শত্রুর রেডারকে নিমেষে ধ্বংস করতে পারে, দেশের প্রথম অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল "রুদ্রম"-এর সফল পরীক্ষা
শব্দের চেয়ে দুগুণ বেগে যেতে সক্ষম রুদ্রম-১ ক্ষেপণাস্ত্রটি নিমেষের মধ্যে শত্রুর যে কোনও রেডার ও রেডিয়েশন-নির্ভর নজরদারি ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে।
নয়াদিল্লি: ভারতের অস্ত্রাগারে নতুন সদস্য হওয়ার দৌড়ে আরও একধাপ এগলো "রুদ্রম"। শুক্রবার, ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট (ডিআরডিও)-র তৈরি দেশের প্রথম অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল (এআরএম) বা রেডার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হল।
এদিন, পূর্ব উপকূলের বালাসোরে সকালে সাড়ে ১০টা নাগাদ দেশের প্রথম সারির ফাইটার জেট সুখোই-৩০ এমকেআই থেকে এই আকাশ থেকে ভূমি (এএসএম) ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়।
শব্দের চেয়ে দুগুণ বেগে যেতে সক্ষম রুদ্রম-১ ক্ষেপণাস্ত্রটি নিমেষের মধ্যে শত্রুর যে কোনও রেডার ও রেডিয়েশন-নির্ভর নজরদারি ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। এমনকী, মিসাইল নিক্ষেপ হওয়ার পরে যদি রেডার বন্ধ করা দেওয়া হয়ও, তাহলেও রেডিয়েশন সিগনেচার চিহ্নিত করতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র।
জানা গিয়েছে, মাটি থেকে ৫০০ মিটার উচ্চতা দিয়ে উড়তে সক্ষম রুদ্রম। এর ফলে, শত্রুর রেডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনাও কম। পাশাপাশি, এটি ২৫ কিমি উচ্চতা দিয়েও উড়ে যেতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা হল ২৫০ কিমি।
এরপরই ট্যুইট করে ডিআরডিও-কে অভিনন্দন জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি লেখেন, দেশের প্রথম নতুন প্রজন্মের অ্যান্টি রেডিয়েশন মিসাইল (এনজিএআরএম) তৈরি করেছে ডিআরডিও। ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জে প্রয়োগমূলক পরীক্ষা করা হয়।
The New Generation Anti-Radiation Missile (Rudram-1) which is India’s first indigenous anti-radiation missile developed by @DRDO_India for Indian Air Force was tested successfully today at ITR,Balasore. Congratulations to DRDO & other stakeholders for this remarkable achievement.
— Rajnath Singh (@rajnathsingh) October 9, 2020
সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, এই ক্ষেপণাস্ত্রকে সুখোই-৩০ এমকেআই-এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ, এই যুদ্ধবিমানের ক্ষমতা রয়েছে হরেক রকমের মিসাইল ও ক্ষেপণাস্ত্রকে নিক্ষেপ করার।
ভবিষ্যতে এই মিসাইলকে সুখোইয়ের পাশাপাশি, মিরাজ-২০০০, জাগুয়ার, তেজস ও তেজস মার্ক-২ বিমানের থেকেও নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে। ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন প্রায় ১৪০ কেজি।
জানা গিয়েছে, শত্রু-টার্গেট ধ্বংস করার জন্য রুদ্রম-১ ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে প্যাসিভ হোমিং হেড সহ দেশীয় জিপিএস নেভিগেশন সিস্টেম। যেকোনও রেডিয়েশন টার্গেটকে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম রুদ্রম। প্যাসিভ হোমিং হেড-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি চিহ্নিত করতে পারে রুদ্রম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে বড় হাতিয়ার প্রমাণ হতে পারে। কারণ, শত্রু-রেডার ধ্বংস করে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকেজো করে দিতে সক্ষম এই মিসাইল।
ডিআরডিও-র তরফে জানানো হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ভারতের হাতে বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য দূরপাল্লার রেডার-বিধ্বংসী মিসাইল তৈরি করতে সক্ষম ভারত।
এর আগে, গত বছর, দেশের প্রথম অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল (এ-স্যাটএম) সফলভাবে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে ভারত। ওই ক্ষেপণাস্ত্র উপগ্রহ কক্ষপথে থাকা শত্রু-পক্ষের সামরিক ও স্পাই স্যাটেলাইট ধ্বংস করতে সক্ষম।
সম্প্রতি, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমন্সট্রেটর ভেহিকল (এইচএসটিডিভি)-এর সফল উৎক্ষেপণ করে ভারত। এটি ভবিষ্যতে অধিক-উচ্চগতি (হাইপারসনিক) এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে পেটে ভরে অনেকটা দূর পর্যন্ত বহন করতে সক্ষম এই বিশেষ যান।
সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন এদিনের রেডার-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।