Smaranjit Chakraborty Exclusive Interview: বান্ধবীর সঙ্গে লেকের ধার, চাইনিজ, নববর্ষে ধূপ কিনে বাড়ি ফিরতেন স্মরণজিৎ
একটা দুটো নয়, নববর্ষের স্মৃতির তিনটে অধ্যায় রয়েছে তাঁর। আর সেই তিন অধ্যায়ের মিঠে কড়া স্মৃতি প্রত্যেকবছর এসে ভিড় করে। তার কোনোটায় লেগে থাকে ছোটবেলার লেখা ছোট্ট কবিতা, কোনোটায় হালখাতার লাড্ডুর গন্ধ। মনে পড়ে যায়, মা বলতেন, নববর্ষে একটা নতুন জামা পড়তেই হয়। সেই কথা আজও মেনে চলেন স্মরণজিৎ চক্রবর্তী।
কলকাতা: একটা দুটো নয়, নববর্ষের স্মৃতির তিনটে অধ্যায় রয়েছে তাঁর। আর সেই তিন অধ্যায়ের মিঠে কড়া স্মৃতি প্রত্যেকবছর এসে ভিড় করে। তার কোনওটায় লেগে থাকে ছোটবেলার লেখা ছোট্ট কবিতা, কোনওটায় হালখাতার লাড্ডুর গন্ধ। মনে পড়ে যায়, মা বলতেন, নববর্ষে একটা নতুন জামা পড়তেই হয়। সেই কথা আজও মেনে চলেন স্মরণজিৎ চক্রবর্তী।
ছোটবেলার ঠিকানা ছিল বাটানগরের ভাড়া বাড়ি। সেখানেই থাকতেন স্মরণজিৎ। সঙ্গী তুতো ভাই-বোন। বাড়ির মালিকের মেয়ে বয়সে কিছুটা বড় ছিলেন। স্মরণজিৎ বলছেন, 'মনে আছে, আমাদের জন্য প্রতিবছর নতুন নতুন কার্ড বানিয়ে দিত সোমাদি। একেকটা কার্ডে একেক রকম আঁকা। আমরা নববর্ষের আগে দেখতাম, সোমাদি কার্ড বানাচ্ছে। অপেক্ষা করে থাকতাম, কোন আঁকাটা কে পাবে। আমি বাবাকে বলতাম কলকাতা থেকে ছোট ছোট কার্ড এনে দিতে। সেই কার্ডেই আমি প্রথম কবিতা লিখি। ছোটবেলার সেই বোকা বোকা দু'চার লাইন কবিতা কার্ডের ভিতর লিখে সবাইকে দিতাম।' নববর্ষের একমাস পরেই জন্মদিন। বাড়ির একমাত্র ছেলের নতুন বছরে প্রাপ্তি হত ভালোই। লেখক বললেন, 'প্রায় প্রতিবারই দিদা-দাদু আমাদের বাড়িতে চলে আসতেন। সঙ্গে নিয়ে আসতেন অনেক উপহার আর জামা। মাও আমায় জামা দিতেন।'
পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত নতুন বছরে। ক্লাব অরুণাচল সংঘ থেকে প্রতিবছর আয়োজন হত নাটক, গান ইত্যাদির। সেই স্মৃতি মনে করে লেখক বললেন, 'একবার খুব বৃষ্টি হল। খোলা মঞ্চে নাটক হচ্ছিল, বন্ধ করে দিতে হল। এছাড়াও আমাদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সেসময় এক দাদুর দোকানে যাওয়া। হালখাতার লাড্ডু জমা হত অনেক। আমি কোনওদিনই মিষ্টি খেতে খুব একটা ভালোবাসি না, কিন্তু কতগুলো মিষ্টি পেয়েছি সেই হিসেব করতাম। কাকাদের সঙ্গে বিকেলে গঙ্গার ধারে গিয়ে বসে থাকতাম মাঝে মধ্যে। সেটাও একটা আলাদা ভালোলাগা।'
এরপরের স্মৃতি কৈশোরের-যৌবনের। এরপরের স্মৃতির ঠিকানা দক্ষিণ কলকাতা। লেখক বলছেন, 'তখন নববর্ষে বেশ কয়েকবছর একটা নতুন উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সকালবেলা বাড়ির সবাই বেরিয়ে পড়তাম। ট্রামে করে ভিক্টোরিয়া। অফিসে পুজো শুরু হতে দায়িত্ব বাড়তে থাকে। সেটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। নববর্ষের দুপুরে বাড়িতে হরেক রকম রান্না হত। মা খুব ভালো রান্না করতেন। সেটা খেয়ে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম আমি। বয়স অল্প, দুপুরের রোদ গায়ে লাগত না। তারপর বান্ধবীকে নিয়ে রবীন্দ্র সরোরব... সন্ধেবেলা চাইনিজ। ফেরার সময় গড়িয়াহাটের মোড় থেকে ধূপ কিনতাম। মনটা ভারি ভালো হয়ে থাকত।'
শেষভাগের স্মৃতিতে বর্তমান। অফিসের পুজো সামলে এখনও বেরিয়ে পড়েন লেখক। গন্তব্য কলেজস্ট্রিট। আনন্দ পাবলিশার্সের সমাবেশে যান। বললেন, 'কত নামি দামি লেখক আসেন। ছোটবেলা থেকে যাঁদের লেখা পড়ে বড় হয়েছি। ওখানেই আমার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে দেখা। ওখানে গিয়েও হয়ত স্বভাবদোষে চুপ করে থাকি। কিন্তু নতুন বছরে ওটাও একটা প্রাপ্তি।'
নববর্ষের স্মৃতির ঝুলি মধুমাখা। তবু তার মধ্যেও বিশেষ ছোটবেলার ছোট ছোট আনন্দগুলো। মায়ের কথা মেনে প্রত্যেকবছর বাড়িতে সবার জন্য নতুন জামা আসে। যাঁদের নতুন জামা কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁদেরও কিনে দিতে চেষ্টা করেন। স্মরণজিৎ বললেন, 'নববর্ষের সন্ধেবেলা অনেকসময় বন্ধুরা আসে। আড্ডা মেরে সময় কেটে যায় ঘরে বসেই। অথবা সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। সাদার্ন অ্যাভিনিউ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে.....এই সন্ধেটায় একটু বৃষ্টি আসলে বড় ভালো লাগে জানেন..'