Yeh Kaali Kaali Ankhein: প্রেম আর প্রতিহিংসার টানাপোড়েনে 'ইয়ে কালি কালি আঁখে'-র প্রাণভোমরা শ্বেতা, সৌরভ, কল্পের অভিনয়
Yeh Kaali Kaali Ankhein: তাঁর চোখ প্রেম ডেকেছিল। ডেকেছিল সমস্ত পুরুষসত্ত্বার শর্তহীন সমর্পণ। সেই চোখেই প্রতিশ্রুতি ছিল কলরব থেকে দূরে দু’জনের এক নিভৃত জগত গড়ার।
পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: তাঁর চোখ প্রেম ডেকেছিল। ডেকেছিল সমস্ত পুরুষসত্ত্বার শর্তহীন সমর্পণ। সেই চোখেই প্রতিশ্রুতি ছিল কলরব থেকে দূরে দু’জনের এক নিভৃত জগত গড়ার।
যুগে যুগে এই চোখের সম্মোহনে নিঃস্ব হয়েছে কত পুরুষ। ওয়ার্ডসওয়ার্থের লুসিই হোক বা জীবনানন্দের বনলতা সেন...চোখ বন্ধ করলেই সেই চোখ জেগে ওঠে কল্পনায়। বাজিগরে শাহরুখের লিপে এমনই এক কাজল কালো চোখ নিয়ে লেখা গান প্রেমের অন্য পরিভাষা হয়ে মনে রয়ে গিয়েছে চিরদিনের জন্য। আর সেই গানই ওয়েব সিরিজের শিরোনাম হয়ে মুক্তি পেল নেটফ্লিক্সে। তাহির রাজ ভাসিন, শ্বেতা ত্রিপাঠী, আঁচল সিং, সৌরভ শুক্লা অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’ (Yeh Kaali Kaali Ankhein Season 1)।
নিছক প্রেমের গল্প নয়। শুধু প্রতিহিংসার গল্পও নয়। এক অদ্ভুত দোলাচলে এগিয়েছে এই সিরিজের কাহিনি। একটি প্রেম আছে। সেই প্রেম আর পাঁচটা প্রেমের মতই স্বপ্নের এক দুনিয়ায় ছোট্ট একটা আস্তানা বানাতে চায়। উল্টোদিকে আরও একটা প্রেম আছে। একতরফা...প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রেম। আর এই দুই প্রেমের মাঝে যাতাকলে পিষছে এক তরুণের জীবন। সিরিজের কাহিনি শুরু হচ্ছে বিক্রান্তকে ঘিরে। এক রুক্ষ পার্বত্য অঞ্চলে একলা ঘরে লুকিয়ে একাধিক বন্দুকবাজদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে সে। আর কাহিনি ফিরে যাচ্ছে ফ্ল্যাশব্যাকে। উত্তরপ্রদেশের ওংকারা এলাকার বাসিন্দা বিক্রান্ত। সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে। বিক্রান্ত ভালবাসে তাঁরই সহপাঠী সাক্ষীকে। একটা চাকরি জুটিয়ে সাক্ষীকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে বিক্রান্ত। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবে পার্থক্য তো থাকেই। বিক্রান্তের স্বপ্নও প্রবল এক ঝড়ে তছনছ হয়ে যায়। ওংকারার দোর্দন্তপ্রতাপ রাজনৈতিক নেতা আখিরাজের মেয়ে পূর্বা তাঁর সমস্ত প্রভাব খাটিয়ে বিক্রান্তকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চায়। বিক্রান্ত নিজের অনিচ্ছের কথা জানালেও কোনও লাভ হয় না। পূর্বার খুশির জন্য আখিরাজ পথের যে কোনও বাধা মুছে ফেলতে পারেন। বিক্রান্ত বাধ্য হয় পূর্বাকে বিয়ে করতে। কিন্তু এরই সঙ্গে বিক্রান্ত মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকে। সাক্ষীকে হারাতে রাজি নয় সে। এখান থেকেই ঘটনার ঘনঘটায় এগিয়ে চলে 'ইয়ে কালি কালি আঁখে'-র কাহিনি।
