Janmashtami 2021: যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়েছিলেন কৃষ্ণ, জন্মাষ্টমীতে রইল পুরাণের অজানা তথ্য
গুজরাটের নানা প্রান্তে আজও শ্রীকৃষ্ণ রণছোড়জী নামে পূজিত হন। রণ অর্থাৎ যুদ্ধ ছেড়ে যিনি পালিয়ে এসেছেন।
![Janmashtami 2021: যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়েছিলেন কৃষ্ণ, জন্মাষ্টমীতে রইল পুরাণের অজানা তথ্য Janmashtami 2021 Lord Shree Krishna Unknown mythological facts need to know Janmashtami 2021: যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়েছিলেন কৃষ্ণ, জন্মাষ্টমীতে রইল পুরাণের অজানা তথ্য](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/08/28/9631001574c017b9a40d2b44f99aee77_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রান্তর। কৌরব এবং পাণ্ডবরা সম্মুখসমরে। কৌরব বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং পিতামহ ভীষ্ম। তাঁর সঙ্গে সামনের সারিতে রয়েছেন দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্য, কর্ণ, দুর্যোধন ও ভাইয়েরা। পাণ্ডব পক্ষের সামনের সারিতে রয়েছেন পঞ্চভ্রাতা। যাঁদের কোলে-পিঠে চড়ে বড় হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। এ কেমন যুদ্ধ। অস্ত্র ত্যাগ করে বসে পড়লেন অর্জুন। সারথি শ্রীকৃষ্ণ রথ টেনে নিয়ে এলেন দু'পক্ষের মাঝখানে। সখা অর্জুনকে বোঝালেন ধর্মযুদ্ধের চেয়ে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে শ্রেয়স্কর কিছু নেই। উন্মুক্ত স্বর্গদ্বার আপনা থেকেই উপস্থিত হয়েছে। এই যুদ্ধ না করলে স্বধর্মে পতিত হতে হবে। যদি নিহত হন তবে স্বর্গলাভ। জয়ী হলে রাজ্য ভোগের অধিকার। অতএব হে কৌন্তেয় গাত্রত্থান কর। সুখ-দুঃখ, লাভ-অলাভ, জয়-পরাজয় সমান জ্ঞান করে যুদ্ধে নিযুক্ত হও। এই ভাবে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করলেন।
শ্রীমদ্ ভাগবত এর দশম স্কন্দ পুরোটাই শ্রীকৃষ্ণের জীবনগাথা। শ্রীকৃষ্ণ কংসকে বধ করার পর কংসের শ্বশুর মগধরাজ জরাসন্ধ জামাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে বারবার মথুরা আক্রমণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে প্রতিবারই যুদ্ধে পরাস্ত করেন। জরাসন্ধ তবুও উদ্যম হারান না। এইভাবে ১৭ বার যুদ্ধে পরাজিত হবার পর আবারও আক্রমণ করলেন তিনি। এবার সামনে রাখলেন কালযবন নামে এক যোদ্ধাকে যিনি ব্রহ্মার বরে যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাজেয়। চিন্তিত হলেন কৃষ্ণ, বলরাম। তাঁরা যুক্তি করে দেখলেন একই সঙ্গে যদি মগধ রাজ আক্রমণ করেন তাহলে মথুরাবাসী না হয় যুদ্ধে নিহত হবেন নয়তো বন্দি হবেন। মথুরাবাসীকে রক্ষা করার জন্য তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং কালযবনকে কৌশলে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোথাও হত্যা করতে হবে। মথুরা হল আজকের উত্তরপ্রদেশের অংশ। জরাসন্ধ মগধের রাজা যা কিনা আজকের বিহার রাজ্যে অবস্থিত। তাই সুদূর পশ্চিমে দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বকর্মাকে দিয়ে এক নতুন নগর স্থাপন করালেন। যোগ বলে সেখানে প্রত্যেক মথুরাবাসীকে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর সুকৌশলে কালযবন কে বিভ্রান্ত করে তাঁকে মেরে ফেললেন। কালযবনের সৈন্যবাহিনী রাজাকে হারিয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল। তখনই জরাসন্ধ এসে হাজির হলেন মথুরায়। তাঁকে আসতে দেখে কৃষ্ণ- বলরাম সবকিছু ছেড়ে পালাতে লাগলেন। এবার জরাসন্ধ তাঁদের পিছন পিছন রথে চড়ে তাড়া করলেন। এইভাবে অনেকটা দৌড়ে কৃষ্ণ এবং বলরাম প্রবর্ষণ পর্বতে আশ্রয় নিলেন। জরাসন্ধ সেই পাহাড়ের নিচে এসে আগুন জ্বালিয়ে দিলেন। কোনোক্রমে কৃষ্ণ বলরাম সেখান থেকে গোপনে পালিয়ে গেলেন। দুই ভাই নিহত হয়েছেন মনে করে বিজয় গর্বে ফিরে গেলেন জরাসন্ধ। এবার মথুরা ছেড়ে কৃষ্ণ এসে আশ্রয় নিলেন দ্বারকায়। দ্বারকা আজকের গুজরাট রাজ্যের অন্তর্গত। এই গুজরাটের নানা প্রান্তে আজও শ্রীকৃষ্ণ রণছোড়জী নামে পূজিত হন। রণ অর্থাৎ যুদ্ধ ছেড়ে যিনি পালিয়ে এসেছেন।
কিন্তু কেন এমন করলেন কৃষ্ণ? যে জরাসন্ধকে আগে ১৭ বার পরাস্ত করেছেন, ১৮ তম বার কেন তাঁর সামনে থেকে যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন তিনি। তবে কি এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে। শ্রীমদ্ভাগবতই জানাচ্ছে এই সময়ে কৃষ্ণের হাতে এসে পড়েছিল রুক্মিণীর গোপন বার্তা। রুক্মিণীর বাবা বিদর্ভের রাজা ভীষ্মক কৃষ্ণের সঙ্গে রুক্মিণীর বিবাহে রাজি থাকলেও রুক্মিণীর দাদা তাতে সম্মত ছিলেন না। তাঁর ইচ্ছে ছিল চেদিরাজ শিশুপাল এর সঙ্গে বোনের বিবাহ দেবেন। সেই মত বিবাহ ঠিক হলে রুক্মিণী গোপনে দূত পাