোজক করা হচ্ছে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু সূত্রের খবর, তাতেও নারাজ ফেডারেশন।
রাহুলের পাশে টলিউডের বড় অংশ
এই অবস্থায়, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, 'বাংলা চলচ্চিত্রের আঙিনায় রাহুল মুখোপাধ্যায় আমার অনুজপ্রতিম। নতুন ছবি তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রথমে ছবির পরিচালক হিসেবে এবং পরে ছবির সৃজনশীল পরিচালক হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে আগামী তিন মাসের জন্যে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন চলচ্চিত্র ফেডারেশন। তার কারণ, তিনি ফেডারেশনের অনুমতি না নিয়ে বাংলাদেশে কোনও কাজ পরিচালনা করেছেন। এ বিষয়ে রাহুল পরবর্তীতে লিখিতভাবে মার্জনা চাইলেও ফেডারেশন শাস্তি দিয়েছেন রাহুলকে। আমি ফেডারেশনের তরফে রাহুলের বিরুদ্ধে এহেন পদক্ষেপের বিরুদ্ধমত প্রকাশ করি।' এবিপি আনন্দকে কমলেশ্বর বলেন, 'একটা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত তাঁরা হতেই পারেন, কিন্তু সেই নিয়ম যেন চেপে না বসে। সেক্ষেত্রে অভিব্যক্তির স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।'
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আদ্যন্ত বামপন্থী হিসাবে পরিচিত, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পোস্টটি শেয়ার করে, তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ লেখেন, 'ফেডারেশনের কিছু পদক্ষেপে টলিউডের ক্ষতি হচ্ছে। রাহুল স্পষ্ট করে বলে গেলে ভাল করত। কিন্তু তার জন্য এই জটিলতা অবাঞ্ছিত। বহু প্রযোজক, পরিচালক বিরক্ত। আজ কেউ মুখ খুলছে না। ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকছে।' এবিপি আনন্দকে কুণাল ঘোষ বলেন, 'টালিগঞ্জে একটা সাফোকেশন কাজ করছে, অনেকে বলতে চেয়েও বলতে পারছেন না, ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকছে।'
তৃণমূল নেতা ও ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের কথায়, 'কুণাল দা আমার শ্রদ্ধেয়, কুণাল দা কী পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, আমি নিশ্চয়ই ওঁর সঙ্গে কথা বলব। পুরো ঘটনাটা বোধ হয় ওঁর জানা নেই, কাল পুরোটা ব্যাখ্যা করে জানাব।'
এই পরিস্থিতিতে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সরব হয়েছেন টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ার প্রথম সারির অভিনেতা থেকে শুরু করে পরিচালক-প্রযোজকদের একটা বড় অংশ। সকলেরই একই দাবি, সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরু হোক দ্রুত। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, 'এটা ইন্ডাস্ট্রির নিজের সমস্যা। তাই ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেই এটা মেটাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হয় তত ভাল।' পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ফেসবুকে লিখেছেন, 'কাউকে ব্যান করে দেওয়া বা কারও কাজ করার অধিকারকে শক্ত হাতে দমন করা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। রাহুলের পাশে আছি।'
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ও অভিনেতা দেবের কথায়, 'এটা খুবই দঃখজনক। আমার মনে হয় কারও কোনও অধিকার নেই, কোনও শিল্পী বা টেকনিশিয়ানকে কাজ শুরুর আগে আটকে দেওয়ার। আমি এটার বিরুদ্ধে। আজকের দিনে সত্যিই কাজের অভাব। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা কাজ না করতে পেরে বাড়িতে বসে আছেন। এটা যদি রোল মডেল সেট হয়, তাহলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এবং যাঁরা ভাবছেন বাংলায় কাজ করতে আসবেন, তাঁরা এই কারণে বাইরে থেকে কেউ আসবে বলে মনে হয় না। যাঁরা এখানে রোজ কাজ করছেন তাঁদের স্টেক অনেক বেশি, যাঁরা এসি ঘরে বসে ফেডারেশন চালাচ্ছেন তাঁদের থেকে।'
পরিচালক ও তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর মন্তব্য, 'আমি ধরে নিলাম রাহুল ভুলই করেছেন, যে ও সংগঠনের নিয়ম মানেনি। তাঁকে বোঝানো যেত, তাঁকে ডেকে সতর্ক করতে পারতাম, যেন পরবর্তীতে এই ধরনের কাজ না করে। ও যদি মিথ্যাও বলে থাকে, তবুও একটা মানুষের রুটি-রুজি কেড়ে নেব? এটা একটা কঠোর সিদ্ধান্ত, কেউই আমরা সমর্থন করি না। কাল রাহুলের সঙ্গে হয়েছে পরশু আরেকজন বা আমার সঙ্গে হবে। প্রতিবাদ করি।'
বিজেপি নেতা ও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের কটাক্ষ, 'তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, তৃণমূল সাংসদ দেব, তাঁদেরও এই টলিউডি তালিবানি শাসন, যা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস চালান, ফেডারেশনের নাম করে, তাতে সিনেমার ক্ষতি হচ্ছে। কোন শিল্পী কাজ করবেন, কে করবেন না, এই ফতোয়া যেটা জারি করছেন, এভাবে চলতে পারে না।'
আরও পড়ুন: Mahanayak Award: মহানায়কের প্রয়াণ দিবসে 'বিশেষ চলচ্চিত্র সম্মান' পুরস্কার অম্বরীশ-শুভাশিস-রুক্মিণীকে
ফেডারেশনের মাথায় রয়েছেন তৃণমূল নেতা স্বরূপ বিশ্বাস। আর তাদের সংগঠনের কাজ নিয়েই সরব হচ্ছেন তৃণমূল নেতা বিধায়ক থেকে শুরু করে অরিন্দম শীলের মতো পরিচালকও, যাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে একাধিকবার দেখা গেছে। সরব হয়েছেন, অভিনেতা ঋদ্ধি সেন এই ঘটনাকে 'মাফিয়ারাজ' বলে কটাক্ষ করেছেন। রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। এই পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধান করতে বৃহস্পতিবার ডিরেক্টরস গিল্ডের একটি বৈঠক রয়েছে। এখন সবপক্ষই তাকিয়ে সেই বৈঠকের দিকে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।