সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন: এখনই স্থগিতাদেশ নয়, কেন্দ্রকে চার সপ্তাহ সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট
এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রের তরফের বক্তব্য না শুনে কোনও স্থগিতাদেশ জারি করা হবে না।একইসঙ্গে, শুনানি সাংবিধানিক বেঞ্চেও পাঠানো হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
নয়াদিল্লি: সংশোধিত নাগরিক আইনে (সিএএ) উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। এদিন মোট ১৬০টি আবেদনের জবাব দিতে কেন্দ্রকে ৪ সপ্তাহের সময় দিল শীর্ষ আদালত। পঞ্চম সপ্তাহে যখন পুনরায় শুনানি হবে, তখন স্থগিতাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বেঞ্চ।
শুনানির সময়, কৌঁসুলি অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বেঞ্চকে জানান, ১৪৪টি মামলার মধ্যে ৬০টি মামলার কপি কেন্দ্রের কাছে রয়েছে। ফলে, তিনি ৬ সপ্তাহ সময় চান। আদালত চার সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেছে।
উল্টে, মামলাকারীর তরফে কৌঁসুলি তথা কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল আদালতে আবেদন করেন, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিএএ ও জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর)-প্রক্রিয়া যেন স্থগিত রাখা হয়।
এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রের তরফের বক্তব্য না শুনে কোনও স্থগিতাদেশ জারি করা হবে না।একইসঙ্গে, শুনানি সাংবিধানিক বেঞ্চেও পাঠানো হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত প্রায় ১৬০টি মামলার শুনানি একসঙ্গে শোনে সুপ্রিম কোর্ট। শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে। গত ১৮ ডিসেম্বর, এই মর্মে কেন্দ্রকে নোটিস দিয়ে জবাব তলব করেছিল শীর্ষ আদালত। এই মামলাগুলির মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, মিম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েসি ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের দায়ের করা মামলাও।
খবর অনুযায়ী, অধিকাংশ মামলাতেই এই আইনকে অসাংবিধানিক উল্লেখে করে তা বাতিলের আর্জি করা হয়েছে। কিছু মামলায় এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আবার কিছু আবেদনে এই আইনের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে। এদিকে, এই সংক্রান্ত সবকটি মামলার একসঙ্গে শুনানির জন্য দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে দায়ের হওয়া এই মামলাগুলিকে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানোর জন্য ট্রান্সফার পিটিশন দাখিল করেছিল কেন্দ্র। সেই মতো, সব মামলা এখন শীর্ষ আদালতেই শোনা হবে।
এর আগে, গত ৯ তারিখ, আইনকে সাংবিধানিক ঘোষণা করার আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের তরফে জানানো হয়, দেশ একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে চলছে। চারদিকে এত হিংসা হচ্ছে। শান্তির জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
আইইউএমএল তাদের আবেদনে জানায়, এই আইন সংবিধানের সমতার পরিপন্থী। কারণ, এই আইনের মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করে অবৈধ অভিবাসীদের একাংশকে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত ১২ ডিসেম্বর, এই আইনকে সম্মতি জানান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আইইউএমএল তাদের আবেদনে সিএএ-র পাশাপাশি, বিদেশি সংশোধনী নির্দেশ ২০১৫, পাসপোর্ট সংশোধিত আইনের ওপরও স্থগিতাদেশ চেয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী হল সিএএ। কারণ, এর মূল উদ্দেশ্য হল হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ, পারসিদের থেকে মুসলিমদের আলাদা করা। জয়রাম রমেশ তার আবেদনে সিএএ-কে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বলেন, এই আইনের মাধ্যমে সংবিধানের সমতাকে অসম করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরে আগে ধর্মীয় নিপীড়নের জেরে ভারতে আসা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অভিবাসীদের এখানে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।