বিক্রান্তের চরিত্রে এই সিরিজে অভিনয় করেছেন তাহির রাজ ভাসিন (Tahir Bhasin)। কাহিনিতে বিক্রান্তের চরিত্রের বেশ কিছু পরত রয়েছে। কিন্তু তাহিরের অভিনয়ে বিক্রান্ত যেন একেবারেই একরঙা। আলাদা করে তাঁর চরিত্রে অন্য কোনও রঙের প্রলেপ চড়াতে পারেননি তাহির। সাক্ষীর চরিত্রে শ্বেতা ত্রিপাঠীর (Sweta Tripathi) অভিনয় সপ্রতিভ। বলা যায় শ্বেতার ঝকঝকে অভিনয়ের উল্টোদিকে কিছুটা নিষ্প্রভই লেগেছে তাহিরকে। আখিরাজের চরিত্রে সৌরভ শুক্ল (Souerav Sukla) অনবদ্য। দুর্দান্ত সময়ে সৌরভ শুক্লার অভিনয় মুগ্ধ করে রাখে। পূর্বার চরিত্রে আঁচল সিং (Anchal Sigh) তেমন নজর কাড়তে পারেননি। বিক্রান্তের বন্ধু গোল্ডেন চরিত্রে কল্প শাহর (Kalp Shah) অভিনয়ের প্রশংসা করতেই হয়। বিক্রান্তের বাবার চরিত্রে বিজেন্দ্র কালার (Vijendra Kala) অভিনয় বরাবরের মতই আলাদা একটা মাত্রায় বাঁধা রয়েছে। বিক্রান্তের মায়ের চরিত্রে সুনীতা রাজওয়ারের অভিনয়ও নজর কাড়বে। পূর্বার ভাইয়ের চরিত্রে সুরিয়া শর্মার অভিনয় বেশ ভাল। সিরিজটির প্রায় শেষ প্রান্তে গিয়ে হঠাৎ দর্শকেরা আবিষ্কার করবেন অরুনোদয় সিংকে। তবে অরুনোদয়ের কাহিনি দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে সিরিজটির দ্বিতীয় সিজনের জন্য।
আরও পড়ুন: 'ইংরাজি বইয়ের দাপটের মধ্যে আমার ছোটবেলাকে খুঁজব'
পরিচালক সিদ্ধার্থ সেনগুপ্তর এই সিরিজটিতে মূল মশলা দু’টো। প্রেম আর প্রতিহিংসা। কাহিনি যে ভাবে শুরু হয়, তাতে প্রত্যাশার গ্রাফটা উর্দ্ধমুখী হয় ক্রমশ। বিক্রান্ত আর সাক্ষীর প্রেমপর্ব মসৃণ গতিতেই এগোচ্ছিল। তারপর হঠাৎ মেঘ ঘনাল। আকাশ কালো করে প্রবল কালবৈশাখীর মত বিক্রান্ত আর সাক্ষীর জীবনে হঠাৎ এসে পড়ল পূর্বা। হ্যাঁ। প্রেম এভাবেও আসতে পারে। স্কুলের বিক্রান্তকে বহুবছর পর প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলে পূর্বা। শুধু তাই নয়, ঠিক কত বছর, কত মাস, কত দিন পর দেখা হল...তাও বলে যায় গড়গড় করে। কিন্তু এই ভালবাসাকে বাস্তবায়িত করতে পূর্বা যে রাস্তায় হাঁটে, তা কল্পনার রঙে অতিরঞ্জিত। আর হ্যাঁ, বিপজ্জনকভাবে পিচ্ছিলও বটে। অসাবধানতায় এই রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেয়েছে কাহিনি। আখিরাজের ক্ষমতার পরিধি মাপার চেষ্টা করলে একটু বিষম খেতে হবে। খেলাচ্ছলে আখিরাজ যা করে বসেন তা করার কথা কালীনভাইয়াও যেন কস্মিনকালে ভাববেন না।
ওখানেই গলদ। ভেবে লিখলে আখিরাজের ক্ষমতার উড়ান এত উঁচু হত না। শেষ পর্বে গিয়ে কাহিনিতে নতুন মোচড় এনে পরবর্তী সিজনের মঞ্চ বেঁধে রেখেছেন পরিচালক। বোঝাই যাচ্ছে, পরবর্তী সিজনে অ্যাকশন ধুন্ধুমারই হবে। নকল কান্নার যে অভ্যাস বিক্রান্ত করে রেখেছে, তা কাজে আসবে কিনা জানতে অপেক্ষা করতেই হবে দ্বিতীয় সিজনের জন্য।