Rafah Strikes: শিশু-সহ ৪৫ জনের উপর হামলায় 'ভুলস্বীকার', কিন্তু হামলায় রাশ টানছে না ইজরায়েল, রাফায় মৃত্যুমিছিল জারি
Israel Hamas War: নয় নয় করে আট মাস পেরিয়ে গেলেও, আক্রমণের তীব্রতা ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে ইজরায়েল, যাতে নয়া সংযোজন ঘটে সপ্তাহান্তে।
নয়াদিল্লি: ইজরায়েলি হামলায় একসঙ্গে ৪৫ টি প্রাণ শেষ। প্যালেস্তাইনের রাফা শহরে এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। কিন্তু এই ঘটনায় সমবেত স্বরে গর্জে উঠেছে গোটা পৃথিবী। সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্ট জন, এমন নৃশংসতা দেখে শিউড়ে উঠেছেন সকলে। গণহত্যার প্রতিবাদে সরব একে একে সরব হয়েছেন তাঁরা। জানিয়েছেন, একটি ঘটনাও নজর এড়াচ্ছে না কারও, বরং এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীর নজর আটকে রাফার উপরই। 'ভুলবশত' ৪৫ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছে বলে যদিও বা ক্ষমা চেয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু প্যালেস্তাইনের উপর তাঁদের হামলার তীব্রতা কমেনি এতটুকু। (Rafah Strikes)
গত অক্টোবর মাসে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তিনীয় সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধের সূচনা ঘটেছিল। সেই থেকে নয় নয় করে আট মাস পেরিয়ে গেলেও, আক্রমণের তীব্রতা ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে ইজরায়েল, যাতে নয়া সংযোজন ঘটে সপ্তাহান্তে। প্যালেস্তাইনের রাফায় অস্থায়ী তাঁবুতে মাথা গোঁজা নিরীহ মানুষদের উপর আছড়ে পড়ে ইজরায়েলি রকেট। মহিলা এবং শিশু-সহ ৪৫ কমপক্ষে ৪৫ জনের মৃত্যু হয় সেখানে। পাশাপাশি, আগুনে পুড়ে, শার্পনেল বিঁধে আহত হয়েছেন শতাধিক। (Israel Hamas War)
এই ঘটনায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারাও প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও, রাফার ওই এলাকাকে নিরাপদ বলে চিহ্নিত করা সত্ত্বেও, সেখানে ইজরায়েল হামলা চালাল কেন, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। ইজরায়েলের তরফে গোটা বিষয়টিকে 'দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা' বলে উল্লেখ করা হয়। নেতানিয়াহু বলেন, "নিরীহ নাগরিকরা যাতে আঘাত না পান, তার জন্য সব চেষ্টা চালানো সত্ত্বেও, ভুলবশত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা গিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি আমরা। এর বিহিত করা আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে।"
কিন্তু গাজা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক-সহ প্যালেস্তাইনের বিভিন্ন শহরে গত কয়েক মাস ধরে ইজরায়েল যেভাবে মুহুর্মুহু হামলা চালিয়ে আসছে, তাতে নেতানিয়াহুর ভুলের এই স্বীকারোক্তিতে চিঁড়ে ভেজেনি। রাফার স্থানীয় মানুষদের দাবি, হামলার পর শিশুদের ছিন্ন-ভিন্ন, খণ্ডিত দেহ পড়েছিল সর্বত্র। ছেলে-বুড়ো কেউ রক্ষা পাননি। তাঁবুগুলিতে আগুনের শিখা যে সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছিল, তা না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।
রাফায় এই হামলার পর গত কয়েক দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় "All Eyes on Rafah" হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে। বিশিষ্ট জনেরাও নিজ নিজ সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে সেই স্লোগান এবং ছবি পোস্ট করে অবস্থান জানাতে শুরু করেছেন। ভারতে ইরানের দূতাবাসও এই প্রতিবাদে শামিল হয়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ত্রুদো এযাবৎ সাবধানী অবস্থান নিলেও, রাফা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "রাফায় ইজরায়েলের কাজকর্মে একেবারেই সমর্থন করে না কানাডা।"
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তইপ আর্দোয়ান বলেন, "রবিবার রাফায় যে হামলা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হয়েছে। এতে রক্তপিপাসু, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের রূপ সকলের সামনে উন্মোচিত হয়ে গিয়েছে।" ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ বলেন, "অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে। রাফায় প্যালিস্তিনীয় নাগরিকদের মাথা গোঁজার জায়গা নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আর্জি জানাচ্ছি।"
জার্মানির বিদেশমন্ত্রী অ্যানালেনা বারবক এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিদেশ নীতির প্রধান জোসেফ বোরেল জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত হামলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে, সেই নির্দেশকে সম্মান জানানো উচিত। অ্যানালেনা বলেন, "আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সকলের উপরই প্রযোজ্য। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইজরায়েলকেও তা মেনে চলতে হবে।" সৌদি আরব, কাতার, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, মিশর, কুয়েত, কাতারও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। কিন্তু আমেরিকার দাবি, নিরীহ মানুষের প্রাণহানি কোনও পরিস্থিতিতেই কাম্য় নয়। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনও উপসংহারে পৌঁছনো সম্ভব নয়। রাফায় হামলা চালাতে আমেরিকার তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ সামনে আসছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে তারা।
সমালোচনার মুখে পড়েও যদিও রাফায় আক্রমণে রাশ টানেনি ইজরায়েল। বুধবার সকালেই ফের রাফায় একদফা গোলাবর্ষণ হয় বলে জানা গিয়েছে। বসতি এলাকায় এদিন বোমাবর্ষণ হয় বলে অভিযোগ, তাতে কমপক্ষে ১৫ জন প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাকি হানেগবি জানিয়েছেন, বছরভর অন্তত গাজায় অভিযান চলবে তাঁদের তরফে। অর্থাৎ পরিস্থিতির উন্নতির কোনও লক্ষণ চোখে পড়ছে না। রাফা থেকে বহু মানুষ ইতিমধ্যেই খান ইউনিসে পালাতে শুরু করেছেন।
সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত যুদ্ধে ৩৬ হাজার ৬১৫ প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছ। এর মধ্যে শুধুমাত্র গাজায় মারা গিয়েছেন ৩৬ হাজার ৯৬ জন। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ৫১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৫ হাজার শিশুও রয়েছে। যুদ্ধে ১ হাজার ১৩৯ ইজরায়েলি নাগরিক মারা গিয়েছেন।