Jagdeep Dhankhar Resignation: মোদি সরকারের সঙ্গে সংঘাত চরমে ওঠাতেই কি ইস্তফা জগদীপ ধনকড়ের ? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে
Vice President's Resignation : সারাদিন রাজ্য়সভা পরিচালনা করার পর, হঠাৎই রাতে ঘোষণা করলেন স্বাস্থ্য়ের কারণে তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন।

নয়াদিল্লি : যিনি ১০ দিন আগেও বলেছিলেন, "যদি ঈশ্বর হস্তক্ষেপ না করেন, আমি সঠিক সময়ে অবসর নেব।সেটা অগাস্ট ২০২৭।" সেই জগদীপ ধনকড় সোমবার সারাদিন রাজ্যসভা পরিচালনা করার পর হঠাৎ করে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ইস্তফা দিলেন। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতের কারণেই কি ইস্তফা দিলেন জগদীপ ধনকড়? সরকারের শীর্ষস্তর থেকেই কি তাকে ইস্তফার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? এরকমই জল্পনা ঘোরাফেরা করছে রাজনীতির অলিন্দে।
২০২৭ সালে উপ রাষ্ট্রপতি হিসাবে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল জগদীপ ধনকড়ের। কিন্তু, দু'বছর আগে আচমকাই ইস্তফা দিলেন তিনি। তাও আবার সারাদিন রাজ্য়সভা পরিচালনা করার পর, হঠাৎই রাতে ঘোষণা করলেন স্বাস্থ্য়ের কারণে তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ করে এমনটা কীভাবে সম্ভব! এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সৈয়দ নাসির হুসেন বলেছেন, "উনি নিজে ইস্তফা দিয়েছেন নাকি ওঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে? সেটা মানুষের সামনে আসা উচিত।"
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন, মোদি সরকারের সঙ্গে সংঘাত চরমে ওঠাতেই কি উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে আচমকা পদত্য়াগ করতে বাধ্য় হলেন জগদীপ ধনকড় ? সূত্রের দাবি, দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা, যাঁর বাড়ি থেকে প্রচুর টাকা উদ্ধার হয়েছিল, তাঁর ইমপিচমেন্ট ঘিরে ধনকড়ের ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিল না সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। দিল্লির রাজনৈতিক অলিন্দে জল্পনা, বিচারপতি ভার্মার ইমপিচমেন্টের বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে ‘ব্যবহার’ করতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তাতে কার্যত জল ঢেলে দেন ধনকড়।
সোমবার বিচারপতির অপসারণের দাবিতে রাজ্য়সভায় বিরোধীদের তরফে একটি প্রস্তাব জমা পড়ে। চেয়ারম্যান হিসাবে ধনকড় তা গ্রহণ করে উচ্চকক্ষের সেক্রেটারি জেনারেলকে পাঠান। সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই রাজ্য়সভায় বিরোধীদের নোটিস গ্রহণ করে নেন জগদীপ ধনকড়। যা ভালভাবে নেয়নি সরকার। এরপর সোমবারই বেলা দেড়টা নাগাদ, রাজ্যসভার বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক ছিল।
সেখানে সভাপতিত্ব করেন জগদীপ ধনকড়। বিরোধীদের পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু এবং রাজ্যসভার নেতা ও বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। কিন্তু ১০ মিনিটেই বৈঠক শেষ হয়ে যায়।
বিকেল সাড়ে চারটেয় ফের বৈঠক ডাকেন ধনকড়। সূত্রের দাবি রিজিজু এবং নাড্ডাকে না জানিয়েই একই দিনে দ্বিতীয়বার বিজনেজ অ্য়াডভাইজারি কমিটির বৈঠক ডাকার ধনকড়ের সিদ্ধান্তকেও ভালভাবে নেয়নি সরকার। নির্ধারিত সময়ে জগদীপ ধনকড়-সহ বাকিরা উপস্থিত হলেও, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু কিংবা জে পি নাড্ডা কেউই আসেননি। পেরেক কার্যত শেষ কফিনের মতোই মঙ্গলবার ফের BA কমিটির বৈঠক ডাকেন ধনকড়। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, এরপরই সরকারের একেবারে শীর্ষ মহল থেকে হস্তক্ষেপ করা হয় এবং শেষ অবধি ধনকড়কে পদত্য়াগ করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর মত, "আমার মনে হয়, বিজেপি পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে ধনকড় সাহেবের কোনও মনোমালিন্য, যেটা ধনকড় সাহেব মানতে পারেননি বলে আমার মনে হয়, ইস্তফা দিয়েছেন।" কংগ্রেসের রাজ্য়সভার সাংসদ জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেছেন, বিকেল সাড়ে চারটেয়, জগদীপ ধনকড়ের সভাপতিত্বে ফের বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক বসে। তখন জে পি নাড্ডা এবং কিরেণ রিজিজুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল। তাঁরা আসেননি। তাই তিনি (জগদীপ ধনকড়) ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ১টায় BAC-র বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়।
যদিও জেপি নাড্ডা জানিয়েছেন, মন্ত্রীরা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তা আগেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে (জগদীপ ধনকড়) জানানো হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ ও রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "বিরোধীরা কী বলছেন জানা নেই। জগদীপ ধনকড়ের প্রতিভা, জগদীপ ধনকড়ের ব্যক্তিত্ব, রাজ্যপাল থাকার সময় তাঁর ভূমিকা, চেয়ারম্যান হিসাবে তাঁর রাজ্যসভায় ভূমিকা প্রত্যেকের জানা। সুতরাং, জগদীপ ধনকড় যখন লিখেছেন তিনি শারীরিক কারণে ইস্তফা দিয়েছেন, তখন এটা নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনার কোনও অবকাশ নেই।"
সব মিলিয়ে জগদীপ ধনকড়ের ইস্তফা ঘিরে এখন জোরাল রহস্য় !






















