Durga Puja 2023: শ্রীরামপুরে গোস্বামীদের রাজবাড়িতে দুর্গা পুজো এবার ৩৪০ বছরে, মায়ের সঙ্গেই সেবা চলে গৃহদেবতা রাধামাধবের
Durga Puja: সপ্তমী পুজোর আগের অন্যতম আকর্ষণ হল ঘটমাল্য। এই আচারের মাধ্যমে বাড়ির বড় গিন্নি ঘটমাল্য দিয়ে দেবী বরণের পর সপ্তমী পুজোর সব কাজ শুরু হয়।
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: আজ মহাসপ্তমী (Maha Saptami)। পার হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোর (Durga Puja) একদিন। দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার দোরগোড়ায়। দুর্গাপুজোর সঙ্গে আপামোর বাঙালির আবেগ ঠিক কীভাবে এবং কতটা জড়িয়ে রয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। বারোয়ারি থেকে বাড়ির পুজো, বনেদি বাড়ি হোক বা প্রাচীন রাজবাড়ি, গোটা বছর এই কয়েকটা দিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন সকলেই। আর বাড়ির পুজো মানে তো উপরি পাওয়া। হাল-ফ্যাশনের ভাষায় গেট-টুগেদার। সমস্ত প্রজন্ম এক ছাদের তলায় জমায়েত হওয়া। তারপর নিষ্ঠা ভরে পুজো, জমিয়ে পেটপুজো, আড্ডা, স্মৃতিচারণ... আরও কত কী। এমনই এক পুজোর আয়োজন হয় শ্রীরামপুরে গোস্বামীদের রাজবাড়িতে। বিগত ৩৪০ বছর ধরে টানা চলছে এই পুজো। রয়েছে একাধিক নিয়ম-নীতি। তার মধ্যে অনেকগুলোই বেশ আলাদা রকমের। এই রাজবাড়ির পুজো দেখতে ভিড় জমান হুগলি জেলা এবং সংলগ্ন এলাকার মানুষ।
এই রাজবাড়ির পুজোর অনেক অজানা কথা জানালেন শিবাশিস গোস্বামী (এই বংশের সপ্তম পুরুষের এক প্রবীণ সদস্য)
শিবাশিসবাবু জানিয়েছেন, আরও একটি বাড়ি রয়েছে গোস্বামীদের। সেটি আরও পুরনো। তবে এখন যে বাড়িতে পুজো হয় সেখানেই রঘুরাম গোস্বামী প্রথম পুজো শুরু করেন। তিনি যেভাবে পুজোর শুরু করেছিলেন এখনও তা অব্যাহত। তিনটি মতে পুজো হয় গোস্বামীদের বাড়িতে। সাধারণত দুর্গাপুজো হয় দেবী পুরাণ মেনে। এখানে সেই দেবী পুরাণের সঙ্গে কালিকা পুরাণ, বৃহৎ নান্দিকেশ্বর পুরাণ, বৃহৎ তন্ত্রসারেরও কিছু কিছু যোগ রয়েছে। উমা ভাবনাতেও ভাবিত হয়ে পুজো হয় এই বাড়িতে।
দেবীর বোধন হয় আলাদা একটি ঘরে, ধরে নেওয়া হয় সেটা কৈলাশ। আর যে বেদীতে মায়ের প্রতিমা থাকে সেটা ধরা হয় উমার মা-বাবার বাড়ি। বোধনকালে অধিবাসের সময় হাতে সূত্র বন্ধন করে বাপের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় দুর্গা মায়ের প্রতিমা। অন্য ধরনের নিয়ম রয়েছে নবপত্রিকার স্নানের ক্ষেত্রেও। গোস্বামীদের রাজবাড়িতে নবপত্রিকা স্নান গঙ্গায় নয়, হয় বাড়ির রাধামাধবের সামনে। আগে বাড়ির পিছনে পুকুর ছিল। তা ভরা হতো গঙ্গার জলে। হ্যান্ড পাম্প জাতীয় মেশিন দিয়ে। সেই মেশিন খারাপ হয়েছে। পরবর্তীতে পুকুর ভরার নিয়মও বন্ধ হয়েছে। কিন্তু আগের রীতি মেনেই নবপত্রিকা স্নান গঙ্গায় গিয়ে হয় না, হয় বাড়ির মধ্যেই।
সপ্তমী পুজোর আগের অন্যতম আকর্ষণ হল ঘটমাল্য। এই আচারের মাধ্যমে বাড়ির বড় গিন্নি ঘটমাল্য দিয়ে দেবী বরণের পর সপ্তমী পুজোর সব কাজ শুরু হয়। প্রবেশ হয় নবপত্রিকার। সন্ধি পুজোতেও রয়েছে ইউনিক নিয়ম-কানুন। আরতির সময় যে বাতিদান ব্যবহার হয় তা অনেকটা কুলোর মতো। সচরাচর যে সুবিশাল প্রদীপ দেখা যায় তেমনটা নয়। কুলোর মতো এই বাতিদান গোস্বামী পরিবারের বিশেষত্ব। শিবাশিসবাবু জানিয়েছেন সন্ধি পুজো এবং আরতির সময় জনসমাগম হয় ঠাকুর দালানে। সে এক দেখার মতো পরিবেশ। একেবারে সাজো সাজো রব। মহানবমীতে থাকে কুমারী পুজোর আয়োজন। বর্তমানে একজনই কুমারী হয়। আগে মানসিক কুমারী হতো। পুজোর দিনে কেউ এলে তার কুমারী পুজো হতো, যার নাম ছিল 'এলো কুমারী'।
ধুনুচি নাচেও রয়েছে চমক। গোস্বামীদের রাজবাড়িতে এই রীতির নাম পঞ্চতপা, যা সাধারণ ভাবে ধুনো পোড়ানো হিসেবেই লোকে জানেন। পাঁচটা খুড়ি পুড়িয়ে নিয়মকানুন মানা হয় এখানে। এরপর উমার বিদায়ের পালা। দশমীতে প্রথমে দর্পণে বিসর্জন হয়। তারপর সাত বা নয়জন এয়ো স্ত্রী দেবী বরণ করেন। তারপর সন্ধায় বিসর্জন দেওয়া হয় গঙ্গায়। আগে নিজেদের পুকুর ঘাটেই বিসর্জন হতো। এখন পাশে অন্যত্র হয়। এই পরিবারে কোনও বলির চল নেই। কারণ গোস্বামী পরিবার বৈষ্ণব মতে বিশ্বাসী। দেবীর সামনে চালকুমড়ো, আখ, শসা সবই শুধু নিয়ম মেনে উৎসর্গ করা হয়। কিন্তু সেগুলি কাটা বা কোপানো হয় না।
বছরের এই কটাদিন পরিবারের সকলে জমা হন বাড়িতে। এটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সকলে প্রতিবার আসতে না পারলেও চেষ্টা থাকে ১০০ শতাংশ। বিদেশ থেকেও আসেন পরিবারের অনেক সদস্য। মা দুর্গার সঙ্গে একইভাবে আরাধনা হয় গোস্বামী পরিবারের গৃহদেবতা রাধামাধবের। তাঁর সেবার সঙ্গে সঙ্গে চলে তুলসী মঞ্চের পুজো। চণ্ডীপাঠের সঙ্গে চলে গীতাপাঠ।