Film Review: দুর্বল চিত্রনাট্য, ছক ভাঙা সম্পর্কের গল্প বলেও 'গেহরাইয়াঁ'-র সম্বল কেবল দীপিকাই
সম্পর্কের কত পরত থাকে। সম্পর্কের আয়না যা দেখায়, সেই দেখার বাইরেও কত কী থাকে। মনের আবেগ, উচ্ছ্বাস, ভালবাসা, রাগ...সবই কখনও শান্ত, কখনও আবার চঞ্চল।
পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: সম্পর্কের কত পরত থাকে। সম্পর্কের আয়না যা দেখায়, সেই দেখার বাইরেও কত কী থাকে। মনের আবেগ, উচ্ছ্বাস, ভালবাসা, রাগ...সবই কখনও শান্ত, কখনও আবার চঞ্চল। কিন্তু কে জানে কোন রসায়নে মনের গভীরে ঢেউ তোলপাড় করে সম্পর্কের সব অঙ্ক ভেঙে নতুন পথে হাঁটতে চায়। কিন্তু স্বার্থের নিরুপায় নোঙর যদি বালিতে আটকায়, তাহলে জলোচ্ছাসে জাহাজ তো ডুববেই। ভাগ্য প্রসন্ন থাকতে বেঁচে যাবে কোনও নাবিক..ভেলায় চেপেই তখন পেরোতে হবে সমুদ্র। এমনই এক সম্পর্কের উথালপাথাল কাহিনি গহেরাইয়াঁ। আমাজন প্রাইম ভিডিওয় মুক্তি পেল দীপিকা পাডুকোন (Deepika Padukone), সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী (Siddhant Chaturbedi), অনন্যা পান্ডে (Anannya Pandey), নাসিরুদ্দিন শাহ (Nasiriddhin Shah), রজত কপূর (Rajat kapoor), ধৈর্য কারওয়া অভিনীত শকুন বাত্রার ছবি ‘গহেরাইয়াঁ (Gehraiyaan)।’
অনুপম রায়ের লেখা সেই গানটা মনে আছে? ‘গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও। এই বুঝি তল পেলে ফের হারালে...প্রয়োজনে ডুবে যাও।’ গহেরাইয়াঁ দেখতে দেখতে এই গানটা মনে পড়তেই পারে। সম্পর্কের তল খুঁজতে চেয়েছে এই ছবির কাহিনি। সম্পর্কের দমবন্ধ করা একঘেয়ে রোজনামচা থেকে মুক্তি চেয়ে স্বস্তির অক্সিজেন খুঁজেছে। ছবিতে দেখা যায়, দীপিকা আর অনন্যা দুই তুতো বোন। তবে আর্থিক ভাবে তাঁদের মাঝে বড় একটা ফারাক রয়েছে। দীপিকার চরিত্রের নাম আলিশা খন্না। অনন্যার চরিত্রের নাম টিয়া খন্না। আলিশার বাবা বিনোদ খন্নার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। সিদ্ধান্তের চরিত্রের নাম জেন ওবেরয়। করণ আরোরার ভূমিকায় রয়েছেন ধৈর্য কারওয়া। জেন টিয়ার প্রেমিক। এদিকে আলিশা আর করণও লিভ ইন রিলেশনশিপে রয়েছে। অনেকদিন বাদে আলিবাগে একসঙ্গে ছুটি কাটাতে যায় চারজনে। সেখানেই গুলিয়ে যায় চেনা সম্পর্কের ছবিটা। আলিশার প্রেমে পড়ে জেন। জেনের প্রেমে পড়ে আলিশাও। আর এই ভালবাসা থেকেই মন আর মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা স্বার্থের নিষ্ঠুর চেহারাটা বেরিয়ে পড়ে। ভালবাসা কী সত্যিই গভীর হয়? নাকি সেটা মিথ? মানুষ কি নিজেকেই সব থেকে বেশি ভালবাসে? এমন নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে।
আরও পড়ুন: Bappi Lahiri Demise: আপনার সুরে গান গাইতে পেরেছি, এটা আমার সৌভাগ্য: শ্রেয়া ঘোষাল
ছবির কাহিনি বুনতে গিয়ে আলিশা আর জেনের প্রেমকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড় করাতে পারেননি শকুন বাত্রা। উত্তাল সমুদ্রের মতোই তাঁদের সম্পর্কের গ্রাফের ওঠানামা। চারিদিকে সম্পর্ক বদলাচ্ছে, পরিবারের গোপন, চাপা কথাগুলো উঠে এসে এলোমেলো করে দিতে চাইছে সবকিছু। কিন্তু আগে থেকে স্থির করে রাখা সমাপ্তির জন্যই যেন ছকে পড়ে যাচ্ছে সম্পর্কগুলো। মান, অভিমান, ভালবাসা, স্নেহ...সব কিছু বড্ড যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে। গভীরে যেতে গিয়ে এই কাহিনি সম্পর্কের কোমলতা হারিয়েছে। আলিশার মায়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে। মেয়ের চরিত্রেও ঠিক যেন মায়েরই ছায়া পড়েছে। এটা কি একেবারেই ক্লিশে দৃষ্টিভঙ্গী নয়? নাসিরুদ্দিন শাহের সংলাপে ‘ও আচ্ছি মা বনকে রহে গয়ি, ম্যায় বুড়া বাপ বনকে রহে গয়া’ আপাত অর্থে উদার শোনালেনও এরই মধ্যে প্রচ্ছন্ন পিতৃতান্ত্রিক ভাবনাই প্রকট হয়। ২০২২-এ দাঁড়িয়ে ভাবনার এই সংকীর্নতা কাম্য নয়।
দীপিকা এবং নাসিরুদ্দিন শাহের অভিনয় অনবদ্য। ছবিটির সিনেম্যাটোগ্রাফার কৌশল শাহের কাজও নজরকাড়া। ছবির মেকিংয়ে শকুন বাত্রার কুশলতার ছাপ থাকলেও চিত্রনাট্যের দুর্বলতায় গহেরাইয়াঁ মনের গভীরে যেতে পারে না। ভাসতেই থাকে শুধু।