(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
বিশ্ববাংলা-বিতর্ক: মানহানি মামলা দায়ের অভিষেকের, মুকুলকে হাজিরার নির্দেশ আদালতের
কলকাতা: বিশ্ববাংলা বিতর্কে প্রথমবার মুখ খুলেই আক্রমণাত্মক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযোগ খারিজ। তারপর কোর্ট থেকে বেরিয়ে মুকুল রায়কে চ্যালেঞ্জ।
গত ১০ নভেম্বর, বিশ্ববাংলা ও জাগো বাংলা নিয়ে প্রাক্তন সতীর্থকে নিশানা করেছিলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। বলেছিলেন, বিশ্ববাংলা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। এটা একটা কোম্পানি। মালিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল বলে জাগো বাংলা মুখপত্র। এটাও একটা কোম্পানি। মালিক অভিষেক।এরপর একাধিকবার একই অভিযোগে সরব হন মুকুল।
তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যাঙ্কশাল আদালতে ফৌজদারি মানহানির মামলা করেন তৃণমূল সাংসদ। মঙ্গলবার সেই মামলায় অভিষক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ান নথিবদ্ধ হয়। আদালতে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ বলেন, বিশ্ববাংলা আমার সংস্থা নয়, এটা রাজ্য সরকারের। ‘জাগো বাংলা’ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র, আমি তার মালিক নই। এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অসম্মানজনক। মিথ্যে বলছেন মুকুল রায়। আমি কোনও আর্থিক সুবিধে নিইনি।
এই প্রেক্ষিতে মুকুল রায়কে ২০ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারক। ‘প্রাথমিকভাবে পেশ করা তথ্য খতিয়ে দেখেই নির্দেশ’, মুকুলকে সমনের প্রসঙ্গে মন্তব্য আদালতের। আদালত থেকে বেরিয়েও মুকুল রায়কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে, বাংলা ছাড়ুন মুকুল। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে পা রাখব না রাজনীতির আঙিনায়। জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
পাল্টা অভিষেকককে কটাক্ষ করেছেন মুকুল। বিজেপি নেতা বলেছেন, অভিষেক বাচ্চা ছেলে। ওকে ম্যাচিওর হতে হবে। নইলে সার্ভাইভ করতে পারবে না। আমি ওদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তাই ওরা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগদানের পর কলকাতায় মুকুল তাঁর প্রথম সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, বিশ্বকাপের আয়োজন করল বিশ্ববাংলা। বিশ্ববাংলা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়। এটা একটা কোম্পানি। যার মালিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই সাংবাদিক বৈঠক করে স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য এই অভিযোগ খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, বিশ্ববাংলা লোগো, ব্র্যান্ড রাজ্যের। কারও ব্যক্তিগত কপিরাইট নেই।
মুকুল অবশ্য সেখানেই থামেননি। তিনি বলেন, তৃণমূলের লোগো, লিফলেট, প্যামফ্লেট যেখানে ছাপা হয়…সেখানকার মালিক অভিষেক। তৃণমূল বলে জাগো বাংলা মুখপত্র। আসলে এটাও একটা কোম্পানি। তারও মালিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
পাল্টা জবাবও দেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বলেন , মুকুল জানেন না, জাগো বাংলা কীভাবে লেখা হত! মমতা নিজের মাইনে দিতেন। আমার বাড়িতে লেখা হত। কীভাবে রেজিস্ট্রি কিছুই জানেন না। তরুণ প্রজন্মকে আনতে বারবার বাধা দিয়েছেন। এখন তার কারণ বোঝা গেল। জাগো বাংলা নিয়ে যা বলছেন মুকুল সেটা প্রমাণ করতে পারলে তিনি পদ ছেড়ে দেবেন। তবে তারপরও অব্যাহত থাকে মুকুলের বিশ্ববাংলা বান।
এরপর অভিষেকের আইনজীবী মুকুলকে আইনি চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেন, বিশ্ববাংলার মালিকানা নিয়ে মুকুল রায় জনসভায় যে মন্তব্য করেছেন, তার জন্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষমা চাইতে হবে। এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৬৮ পাতার আইনি চিঠি পাঠিয়ে তার জবাবও দেন মুকুলের আইনজীবী।
এরপর মুকুলের করা অভিযোগগুলো নিয়ে আলিপুরদুয়ার আদালতের দ্বারস্থ হন অভিষেক। তিনি অভিযোগ করেন, কোনও প্রমাণ ছাড়াই বিশ্ববাংলার ব্র্যান্ড ও লোগো নিয়ে ভিত্তিহীন মন্তব্য করে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছেন মুকুল। এর প্রেক্ষিতে, ২১ নভেম্বর আদালত জানায়, আপাতত বিশ্ববাংলা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মুকুল রায় কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না।
কিন্তু গত ২৫ তারিখ বিজেপির রাজ্য দফতরে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। সেখানে ফের অভিষেক সম্পর্ক অসম্মানজনক মন্তব্য করেন তিনি। সেখানে মুকুল বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হলফনামা পেশ করে আদালতকে জানিয়েছেন, তিনি যা করেছেন, তা মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতিতেই।তাঁর দাবির স্বপক্ষে বেশ কিছু নথিও পেশ করেন মুকুল। নথি দেখিয়ে তিনি বলেন, এটা আমার কথা নয়। অভিষেকের হলফনামা। যেখানে বলা হয়েছে, তিনি নিজে কিছু করেননি। যা করেছেন, তা মুখ্যমন্ত্রী ও অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনক্রমে।
তারপর আজ এই বিতর্কে ব্যাঙ্কশাল আদালতে মুকুলকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন অভিষেক।