Academic Pressure in South Korea: ৪ বছর বয়সে উচ্চশিক্ষার পাঠ, প্রাথমিকেই ডাক্তার হওয়ার প্রস্তুতি, শৈশব চুরি হয়ে যাচ্ছে এই দেশে…
South Korea News: দক্ষিণ কোরিয়ায় শিশুদের কী কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা বিশদে তুলে ধরেছে South China Morning Post.

নয়াদিল্লি: শিশুদের বইয়ের ব্যাগ হালকা করতে তৎপর একাধিক দেশ। কিন্তু সেই তালিকায় নাম নেই দক্ষিণ কোরিয়ার। বইয়ের ভার লাঘব তো দূর, বরং A, B, C, D শেখার বয়সে শিশুদের উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাচ্ছে সেখানে। শিশু বয়স থেকে সকলকে প্রতিযোগিতায় শামিল করার জন্য আগেও সমালোচনার মুখে পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এবার দেশের শিক্ষাবিদরাও একে একে সেই নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। (Academic Pressure in South Korea)
দক্ষিণ কোরিয়ায় শিশুদের কী কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা বিশদে তুলে ধরেছে South China Morning Post. বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলের অভিজাত পরিবারের শিশুরা, যাদের বয়স মোটে চার, তারা উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন থেকেই। ইংরেজিতে পাঁচ অনুচ্ছেদ যুক্ত প্রবন্ধ লেখানো হচ্ছে চার বছর বয়সি শিশুদের, যার জন্য সময় বরাদ্দ করা হচ্ছে সাকুল্যে ১৫ মিনিট। (South Korea News)
অভিজাত পরিবারের সন্তানদের জন্য সোলের গ্যাংনাম জেলার দায়েচি-দং এলাকায় ইংরেজি ভাষার বিশেষ কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। সেখানে ছেলেমেয়েকে ভর্তি করা নিয়ে ইঁদুর দৌড়ে শামিল মা-বাবারা। ফলে নিজের সন্তানের শৈশব চুরি করতেও পিছপা হচ্ছেন না তাঁরা, সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা পর্যন্ত ভাবা হচ্ছে না। বিত্তশালীদের জন্য বরাদ্দ ওই সব কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে হয় শিশুদের। কিন্তু যে প্রশ্নপত্রে তৈরি করা হয়, তা ন' থেকে ১২ বছর বয়সি পড়ুয়াদের জন্য উপযুক্ত।
গ্যাংনাম দক্ষিণ কোরিয়ার 'শিক্ষা রাজধানী' হিসেবেও পরিচিত। ইংরেজি বাষার কিন্ডারগার্টেনে ছেলেমেয়েকে ভর্তি করাতে পারলে, দেশের তিনটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রবেশের পথ প্রশস্ত হয়ে যায় বলে ধারণা রয়েছে। Seoul National University, Korea University, Yonsei University-এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়কে একত্রে 'SKY' বলা হয়। সেখান থেকে ডিগ্রি অর্জনের অর্থ দক্ষিণ কোরিয়ায় সামাজিক খ্যাতি, ভাল কেরিয়ার এবং সফল জীবন।
শিশুদের ইঁদুর দৌড়ে শামিল করা নিয়ে বরাবরই সমালোচিত দক্ষিণ কোরিয়া। Shingu College-এর অধ্যাপক চোয় মিউং-হি শৈশব চুরি করা মা-বাবাদের 'Helicopter Parents' বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, সন্তানকে জীবনে সফল করে তোলায় মা-বাবারা অতিসক্রিয়। বিশেষ করে ছয় বা সাতের দশকে জন্মেছেন যাঁরা, তাঁরা দেশকে দ্রুত বদলে যেতে দেখেছেন। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উৎকণ্ঠায় ভোগেন তাঁরা। ছেলেমেয়েকে সেরা জায়গায় না পড়াতে পারলে জীবন ব্যর্থ বলে মনে করেন। তাই সন্তানের শৈশব কেড়ে নিতেও পিছপা হন না।
দ্রুত যাতে উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারে সন্তান, সমাজে মা-বাবার সম্মান বৃদ্ধি করতে পারে, তার জন্য স্কুলের পর ছেলেমেয়েকে বাড়িও ফিরতে দেওয়া হয় না। বরং পাঠানো হয় After School-এ। দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় এই After School-গুলি ক্রমশ কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠছে। সেখানে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং অন্য বিষয়ে সিলেবাসের বাইরের সবকিছুও পড়ানো হয়। পরীক্ষা নেওয়া হয় নিয়মিত। রাত পর্যন্ত চলে ক্লাস, সপ্তাহান্তেও রেহাই মেলে না। সেখানে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা হয় পড়ুয়াদের। প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের ভবিষ্যতে ডাক্তারি পড়ার জন্য প্রস্তপত করা হয়।
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে একটি সমীক্ষা চালানো হলে দেখা যায়, ২০২৪ সালে অনূর্ধ্ব ছ'বছর বয়সি ছেলেমেয়েদের বেসরকারি After School-এ পড়ানোর জন্য মা-বাবারা সন্তানপিছু ৫৫০ মিলিয়ন জলার খরচ করতেও পিছপা হননি, তাও আবার শুরুমাত্র জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। দেশের অন্য প্রান্তের বাসিন্দা হলেও, সর্বস্ব বাজি রেখে ছেলেমেয়েকে রাজধানীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকরা। তাদের থাকা-খাওয়ার আলাদা ব্যবস্থা করতে জলের মতো টাকাও খরচ করেছেন। ৮০ শতাংশ পড়ুয়া After School-এ যায়, তার জন্য গত বছর মা-বাবারা ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার হার যেভাবে বাড়ছে, তার জন্যও অভিভাবকদের অতিসক্রিয়তাকে দায়ী করেন শিক্ষাবিদদের অনেকে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাথমিক স্কুলের ২১৪ পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
