(Source: ECI | ABP NEWS)
India-China Tension: অরুণাচলের কাছে পাকাপোক্ত পরিকাঠামো, সুড়ঙ্গে মজুত জ্বালানি, গোলাবারুদ! ভারতের নাকের ডগায় এসব কী করছে চিন?
India-China Relations: তিব্বতের লুঞ্ঝে বায়ুসেনা ঘাঁটির কাছেই নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ করেছে চিন।

নয়াদিল্লি: আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে টানাপোড়েনের মধ্যে ফের ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলল চিন। অরুণাচল প্রদেশের কাছে, ভারতের ঠিক নাকের ডগায় যুদ্ধবিমান মোতায়েন কেন্দ্রের নির্মাণ সম্পন্ন করল তারা। একটি বা দু’টি নয়, ৩৬টি পাকা বিল্ডিং তৈরি করেছে, যার মধ্যে তাদের যুদ্ধবিমানগুলি সুরক্ষিত থাকবে, সেখানেই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলবে। শুধু তাই নয়, নয়া প্রশাসনিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে। একটি নতুন ‘অ্যাপ্রন’ও তৈরি করা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিমান দাঁড় করানো থাকে, জ্বালানি ভরা, রক্ষণাবেক্ষণ থেকে জিনিসপত্র তোলা ও নামানো হয়। (India-China Relations)
তিব্বতের লুঞ্ঝে বায়ুসেনা ঘাঁটির কাছেই নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ করেছে চিন। অরুণাচলে ভারত ও চিনের সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত ম্যাকমোহন লাইন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে যাবতীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। অরুণাচলের তাওয়াং থেকে ওই বিমানকেন্দ্রের দূরত্ব ১০৭ কিলোমিটার। এর ফলে সেখানে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মোতায়েন থেকে ড্রোন প্রযুক্তি বসানোর রাস্তা সহজ হল চিনের জন্য। অরুণাচল এবং অসমে ভারতীয় বায়ুসেনার যে ঘাঁটি রয়েছে, সেগুলির সঙ্গেও দূরত্ব কমল অনেকটাই। (India-China Tension)
বিষয়টি নিয়ে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন অবসরপ্রাপ্ত এয়ার চিফ মার্শাল তথা প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান বিএস ধানোয়া। তিনি বলেন, “৩৬টি পাকা বিল্ডিং নির্মাণের অর্থ পরবর্তীতে কিছু ঘটলে সেখানে যুদ্ধবিমান ও আক্রমণকারী হেলিকপ্টার মোতায়েন করতে পারবে ওরা।” বিএস ধানোয়ার মতে, এমনি এমনি হঠাৎ ওই নির্মাণকার্য সম্পন্ন করা হয়নি। আগে থেকে নিশ্চয়ই সেখানে সব ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। মাটির নীচে সুড়ঙ্গপথে গোলাবারুদ ও জ্বালানি নিশ্চয়ই মজুত করে রেখেছে চিন।
বিএস ধানোয়ার দাবি, এমনটা হতে পারে বলে আগেই আঁচ করেছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “২০১৭ সালে ডোকলামের সময়ই সতীর্থদের বলেছিলাম যে, তিব্বতে বিমান নামানো চিনা বাহিনীর কাছে সমস্যাই নয়, বরং বিমান মোতায়েন রাখাই সমস্যার। তখনই বলেছিলাম, যেদিন তিব্বতে পাকা বিমান কেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু করবে চিন, বুঝতে হবে, আমাদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ওরা। তিব্বতে আর কোনও দুর্বলতা থাকবে না ওদের।”
Tracking construction at China’s Lhunze airbase, 100 kilometers from Tawang, India - reveals the development of 36 new hardened shelters for aircraft/helicopters since April this year, highlighting Beijing's effort to scale up air capability near the Line of Actual Control https://t.co/63wUEJHHBq pic.twitter.com/6imIimt6pO
— Damien Symon (@detresfa_) October 22, 2025
ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন ভাইস চিফ, এয়ার মার্শাল অনিল খোসলার মতে, এই নির্মাণের ফলে আগামী দিনে যুদ্ধক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবে চিন, কৌশলগত ভাবে যা ভারতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁর কথায়, “লুঞ্ঝে-তে যে পরিবর্তন ঘটেঠে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার উপর তার প্রভাব অসীম। বিশেষ করে ২০২০ সালে গালওয়ানে ভারত ও চিনের মধ্যেকার সংঘাত পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখা হয় যদি।” যে পাকা বিল্ডিং নির্মাণ করেছে চিন, তা শত্রুপক্ষের হামলা থেকে তাদের অস্ত্রশস্ত্র, বিমানকে রক্ষা করবে বলে মত তাঁর। অনিল খোসলা বলেন, “তিংরি, লুঞ্ঝের মতো বায়ুসেনা ঘাঁটিৃগুলি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ৫০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। সীমান্ত সংঘাতের মধ্যে দ্রুত সেনা মোতায়েন থেকে চটজলদি জবাব দিতে সুবিধা হবে ওদের।অরুণাচল, সিকিং, উত্তরাখণ্ড এবং লাদাখে ভারতের যে ঘাঁটিগুলি রয়েছে, তা ওদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।”
স্যাটেলাইট সংস্থা Vantor (পূর্বতন Maxar)-এর প্রকাশ করা ছবিতেও অরুণাচলের কাছে চিনা পরিকাঠামোর দর্শন মিলেছে। সেখানে CH-4 ড্রোন পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে খবর। অতি উচ্চতায় উড়তে পারে ওই ড্রোন, ১৬ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ছুড়তে পারে ক্ষেপণাস্ত্র। সেগুলির জবাব দিতে Sky Guardian ড্রোন আমদানি করছে ভারত, যা ২০২৯ সালে ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনার হাতে উঠবে। দুই বাহিনী আটটি করে ড্রোন হাতে পাবে বলে ঠিক হয়েছে আপাতত।
আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক ডেমিয়েন সাইমন জানিয়েছেন, চিন যে বায়ুসেনার শক্তি বর্ধিত করছে, অরুণাচলের কাছে তাদের এই নির্মাণকার্যই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। শুধু লুঞ্ঝেই নয়, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল বরাবর ছয়টি নতুন বায়ুসেনা ঘাঁটি গড়ে তুলছে চিন।
দীর্ঘ সংঘাতপর্বের পর সম্প্রতি ভারত ও চিনের মধ্যে দূরত্ব কমতে শুরু করেছিল। আমেরিকার শুল্কের বিরুদ্ধে এককাট্টা অবস্থানে দেখা গিয়েছিল দুই দেশকে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চিন সফরেও যান। নতুন করে দুই দেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা শুরু হওয়া থেকে, বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কাজ চলছে। সেই আবহে অরুণাচলের নির্মাণকার্য নিয়ে উদ্বিগ্ন কূটনৈতিক মহল।























