লকডাউন ওষুধ নয়! স্কুল, কলেজ খুলুক, সংক্রমণই তৈরি করবে হার্ড ইমিউনিটি, মত এইমসের অধ্যাপকদের
কোভিড ১৯ ভাইরাসের সম্মুখে একেবারে উন্মুক্ত হলে পরেই তৈরি হবে ‘হার্ড ইমিউনিটি’।
নয়াদিল্লি: একেবারে শুরুর দিকের কথা। তখন করোনা আতঙ্ক সবে মাত্র চিনের উহান থেকে ইউরোপের দিকে মুখ ঘুরিয়েছে। ফ্রান্স, স্পেন সহ আক্রান্ত ইংল্যান্ডও। গবেষক, চিকিৎসকরা অতিমারি ঠেকাতে তখন নিজেদের গৃহবন্দি করে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। সে সময় একেবারে উল্টো পথে হেঁটে করোনার মুখোমুখি হওয়ার কথা বলেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তাঁর হার্ড ইমিউনিটি তত্ত্ব গোটা বিশ্বেই সমালোচিত হয়েছিল। বরিস নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। এবার বরিসের সেই তত্ত্বে ভরসা দেখাল অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স।
এইমস-এর চার অধ্যাপকের গবেষণায় উঠে এসেছে হাড়হিম করা তথ্য। অধ্যাপক চন্দ্রকান্ত এস পাণ্ডব, অধ্যাপক স্বদীপ শ্রীবাস্তব, অধ্যাপক সঞ্জয় কে রাই এবং অধ্যাপক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে কোভিড ১৯ ভাইরাসের সম্মুখে একেবারে উন্মুক্ত হলে পরেই তৈরি হবে ‘হার্ড ইমিউনিটি’।
হার্ড ইমিউনিটি: চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মানব শরীরে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার দুটি উপায়। প্রথমত ভ্যাকসিন, যা মারণভাইরাসকে প্রতিহত করে মৃত্যুমুখ থেকে বাঁচিয়ে আনার ক্ষমতা তৈরি করে। আর অন্যটি হল পূর্ব সংক্রমণ, যা কিনা মারণভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডির কাজ করবে।
ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ করোনার মতো অতিমারির বিরুদ্ধে লড়তে লকডাউনের পথ বেছে নিয়েছে। বিশ্বের মধ্যে ভারত সবথেকে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনের পথে হেঁটেছে। সেলফ আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টিন সহ শারীরিক দূরত্ব বিধি, স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরায় জোর দিয়েছে দেশ। বন্ধ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গোটা পঠনপাঠনই চলছে অনলাইনে। এমতবস্থায় এইমস-এর চার অধ্যাপক একেবারে উল্টো পথে হেঁটে হার্ড ইমিউনিটির তত্ত্ব খাড়া করলেন।
চিকিৎসক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (পুণের ডিওয়াই পাতিল মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রধান) মত: স্কুল, কলেজ খুলে গেলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরির সম্ভাবনা বাড়বে। শিশু এবং যুবকদের মধ্যে থাকা ‘ফ্রেশ ইমিউনিটি’ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুলনায় বেশি সক্ষম। আমরা যদি এই প্রক্রিয়াকে কার্যকর করতে পারি, তাহলে অনেকের প্রাণ বাঁচবে। গবেষণায় প্রমাণিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪টি জেলায় করোনায় একটি শিশুরও মৃত্যু হয়নি।
চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার রাইয়ের (এইমস-এ সেন্টার অব কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক) মত: আমরা জানি না কবে এই মারণ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে এবং তা আদৌ কাজ করবে কিনা। এই অবস্থায় সংক্রমণই বিকল্প পথ। হার্ড ইমিউনিটি তৈরির ২টি উপায়। এক. ভ্যাকসিন। দুই. সংক্রমণে নিজেকে উন্মুক্ত করা।
চিকিৎসক চন্দ্রকান্ত এস পাণ্ডবের (সেন্টার অব কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন প্রধান) মত: লকডাউন নয়, হার্ড ইমিউনিটিই একমাত্র প্রতিষেধক যা কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে।
চিকিৎসক স্বদীপ শ্রীবাস্তবের (হিল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা) মত: বিশেষজ্ঞরা হার্ড ইমিউনিটি নিয়ে একটি বিকল্প পথের কথা বলছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন ক্লাসের দিকে ঝুঁকেছে, কর্পোরেট মহলেও ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রবণতা বেড়েছে। এই কর্মসংস্কৃতি হয়ত তাঁদের করোনার ছোঁয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখছে তবে অন্যদিকে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও হ্রাস করছে।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )