ব্রিটেনের প্রথম ভারতীয়-ব্রিটিশ বিদেশসচিব প্রীতি পটেল, জনসন-মন্ত্রিসভায় ঠাঁই আরও দুজনের, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নতির আশা
জনসনের ক্যাবিনেটে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সচিব ও রাজস্ব মন্ত্রকের প্রধান সচিব পদে নিযুক্ত হলেন যথাক্রমে অলোক শর্মা ও ঋষি সুনক।
লন্ডন: সদ্য শপথ নেওয়া প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন নতুন ব্রিটিশ ক্যাবিনেটে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রীতি পটেল। তিনি প্রথম ভারতীয়-ব্রিটিশ হিসেবে সেদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পদে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া জনসনের ক্যাবিনেটে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সচিব ও রাজস্ব মন্ত্রকের প্রধান সচিব পদে নিযুক্ত হলেন যথাক্রমে অলোক শর্মা ও ঋষি সুনক। নতুন প্রধানমন্ত্রীর হয়ে সাম্প্রতিককালে একাধিকবার জোরাল সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে প্রীতিকে। বিশেষ করে সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-র ‘ব্রেক্সিট’ নীতির অন্যতম সমালোচক ছিলেন এই গুজরাতি মহিলা। অতীতে, বরিস জনসনের সঙ্গে একই দফতরে কাজ করেছেন প্রীতি। যে কারণে, তাঁকে ‘ভাল বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন জনসন। কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃ্ত্বের দৌড়ে মে বনাম জনসনের লড়াইয়ে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন প্রীতি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ভুলে যাননি জনসন। প্রীতিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্রসচিবের পদ দিয়ে তাঁর মর্যাদা দিয়েছেন জনসন। নতুন দায়িত্ব পেয়ে প্রীতি বলেন, মন্ত্রিসভায় আধুনিক ব্রিটেন ও আধুনিক কনজারভেটিভ পার্টিকে তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজন। নতুন দফতরে নেওয়ায় ব্রিটেনের নিরাপত্তা, অভিবাসন ও ভিসা নীতির দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাবে প্রীতিকে। ২০১০ সালে এসেক্সের উইদাম থেকে কনজারভেটিভ পার্টির সাংসদ হিসেবে জয়ী হন ৪৭ বছরের প্রীতি। সেই সময় ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন ‘টোরি’ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ব্রিটেনে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ভীষণই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। পরে, ২০১৪ সালে রাজস্ব মন্ত্রী এবং ২০১৫ সালে কর্মসংস্থান মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন প্রীতি। ২০১৬ সালে পদোন্নতি হয়ে তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দফতরের বিদেশসচিব নিযুক্ত হন। সেই সময় ব্রিটেনের বিদেশসচিব ছিলেন জনসন। ইজরায়েলের সঙ্গে হওয়া একটি বৈঠক ঘিরে তৈরি হওয়া জনসন তাঁকে সমর্থন করলেও, বিতর্কের ফলে ২০১৭ সালে ওই পদ ছাড়তে তিনি বাধ্য হন প্রীতি। তাঁকে পিছনের সারিতে পাঠিয়ে দেন মে। সেখান থেকেই বিদ্রোহী নেত্রী হিসেবে তিনি মে-র ব্রেক্সিট নীতির সমালোচনা শুরু করেন। এছাড়া, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও সমর্থক প্রীতি। থেরেসা মে-র আমলে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে এবং তা যে অবিলম্বে উন্নত করতে হবে, তা নিয়ে গতমাসে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে বিস্তারিত রিপোর্টও প্রকাশ করেন প্রীতি। ব্রিটেনে ক্ষমতার পালাবদলের ঠিক আগে তিনি বলেছিলেন, ব্রিটেন খুব শীঘ্রই নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতে চলেছে। আশা করছি, এবার ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি হবে। প্রীতি ছাড়া জনসনের মন্ত্রিসভায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন যে দুই ভারতীয়, তাঁরা হলেন -- অলোক শর্মা ও ঋষি সুনক। ভারতে জন্ম নেওয়া ৫১ বছরের কনজারভেটিভ পার্টি নেতা শর্মা কর্মসংস্থান মন্ত্রী হিসেবে ছিলেন। তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দফতরে ক্যাবিনেট পর্যায়ের মন্ত্রী করা হয়েছে। তাঁর মূল দায়িত্ব হবে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক ত্রাণ তহবিল ও অংশীদারিত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। অন্যদিকে, ৩৯ বছরের সাংসদ ঋষি সুনকের মা ফার্মাসিস্ট। বাবা সরকারি চিকিৎসক। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যানফোর্ডের স্নাতক ঋষি নিজে একটি বিলগ্নীকরণ সংস্থার মালিক। ২০১৫ সালের নির্বাচনে জিতে তিনি প্রথমবার ব্রিটিশ সাংসদ হন। বিয়ে করেন ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির মেয়ে অক্ষতাকে।