Obsessive Compulsive Disorder : বারবার তালা, গ্যাসের নব চেক করেও অশান্তিতে? অজানা আতঙ্কে ভোগেন? ভয়ঙ্কর OCD থেকে বাঁচবেন কীভাবে?
অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার। নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন, কনসালটেন্ট ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট সাহেলী গঙ্গোপাধ্যায়।

OCD । অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার। অনেকেই হয়ত অসুখটার নাম সম্পর্কে জানেন, কিন্তু জানেন না, বিষয়টা কতটা কমন ! আচ্ছা ভেবে দেখুন তো, আপনার সঙ্গে কি এমনটা হয় ? অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার। নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন, কনসালটেন্ট ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট সাহেলী গঙ্গোপাধ্যায়।
অফিস যাওয়ার আগে বারবার দরজার তালা চেক করেন। গ্যাস বন্ধ করলেন কিনা বার বার চেক করেও নিশ্চিন্ত হতে পারেন না? জানালাগুলো ঠিকঠাক বন্ধ? বারংবার চেক করা সত্ত্বেও আবার ফিরে আসেন—কখনও একবার, কখনও বা তিনবার কখনো বা তার চেয়েও বেশি। কিছুতেই এই চিন্তাটা মাথা থেকে সরে না।
অথবা মনে হয় খালি, আমি কি কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম? হয়তো খালি মনে হয়,অনিচ্ছায় কাউকে দুঃখ দিয়েছেন। কেউ কিছু বলেনি, তবুও সেই অপরাধবোধ মাথায় নিয়ে ঘোরেন। মনে হয়, খারাপ কোনো চিন্তা মাথায় এলেই সেটা পাপ। আর সেই পাপ মুক্ত হওয়ার জন্য খানি প্রার্থনা।
কেউ কেউ তো আবার বাইরে থেকে বাড়ি ফিরেই সোজা বাথরুমে ছুটে যান। শুধু হাত নয়, যেন পুরো শরীরটাই ধুয়ে ফেলতে পারলে ভাল। দিনে ৫০ বারও হাত ধোওয়া হয়ে যায়। তবুও মন শান্তি পায় না। তিনি জানেন এটা স্বাভাবিক নয়, তবুও জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার ভয়টা আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
কেউ আবার অঙ্কিতা একই কাজ বারবার করে চল এই প্রত্যাশা নিয়ে কাজটি যেন নিখুঁত হয়। এর ফলে কাজ শেষ হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়।
কেউ আবার ভাবেন, আমার খারাপ চিন্তাগুলো সত্যি হয়ে যায়? যদিও তিনি জানেন, এমন কিছু তিনি কোনওদিন করবেন না, তবুও এই অবাঞ্ছিত চিন্তাগুলোমাথার ভেতর বাসা বেঁধে থাকে।
কেউ আবার স্নান করতে ঢুকলে বাথরুম থেকে বেরোতে অতিরিক্ত সময় চলে যায়। বারবার সাবান ঘষা, একেকটা অংশ বারবার পরিষ্কার না করলে মনে হয় যেন এখনও নোংরা রয়ে গেছে। আর এই অপরিষ্কারের অনুভূতি তাঁর মন থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না।
OCD-র দুটি মূল দিক — অবসেশন (Obsession) আর কম্পালশন (Compulsion) । যেমন অনেকক্ষণ ধরে স্নান করার কারণ অবসেশন (Obsession)- "আমি পরিষ্কার নই", "শরীরে নোংরা লেগে আছে", "স্নান ঠিকঠাক না হলে রোগ হয়ে যাবে" — এই রকম চিন্তাগুলো বারবার মাথায় ঘোরে। এই চিন্তাগুলো নিজের ইচ্ছেতেও থামানো যায় না(repetitive intrusive thoughts), আর এগুলো এতটাই জোরালো হয়ে ওঠে যে ব্যক্তি মানসিক অস্বস্তিতে(Distress) ভোগেন।
