ABP Exclusive: কী দেখে বুঝবেন সাধারণ জ্বর নয়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত আপনার শিশু? জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা
নিউমোনিয়াকে সিজন চেঞ্জের সাধারণ জ্বর ভেবে ভুল করবেন না, কীভাবে উপসর্গ চিনবেন? এবিপি লাইভকে বিস্তারিত জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌমিত্র দত্ত এবং ডাঃ অপূর্ব ঘোষ
কলকাতা: বছর চারেক বয়স সোহমের। কয়েকদিন ধরেই ধুম জ্বর সঙ্গে সর্দি-কাশি। বাবা-মা অনুমান করলেন নির্ঘাত ভাইরাল ফিভার। সিজন চেঞ্জ হচ্ছে, ঠান্ডাটাও পড়ছে। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হল বটে তবে ফল হল না মোটেই। দিন দুয়েকের মধ্যেই জ্বর বাড়ল, সর্দি-কাশির সঙ্গে জুড়ল প্রবল শ্বাসকষ্ট, অদ্ভুত আওয়াজ করে শ্বাস নিচ্ছে সোহম। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। নিমেষে নেতিয়ে পড়ল একরত্তি সোহম।
মারাত্মক ভুলটা হল এখানেই। উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলো দেখে যখন অভিভাবকরা ভাইরাল ফিভার ভেবে ভুল করছেন, তখনই হয়ত খুদের শরীরে বাসা বেঁধেছে স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি। চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুর সামান্য জ্বর-সর্দি কাশিকে গুরুত্ব দিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অপূর্ব ঘোষ জানাচ্ছেন, রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়ে যাচ্ছে। তথ্য বলছে, ভারতে ফি বছর পাঁচের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌমিত্র দত্ত জানাচ্ছেন, নিউমোনিয়া সাধারণত ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়াঘটিত সংক্রমণ। তবে ছত্রাকঘটিতও (Fungal) হতে পারে। মূলত স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি ব্যাকটেরিয়া এই রোগের মূল কারণ। আক্রান্তের হাঁচি-কাশি মারফত জীবাণু বাতাসে মেশে। তারপরে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শিশুর শ্বাসনালি ও ফুসফুসে গিয়ে বাসা বাঁধে। আর সেখানেই বংশবৃদ্ধি করতে করতে ফুসফুসের বায়ুথলিগুলোয় সংক্রমণ ঘটায়।
এ ছাড়াও ভাইরাল নিউমোনিয়ার মধ্যে রয়েছে RSV, অ্যাডিনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, কোভিড ভাইরাস, রাইনো ভাইরাস। এগুলির সংক্রমণেও নিউমোনিয়া হতে পারে। অন্যদিকে, ব্যাকটেরিয়াঘটিত নিউমোনিয়ার মধ্যে রয়েছে স্ট্যাফাইলোকক্কাস, এইচ ইনফ্লুয়েঞ্জা। এ ছাড়াও ফাঙ্গাল নিউমোনিয়া মাইক্রোপ্লাজমা, ক্যান্ডিডা থেকে হতে পারে। তবে এগুলো সকলের হয় না। ডাঃ সৌমিত্র দত্ত বলছেন, 'এগুলি সাধারণত যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কম যেমন, প্রি ম্যাচিওর বেবি, ক্রনিক লাং ডিজিজ রয়েছে এমন ব্যক্তি এতে আক্রান্ত হন। ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি থাকলেও ফাঙ্গাল নিউমোনিয়া সংক্রমণ হতে পারে।'
বাড়বাড়ন্ত কোন সময়ে
মরসুমের যেকোনও সময়েই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। তবে বর্ষা বা শীতের শহরে নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ে।
ঝুঁকিতে কোন বয়স
যে কোনও বয়সই নিউমোনিয়ার কবলে পড়তে পারে। তবে সদ্যোজাত, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬০-এর ঊর্ধ্বে বয়সীরা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সাধারণ জ্বর এবং নিউমোনিয়ার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
এ ক্ষেত্রে শিশুর জ্বর, সর্দি-কাশি, খিদে কমে যাওয়া, বমি বা বমি বমি ভাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, শ্বাসপ্রশ্বাসের সময়ে অদ্ভুত আওয়াজ, ঝিমিয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে এর সঙ্গে বুকে ব্যথাও থাকতে পারে। জোরে শ্বাস টানলে বুকে ব্যথা করে। সর্দিতে রক্ত থাকতে পারে, অনেক সময় কালচে লাল ধরনের রক্ত বের হয়। এ ছাড়াও মাথার যন্ত্রণা, ডায়েরিয়া, অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়া, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার মতো উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
সাধারণ জ্বরের সঙ্গে পার্থক্য কোথায়? শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র দত্ত স্পষ্ট করেছেন, 'সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি সময়ের সঙ্গে ওষুধপত্র খেতে খেতে কমতে থাকে। এ ক্ষেত্রে জ্বর তো কমেই না, উল্টে তা উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে ফিরে আসে এবং বাড়তে থাকে। শ্বাসকষ্ট ও কাশির সমস্যাও বাড়ে।' যে সমস্ত বাচ্চারা এখনও কথা বলতে শেখেনি অথবা অল্প কথা বলতে পারলেও নিজের সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না, তাঁদের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় অবশ্যই নজরে রাখা উচিত।
কীভাবে চিকিৎসা
চিকিৎসকরা বারবার সাবধান করে জানিয়েছেন শিশুর কোনও সমস্যাই ফেলে রাখবেন না। উপরে উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। একমাত্র চিকিৎসকের পক্ষেই বোঝা সম্ভব শিশুর সাধারণ ভাইরাল ফিভার হয়েছে নাকি সে নিউমোনিয়ার শিকার। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকের সাউন্ড ইত্যাদি দেখে এরপর নিশ্চিত হতে চিকিৎসকরা চেস্ট এক্স-রে, সিটি স্ক্যানও করান এবং ব্লাড কাউন্টের মতো ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন নিউমোনিয়া? বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন: নিউমোনিয়া থেকে শিশুদের দূরে রাখবেন কীভাবে? কী পরামর্শ চিকিৎসকদের
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )