'Mai' Review: দুর্ঘটনা নাকি হত্যা? সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের প্রতিশোধের গল্প 'মাই'
সত্য উদঘাটনের জন্য রহস্যের পিছু ধাওয়া করছেন এক মাঝবয়সী মহিলা। তিনি সদ্য তাঁর তরুণী কন্যাকে নিজের চোখের সামনে গাড়ির ধাক্কায় মারা যেতে দেখেছেন। কিন্তু সেটা কি সত্যিই দুর্ঘটনা ছিল? নাকি পরিকল্পিত হত্যা?
পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: এক মায়ের গল্প। সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের প্রতিশোধের গল্প। নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘মাই’ (Mai)। সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন সাক্ষী তনভর (Sakshi Tanwar), বিবেক মুশরান, রাইমা সেন (Raima Sen), ওয়ামিকা গাব্বি, অনন্ত বিধাত শর্মা, বৈভব রাজ গুপ্ত, অঙ্কুর রতন, সন্দীপা ধর, মিখাইল গান্ধী। মাই ৬ পর্বের সিরিজ। কাহিনির গোড়া থেকেই দানা বেঁধেছে একটা রহস্য। সত্য উদঘাটনের জন্য সেই রহস্যের পিছু ধাওয়া করেছেন এক মাঝবয়সী মহিলা। তিনি সদ্য তাঁর তরুণী কন্যাকে নিজের চোখের সামনে গাড়ির ধাক্কায় মারা যেতে দেখেছেন। কিন্তু সেটা কি সত্যিই দুর্ঘটনা ছিল? নাকি পরিকল্পিত হত্যা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই অপরাধ জগতের অন্ধকারে ঢুকতে হয়েছে তাঁকে।
'মাই' সিরিজের প্রেক্ষাপট-
সিরিজটি কাহিনি শুরু হচ্ছে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রেক্ষাপটে। শীল চৌধুরী, যশ চৌধুরী আর তাঁদের মেয়ে সুপ্রিয়া চৌধুরী। সুপ্রিয়া কানে শুনতে পায়, কিন্তু কথা বলতে পারে না। সে ডাক্তারি পড়েছে। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজেই সে স্ট্যান্ডআপ কমেডিও করে। শীল আর যশের একটি ছেলেও আছে, অর্চিত। কিন্তু যশের দাদা ডক্টর চৌধুরী আর তাঁর স্ত্রীকেই সে নিজের বাবা-মা বলে জানে। শীল আর যশকে সে কাকু-কাকীমা বলেই সম্বোধন করে। সুপ্রিয়ার পড়াশোনার খরচও যোগান বিত্তশালী ডক্টর চৌধুরী। যশের একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। পাশাপাশি সে নিজের শখেই নানা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সারাইয়ের কাজ করে। এই নিয়ে বাড়িতে অশান্তিও হয়। কিন্তু নিজের শখকে বিসর্জন দিতে পারে না যশ। একদিন অর্চিতের জন্মদিনের পার্টির প্রস্তুতির মাঝে বিপর্যয় ঘটে যায় যশ আর শীলের জীবনে। শীলের চোখের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে সুপ্রিয়া। মাকে কিছু একটা বলার ছিল তাঁর। কিন্তু সেই কথা বুঝিয়ে বলার আগেই মারা যায় সুপ্রিয়া। ট্রাক ড্রাইভার গ্রেফতার হয়। আদালতে তাঁকে সনাক্তও করে শীল। পুলিশের ভ্যানে ওঠার আগে আদালতের বারান্দায় দাঁড়ানো শীলের উদ্দেশ্যে সেই ড্রাইভার বলে যায়, সে এটা করতে চায়নি। সে ক্ষমাপ্রার্থী। সেই ড্রাইভারের এই কথা থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধে শীলের মনে। তাহলে কি সুপ্রিয়ার মৃত্যু নিছক অ্যাক্সিডেন্ট নয়? পুলিশ স্টেশনের চক্কর কেটে সেই ড্রাইভারের বাড়ির হদিশ জোগাড় করে শীল। তারপর দেখে এক নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে সেই ড্রাইভারের ছেলে। নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বোর্ড মেম্বারদের পরিচয় জোগাড় করে সে। আর তার মধ্যেই পেয়ে যায় এক পরিচিত মুখ। বৃদ্ধাশ্রম গীতা ভবনে কাজ করে শীল। গীতা প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবে কাজ করত সুপ্রিয়াও। আর এই গীতা ভবনেই থাকেন প্রতিপত্তিশালী ব্যবসায়ী জওহর ব্যাসের বৃদ্ধা মা। সুপ্রিয়া জওহরকে ইঞ্জেকশন দিয়ে কব্জা করে ফেলে। জানতে চায় সে কেন ওই