কম্পালশন (Compulsion) কী এখানে?এই চিন্তার চাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি বারবার নির্দিষ্ট একটা নিয়ম মেনে স্নান করেন, যেমন –হতে পারে সেটা প্রথমে বাম হাত, তারপর ডান, তারপর মাথা, আবার শুরু থেকে। যদি কোথাও ভুল হয়, আবার শুরু(ritualistic pattern) এতে যে স্বস্তি আসে না এমনটা নয়। কিন্তু সেই সস্তি ভীষণভাবে টেম্পোরারি। তাই পুনরায় আবার এই ব্যবহারিক প্রক্রিয়াটাকে পুনরাবৃত্তি করতে হয়। ভয় বা অসস্তি কাটানোর জন্যই ওই একই কাজ বারবার করতে হচ্ছে — এটাকেই বলে কম্পালশন।
OCD মাথার ভেতরে অবাঞ্ছিত চিন্তা (অবসেশন) ঘুরতে থাকে, আর সেগুলো থেকে মুক্তি পেতে মানুষকে বাধ্য হয়ে কিছু কাজ (কম্পালশন) বারবার করতে হয় কখনো কখনো সেই কাজ যুক্তিহীন ও হতে পারে। আন্তর্জাতিক গাইড লাইন ICD-10 অনুযায়ী, OCD হলো এমন এক মানসিক অবস্থা — যেখানে বারবার অবাঞ্ছিত চিন্তা (obsessions) আসে, আর সেই চাপ কমাতে পুনরাবৃত্ত আচরণ (compulsions) করতে হয়। যাঁরা এই ধরনের সমস্যা যারা ভোগেন, তাঁরা শুধু মানসিক কষ্টের মধ্যেই থাকেন না, উপরন্তু তাঁদের পরিবার, কাছের মানুষ বা বন্ধুদের কাছ থেকেও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য, উপহাস — এই সবের মুখোমুখি হতে হয়।
এর চিকিৎসা প্রয়োজন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনো-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ফলো আপ check up এ যেতে হবে। অনেকের মধ্যে প্রবণতা থাকে একবার দেখিয়ে সেই ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে যাওয়া অথবা এই ধরনের ধারণা যে একবার দেখালেই বুঝি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতন পুনরায় চেকআপে যাবার বিষয়টাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দেখতে হবে।
নিজে থেকে কখনও ওষুধ বন্ধ করবেন না। এতে সমস্যা আবার নতুন করে ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের মানসিক সাপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ — এই পরিস্থিতিতে যিনি ভুগছেন, তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তাঁকে ছোট না করা, তাঁর অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া — এগুলো চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় অনেকখানি সাহায্য করতে পারে। রাগ, বিরক্তি বা কটাক্ষ না করে যদি বোঝার চেষ্টা করা হয়, তাহলে রোগীর উপর মানসিক চাপ অনেকটাই কমে।
কাউন্সিলিং বা সাইকো থেরাপি সেশনে Psychoeducation (সাইকোএডুকেশন) থম ধাপে ব্যক্তিকে বোঝানো হয় OCD কী, এটা কেন হয়, এবং অবসেশন–কম্পালশনের চক্রটা কীভাবে কাজ করে। অবসেশন শুরু হলে কম্পালশন কীভাবে রিলিফ দেয়, কিন্তু কীভাবে সেটা সমস্যাকে আরও বাড়ায় — এই প্রক্রিয়া তাকে বোঝানো হয়। ব্যক্তির নিজের সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে এবং ভয় বা ভুল ধারণা কমে। সাইকোথেরাপিতে ERP এক্সপোজার রেসপন্স প্রিভেনশন একটি evidence-based থেরাপি, যেখানে ব্যক্তিকে তার ভয় বা অস্বস্তিকর চিন্তার মুখোমুখি হতে শেখানো হয় এবং সেই ভয় থেকে বাঁচার জন্য গড়ে ওঠা বাধ্যতামূলক অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে কমাতে সাহায্য করা হয়। এজন্য একাধিক সেশনের প্রয়োজন হয়। গবেষণা বলছে চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ কাউন্সিলিং একসাথে অনেক বেশি কার্যকরী ফলাফল দিতে পারে।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )























