Indira Gandhi Death Anniversary: ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষণ, প্রিয়ঙ্কাকে কাছছাড়া করতে না চাওয়া, আগেই কি মৃত্যুর আভাস পেয়েছিলেন ইন্দিরা?
Remembering Indira Gandhi: ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন থাকাকালীনই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় ইন্দিরাকে।
নয়াদিল্লি: প্রতিবছরের মতো এবছরও মৃত্যুবার্ষিকীতে ঠাকুমা ইন্দিরা গাঁধীকে শ্রদ্ধার্ঘ জানালেন কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধী। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাহুল লেখেন, দেশের ঐক্য, জাতীয় অখণ্ডতার জন্য যে বলিদান দিয়েছেন ইন্দিরা, তা জনসেবামূল কাজে আজও অনুপ্রেরণা জোগায় তাঁকে। আর রাহুলের এই বার্তাতেই ইন্দিরার স্মৃতি ফিরে এসেছে। মৃত্যুর আগে শেষ ভাষণে দেশের ঐক্য, অখণ্ডতার কথাই বলতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। (Indira Gandhi Death Anniversary)
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন থাকাকালীনই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় ইন্দিরাকে। কিন্তু তাঁর মৃত্যু যে ঘনিয়ে এসেছে, তা কি আগেই বুঝে গিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী? কিছু ঘটনা এই প্রশ্নের উদ্রেক করে। সম্প্রতি প্রকাশিত 'My Years with Rajiv Gandhi-Triumph and Tragedy' বইয়ে প্রাক্তন IAS অফিসার ওয়াজাহত হাবিবুল্লা সেই ঘটনাক্রমের কথা উল্লেখ করেছেন। মৃত্যুর দু'দিন আগে ইন্দিরার ৯০ মিনিটের একটি ভাষণের কথা তুলে ধরেন তিনি, যা আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত করে। (Remembering Indira Gandhi)
মৃত্যুর দু'দিন আগে, ২৯ অক্টোবর ওড়িশার ভুবনেশ্বরে শেষ বার বক্তৃতা করেন ইন্দিরা। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আমি আজ আছি, কাল হয়ত থাকব না। দেশের স্বার্থরক্ষার দায়িত্ব প্রত্যেক ভারতীয়র কাঁধে ন্যস্ত। আগেও বহু বার বলেছি। না জানি কত বার আমাকে গুলি করার চেষ্টা হয়েছে, আমাকে মারতে লাঠিও ব্যবহার করা হয়েছে। ভুবনেশ্বরেই পাথর উড়ে এসে আঘাত করেছে। সব রকম ভাবে আমাকে আঘাত করা হয়েছে। বাঁচা-মরা নিয়ে কোনও পরোয়া করি না আমি। আমি এই দেশকে নিয়ে গর্ববোধ করি। শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে পর্যন্ত দেশের সেবা করে যাব। আমার রক্তের প্রতিটি বিন্দু ভারতে উজ্জীবীত করবে, শক্তিশালী করবে।"
ভুবনেশ্বরে ইন্দিরার সঙ্গেই ছিলেন হাবিবুল্লা। তিনি জানান, ইন্দিরা বেশ মনমরা ছিলেন। ওই ভাষণের কয়েক দিন আগেও ইন্দিরা লেখায় মৃত্যুর কথা উঠে এসেছিল। ইন্দিরা লিখেছিলেন, যদি হিংসার বলি হন তিনি, হিংসার কথা উঠলে যেন হত্যাকারীর নামই ওঠে, তাঁর মৃত্যু নয়। ইন্দিরার বক্তব্য ছিল, ঘৃণা যতই নিকষ অন্ধকার ডেকে আনুক না কেন, তা দেশের প্রতি তাঁর ভালবাসাকে ঢাকতে পারবে না। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর যে প্রচেষ্টা, তা থেকে নজর ঘোরাতে পারবে না কোনও শক্তি।
শুধু হাবিবুল্লার লেখাতেই নয়, ইন্দিরা মৃত্যুর আভাস পেয়েছিলেন বলে আরও একাধিক লেখালেখিতে উঠে এসেছে। জানা যায়, বাড়িতেও সকলকে ইন্দিরা বুঝিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে যেন কান্নাকাটি না হয়, বলে রেখেছিলেন। ৩০ অক্টোবর রাতভর ঘুমাননি ইন্দিরা। সনিয়া গাঁধী রাতে ওষুধু খেতে উঠলে, ইন্দিরার সঙ্গে কথা হয় তাঁর। ৩১ অক্টোবর সকালে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী স্কুলে যাওয়ার তোড়জোড় করছিলেন যখন, কিছুতেই তাঁকে ছাড়তে চাইছিলেন না ইন্দিরা। তাঁর কিছু হয়ে গেলে যেন কান্নাকাটি না করেন, রাহুল গাঁধীকেও ডেকে বোঝান।
ওই দিন সকাল ৭.৩০টা নাগাদ নিজের দফতরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান ইন্দিরা। পরনে ছিল কালো পাড়ের গেরুয়া শাড়ি। খাওয়া-দাওয়া সেরে সকাল ৯টা বেজে ১০ মিনিটে বেরোন। প্রচণ্ড রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা নিয়ে সঙ্গে হাঁটছিলেন সৈনিক নারায়ণ সিংহ। সঙ্গে ছিলেন আরকে ধওয়নও। বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন তাঁরা। সেই সময় ইন্দিরার দেহরক্ষী বিয়ন্ত সিংহ রিভলভার বের করে ইন্দিরাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন। একটি গুলি ইন্দিরার পেটে লাগে। এর পর বুকে, কোমরে গুলি লাগে। আর এক দেহরক্ষী সতওয়ন্ত অটোমেটিক কারবাইন থেকে ইন্দিরাকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালান, যার মধ্যে ২৫টি গুলি ইন্দিরাকে ঝাঁঝরা করে দেয়। ইন্দিরাকে লক্ষ্য করে মোট ৩৩টি গুলি ছোড়া হয়, যার মধ্যে ৩০টি তাঁকে বিদ্ধ করে। ২৩টি গুলি শরীর এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়। সাতটি গেঁথে ছিল শরীরে।