Union Minister on Rabindranath: কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিতর্কিত 'কালো রবি ঠাকুরকে কোলেই নিতেন না তাঁর মা' মন্তব্যে কী প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলের?
সুভাষ সরকারের এমন বিতর্কিত 'বর্ণবিদ্বেষী' মন্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বুদ্ধিজীবীমহলে।
কলকাতা : বাঙালি জাতির সঙ্গে তাঁর অন্তরের যোগাযোগ। তাঁকে নিয়ে পড়াশোনা, আলোচনা বাঙালির সহজাত প্রতিবর্ত। যত বছর এই পৃথিবীতে বাঙালির অস্তিত্ব থাকবে, ততদিনই বাঙালির গর্বের আসন আলোকিত করে থাকবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই কবিগুরুকে নিয়েই কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বিতর্কেত মন্তব্যের ঝড় সর্বত্র। কারোর কারোর আশঙ্কা, অনিচ্ছাকৃত মন্তব্যগুলো কোথায় গিয়ে বঙ্গ সংস্কৃতিকে খর্ব করার সামিল নয় তো?
বুধবার বিশ্বভারতীতে বিজেপির বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার বলেছেন, 'খেয়াল করে দেখবেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সকলেই ধবধবে ফর্সা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোটেই তেমন ছিলেন না। তিনি কালো ছিলেন বলেই তাঁর মা এবং তাঁর পরিবারের অন্যরা তাঁকে কোলে নিতেন না। দু'ধরনের ফর্সা মানুষ দেখা যায় সাধারণত। এক ধরণ হল ধবধবে হলদেটে ফর্সা। আর একদল লালচে ফর্সা। কবিগুরুর গায়ের রং ছিল দ্বিতীয়দের মতো।'
আর এমন বিতর্কিত 'বর্ণবিদ্বেষী' মন্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বুদ্ধিজীবী মহলে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেছেন, 'কোনও ধারণা নেই মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় কেন এমন মন্তব্য করেছেন। ওঁর কি আদৌ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী পড়া নেই? নাকি সত্যিই বোঝেন না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষের কাছে কী। হ্যাঁ, এক জায়গায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিদি বলেছিলেন বটে যে, তাঁদের রবি তুলনায় কালো। কিন্তু এটা একেবারেই একটা মানুষের বর্ণনা। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আফ্রিকানদের মতো কালো বলতে চেয়েছেন?' পবিত্র সরকার আরও বলেছেন, 'বুঝতে পারছি না মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ঠিক কী প্রমাণ করতে চেয়েছেন এমনটা বলে। সেটা তিনি ব্যাখ্যাও করেননি। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কোনও মানুষের এমন মন্তব্য করা উচিত হয়নি।'
রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল পড়ে গিয়েছে সুভাষ সরকারের এই মন্তব্যে। প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'সুভাষ সরকারের ইতিহাসের কোনও জ্ঞান নেই। সকলেই জানে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ফর্সা ছিলেন। এটা একটা বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য একজন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে। শুধু তাই নয়, বাঙালির আদর্শকে এমন বলাটা একেবারেই উচিত কাজ হয়নি। সুভাষ সরকারকে বিশ্বভারতীতে আর ঢুকতে দেওয়াই উচিত নয়।'
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিআইএম-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেছেন, 'বিজেপির বাংলা বিরোধী মনোভাব এবং বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবই এই মন্তব্যে প্রকাশিত হয়েছে।' যদিও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পাশেই দাঁড়াচ্ছে। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, 'সুভাষ সরকার এর আগে কখনওই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে কোনও কথা বলেননি। তিনি শুধু কবিগুরুর গায়ের রং নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি কাউকেই অসম্মান করতে চাননি। তৃণমূল সব বিষয়ে রাজনীতিকে টেনে আনা বন্ধ করুক।' শমীক ভট্টাচার্যেরই সুরে গলা মিলিয়েছেন বিজেপির বর্ষীয়াণ নেতা এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। তিনি বলেছেন,'আপনারা যদি পাত্র-পাত্রীর খবরে চোখ রাখেন, বাঙালি চিরকালই গায়ের রং নিয়ে ভেবেছে। এই মন্তব্যে তাই প্রতিফলিত হয়েছে। '