Goa Assembly Poll Result 2022 : ২১-র মাঝ থেকেই ক্রিজ কামড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় , সৈকত-রাজ্যে ফুটবে কি জোড়াফুল?
Goa Assembly Poll Result 2022 : ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন লুইজিনহো। তাঁকে সামনে রেখেই গোয়াতে ঘাসফুল ফোটানোর স্বপ্ন দেখে তৃণমূল।
কলকাতা : বঙ্গ জয়ের হ্যাটট্রিকের পর ২০২১-এ গোয়াতে রাজনৈতিক তত্পরতা বাড়ায় এ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। কিন্তু গোয়ার মানুষ কী বলছেন? গোয়ানিজরা কাকে চাইছেন? কাকেই বা চাইছেন না! তার উত্তর মিলবে বৃহস্পতিবারই। গোয়ায় মোট বিধানসভা আসন ৪০টি। ম্যাজিক ফিগার ২১।
এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ল্যান্ডস্লাইড ভিকট্রির পর থেকেই সৈকত শহরের দিকে নজর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । গত অক্টোবরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে বলেন, '১০ বছর ধরে গোয়ার মানুষ ভোগান্তির শিকার। আমরা একসঙ্গে নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে নতুন ভোরের সূচনা করব, যা গোয়ার জনগণের সরকার হবে এবং তাঁদের সমস্ত দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। '
বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে কংগ্রেস ছাড়েন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফালেইরো। নাভেলিমের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন ৭১ বছরের এই প্রবীণ নেতা। জল্পনা বাড়িয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাও করতে শোনা যায় তাঁকে। তারপরই ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন লুইজিনহো। তাঁকে সামনে রেখেই গোয়াতে ঘাসফুল ফোটানোর স্বপ্ন দেখে তৃণমূল।
২০২১ এর শেষাশেষি থেকেই সৈকত রাজ্যে রাজনৈতিক তত্পরতা বাড়ায় তৃণমূল। গোয়ায় ঘাঁটি করেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, সৌগত রায়, মানস ভুঁইয়া ও বাবুল সুপ্রিয়রা । গোয়ায় সক্রিয় ছিল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকও। গোয়ায় বারে বারে তৃণমূলনেত্রী একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি করেন। গোয়ায় গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ' এখানে বিধানসভা আসন ৪০টি। দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তিন মাসে গোয়ায় জোড়াফুল ফুটবে।' সমুদ্র শহরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘আমি বহিরাগত নই, আমিও গোয়ার সন্তান। আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সব জায়গায় যেতে পারি'
কংগ্রেসকেও ছেড়ে কথা বলেননি মমতা । বলেন, ' গোয়ায় গতবার বিজেপি সরকার গড়েছিল। তার কারণ ওরা নিজেদের বিধায়কদের ধরে রাখতে পারেনি। এরপর কীভাবে ওদের ওপর বিশ্বাস রাখা যায় বলুন? ' পাল্টা কংগ্রেস প্রশ্ন তোলে, কংগ্রেস ছাড়া বিরোধী জোটের কথা বলে আদতে কাকে খুশি করতে চাইছে তৃণমূল? কংগ্রেস ভাঙিয়ে কার সুবিধা করে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ভিন রাজ্যে জমি তৈরি করতে চাইলে কেন বিজেপিকে ভাঙাচ্ছে না তৃণমূল? কেন শুধু বেছে বেছে শুধু কংগ্রেসকে দুর্বল করতে চাইছে তারা? কার ইশারায় এই কাজ করা হচ্ছে? পাল্টা তৃণমূলের দাবি মানুষের কাছে এখন একমাত্র গ্রহণযোগ্য মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলার ভোটের মতোই, প্রচারে গিয়ে সৈকত রাজ্যের মানুষের এক্কেবারে কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি। পানাজি-র মাণ্ডবী নদী তীরবর্তী মালিম জেটিতে গিয়ে কথা বলেন তৃণমূল নেত্রী। জানতে চান সমস্যার কথা। মালিম জেটি বাজারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই ওঠে খেলা হবে স্লোগান। গোয়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি দুর্গাপুজো করি, গণেশ চতুর্থী পালন করি। আবার রমজানেও থাকি। ২৪ ডিসেম্বর রাতে চার্চে গিয়ে প্রার্থনাও করি। তৃণমূল বিভেদের রাজনীতি করে না। আর যারা করে তাদের সঙ্গে সমঝোতাও করে না।’’
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী , গোয়ায় প্রায় ৬৭ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, প্রায় ২৫ শতাংশ খ্রিষ্টান, মুসলিম ৮ শতাংশ - এই প্রেক্ষাপটে গোয়ায় দাঁড়িয়ে TMC নামের নতুন ব্যাখ্যাও দিতে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন , তৃণমূল মানে টেম্পল (মন্দির), মস্ক (মসজিদ), চার্চ (গির্জা)।
যদিও গোয়ায় বিজেপি অবশ্য তৃণমূলকে গোয়ায় রাজনৈতিক পর্যটক হিসাবেই দেখেছে! তাঁদের বিভিন্ন মন্তব্যেই সেটা প্রকাশ পেয়েছে। গোয়ায় তৃণমূলে যোগ দেন, কংগ্রেসের নাফিসা আলি, টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজও। বিজেপি শাসিত গোয়ায় দাঁড়িয়ে বারবার বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'খুব তাড়াতাড়ি বিজেপিকে ব্ল্যাকলিস্টেড করে দেব। উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরায় আমাদের যেতে দেওয়া হয় না। কিন্তু এভাবে আটকানো যাবে না। দিল্লির দাদাগিরি চলবে না'
গোয়ায় এবার বিজেপির প্রাক্তন জোটসঙ্গী মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি বা MGP-র সঙ্গে নির্বাচন পূর্ববর্তী জোট করে ঘাসফুল শিবির। ২০১৭ সালের গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে ১১ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি। ২০১২ সালেও গোয়াতে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিল তৃণমূল। নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উইলফ্রেড ডি’সুজা। গোয়া বিধানসভার ৪০টি আসনের মধ্যে, ২০-টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তারা। প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ১ দশমিক ৮১%।
এবার সেখানে কী হবে? বিজেপি কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? না ক্ষমতায় আসবে বিরোধীরা? গোয়ায় তৃণমূল কোনও ছাপ ফেলতে পারে কি না, তার উত্তর সময়ই দেবে।