ট্রাক ড্রাইভারের ছেলেকে স্কুলে ভর্তির বন্দোবস্ত করে দিয়েছে? সুপ্রিয়ার বিষয়ে কিছু বলে ওঠার আগেই মারা যায় জওহর। এরপর জওহরের দেহ লোপাট করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে জওহরের অধীনস্ত প্রশান্ত আর শঙ্করের হাতে ধরা পড়ে যায় শীল। কিন্তু শীলের এই কীর্তির কথা গোপন করে যায় প্রশান্ত আর শঙ্কর। এমনভাবে তাঁরা ঘটনাটিকে সাজায়, যাতে সবারই মনে হয় এসটিএফর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে জওহরের। একটা অপরাধ চক্রের ঘুঁটিগুলো নড়ে ওঠে। কাহিনি এগোতে থাকে। সুপ্রিয়ার সঙ্গে এসপি ফারুখ সিদ্দিকির প্রেমের কথা জানতে পারে শীল। ফারুখ নিজেও শীলের কাছে তাঁদের সম্পর্ক আর বিচ্ছেদের গোপন করে না। এদিকে জওহরের কাছে থাকা ক্রিপ্টো-কির সন্ধানে তোলপাড় পড়ে যায় গ্যাংয়ের মধ্যে। কাহিনিতে ঢুকে পড়ে জহওহরের ভাই মোহনদাসও। যাঁকে দেখতে জওহরের মতোই। জওহরের সঙ্গীনী নীলম দলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেয়। কিন্তু শীলের তৈরি করা ফাঁদে পড়ে গ্যাংয়ের একের পর পর এক ঘুঁটি পড়তে থাকে। এসটিএফ নীলমকে গ্রেফতার করলেও তাঁকে বাঁচাতে পারে না। দুরন্ত বুদ্ধি খাটিয়ে এসটিএফের অফিসের মধ্যেই নীলমকে নিকেশ করে ফেলে সে। এদিকে অপরাধচক্রের মধ্যমণি, বিষ্ণু গোয়েলের আস্থাভাজন হয়ে ওঠে প্রশান্ত। গোয়েল ক্ষমতার চাবি তুলে দেয় প্রশান্তের হাতে। কিন্তু গল্প এখানেই শেষ হয় না। দ্বিতীয় সিজনের ইঙ্গিত রেখেই মাই-সিজন ওয়ানের কাহিনি গুটিয়েছেন পরিচালক অনশাই লাল এবং অতুল মোঙ্গিয়া।
আরও পড়ুন - Yash: এই বলিউড নায়িকার বিপরীতে কাজের ইচ্ছাপ্রকাশ 'কেজিএফ' তারকা যশের
সিরিজের সবথেকে বড় সম্পদ সাক্ষী তনভরের অভিনয়-
এই সিরিজে সবচেয়ে বড় সম্পদ শীল চৌধুরীর চরিত্রে সাক্ষী তনভরের অভিনয়। এক্কেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের অভিনয়ের ধার বজায় রেখেছেন সাক্ষী। অসামান্য দক্ষতায় এক মায়ের যন্ত্রণা, মনের দহনকে বাঙ্ময় করে তুলেছেন। তাঁর অভিনয়ে নীরব মুহূর্তগুলোও কী অবলীলায় সরব হয়ে উঠেছে। সাক্ষীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যশ চৌধুরীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিবেক মুশরান। সুপ্রিয়ার ভূমিকায় ওয়ামিকা গাব্বি, প্রশান্তের চরিত্রে অনন্ত বিধাত শর্মা, নীলমের চরিত্রে রাইমা সেন এবং জওহর আর মোহনদাসের চরিত্রে প্রশান্ত নারায়ণের অভিনয়ও তারিফ যোগ্য। তবে সিরিজটির কাহিনিতে বেশ কিছু অংশ নাটকীয়তার ভারে বাস্তব বিচ্ছিন্ন হয়েছে। একের পর এক অপরাধ করেও শীলের চরিত্রটি যেভাবে সব বাধা পেরিয়ে যাচ্ছে, তা মেনে নিতে একটু কষ্ট হয় বৈকি! কিন্তু এহেন দৃশ্যগুলোর সব দোষ ঢাকা পড়ে যায় সাক্ষীর অভিনয়ে। গীতা ভবনের অন্দরমহলের কার্যকলাপ কিছুটা গোলক ধাঁধার মত। কীভাবে কী ঘটছে, কেনই বা ঘটছে তা অঙ্কের হিসেব মেনে মেলানো কঠিন। অবিশ্বাস্য ঠেকে যখন এসটিএফের আস্তানার বাইরে ট্রাকে করে কয়েকজন এসে ধুন্ধুমার গুলি চালিয়ে নীলমকে খুন করার পরিকল্পনা করে। গোয়েলের টাকার ভাণ্ডার দেখে হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় মানি হাইস্টের ব্যাঙ্ক অফ স্পেনের ভাঁড়ার। রঘুর মত একজন বলশালী লোককে শীল যেভাবে খুন করে ফেলে এবং তাঁর অস্তিত্বই গায়েব হয়ে যায়...তা সত্যিই এই সিরিজের দুর্বলতা। কিন্তু এই সবকিছু পেরিয়েও একজন মহিলা যে ভাবে তাঁর মেয়ের খুনের বদলা নিতে বদ্ধ পরিকর থাকেন, সেই প্রতিশোধ স্পৃহাই যেন এই সিরিজের চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে। শীলের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য এখন অপেক্ষা তো করতেই হবে।