International Tiger Day 2023: দেশের ক্রমাগত বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি একইসঙ্গে আনন্দ ও উদ্বেগের কারণ, কেন একথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা ?
Tigers' Number Increased : দিন দিন বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। অনেক সময় এই পশুদের বাসস্থান লোপ পেয়ে গেছে।
নয়াদিল্লি : 'সবে ধন নীলমণি !' বাঘ একটিই, কিন্তু পর্যটক বহু। খোলা জিপে সওয়ার। একে অপরকে চুপ করতে বলছেন । যাতে হাতের দূরবীণ বা ক্যামেরাটা চেপে ধরে রাখতে মনযোগে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে। আর তা করতে গিয়ে বাঘের সঙ্গে বিপজ্জনক দূরত্বে চলে আসা। অতি পরিচিত এই দৃশ্য অসংখ্যাবার দেখা গেছে সোশাল মিডিয়ায়। এই দৃশ্য হয় রণথম্বর বা করবেটে, তাডোবা বা কানহার। যেখানে মানুষ আর পশুর মধ্যে এই পারস্পরিক সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে।
দিন দিন বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। অনেক সময় এই পশুদের বাসস্থান লোপ পেয়ে গেছে। যার জেরে প্রায়শই মানুষ বাঘের খুব কাছাকাছি চলে আসছে। দেশের ক্রমাগত বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে- উন্নতি ও বাস্তুতন্ত্র। অর্থাৎ একদিকে উন্নয়নের উদযাপন, তো অন্যদিকে বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্যহীনতা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্রদিবস উপলক্ষে এমন কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২২-এর বাঘ সুমারি অনুসারে, ৩ হাজার ১৬৭টি বাঘ রয়েছে এদেশে। যা বিশ্বব্যাপী সংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশ। এক সময়ের অধরা উজ্জ্বল কমলা পশম এবং স্বতন্ত্র আওয়াজের গর্জন এখন আর বিরল নয়। সংরক্ষণের একটি অসাধারণ গল্প রচনা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৫০ বছর আগেই ১৯৭৩ সালে 'প্রোজেক্ট টাইগার' নামে। যখন বাঘের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৬৮। বণ্যপ্রাণীর চৌকাঠে ক্রমাগত যাতায়াত বেড়েছে মানুষের, শিকার অবশ্য কমেছে। ভারতে বনাঞ্চলের গুণগতমান কমছে এবং নীতির বিভিন্ন পরিবর্তন হয়েছে। যা লাভজনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বন্যপ্রাণ সংরক্ষণবিদ প্রেরণা বিন্দ্রা সংবাদ সংস্থা PTI-কে বলেন, 'আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়া এবং অন্যান্য চাপ সত্ত্বেও বাঘ সংরক্ষণের এই কৃতিত্ব সহজে আসেনি। 'প্রোজেক্ট টাইগারের' সূচনার পর থেকে যে প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। এ ব্যাপারে গর্ব করা যায় যে, ভারতে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, যদিও দুর্ভাগ্যবশত কিছু দেশে তা বিলুপ্তপ্রায়। দেশের মানুষের সহ্যশক্তি আমাদের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, কড়া আইন ও নিয়মের পরিকাঠামো। যা বিশ্বের অন্যতম।' যদিও সাম্প্রতিককালে ১৯৮০-র ফরেস্ট কনসারভেশন অ্যাক্ট সংশোধনের প্রস্তাবনার তিনি সমালোচনা করেছেন।
যদিও অন্য যুক্তি দিচ্ছেন ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সিনিয়র বিজ্ঞানী কামার কুরেশি। তাঁর মতে, 'পরিবেশগত দিক দিয়ে আমাদের উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। মহাসড়ক তৈরির সময়, আমরা এখন বাঘ এবং অন্যান্য প্রাণীদের যাওয়ার জন্য নিরাপদ পথ তৈরি করার কথা ভাবছি। এটি ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে।' এক্ষেত্রে তিনি উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের পরিকাঠামোমূলক প্রকল্পের উদাহরণ তুলে ধরেছেন।
'প্রোজেক্ট টাইগার'-এর ৫০ বছরের একটি সরকারি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ) এটা নিশ্চিত করেছে যে কোনও টাইগার করিডোরে জমির ব্যবহার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জাতীয় বন্যপ্রাণী বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন।
যদিও মানুষের নাক গলানোর জেরে শিকারি-শিকার অনুপাতেও ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এবং প্রাক্তন ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার ডিন ওয়াই ভি ঝালা বলছেন, ভারসাম্য স্বাভাবিকভাবেই বাঘের মত শিকারি প্রাণীদের উপর নির্ভর করে। যেখানে তারা শিকার-প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, গত সুমারির থেকে এবারে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। ২০১৮ সালে এ দেশে বাঘ ছিল ২ হাজার ৯৬৭টি। তবে, বাঘের বাস্থস্থান-যোগ্য জায়গা কমে গেছে। পশ্চিমঘাট, উত্তর পূর্ব পাহাড় এবং ব্রহ্মপুত্র সমতুলভূমিতে জায়গা হ্রাস পেয়েছে। এই জায়গাগুলি বাঘের বসবাসযোগ্য জায়গা কমে যাওয়ার কারণ, মানুষের কার্যকলাপ বৃদ্ধি। এর সঙ্গে রয়েছে- শিকার, অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্য, মানব-বন্যপ্রাণী সংঘর্ষ এবং আক্রমণাত্মক প্রজাতি। ২০২২-এর পরিসংখ্যান এমনই বলছে। তবে সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে দেশের ৯টি রিজার্ভে ১৮ হাজার ২৭৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় থাকত বাঘ। তা এখন বেড়ে হয়েছে ৫৩টি। যা ছড়িয়ে রয়েছে ৭৫.৭৯৬.৮৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায়। যা দেশের ভৌগলিক এলাকার ২.৩ শতাংশ জুড়ে ছড়িয়ে।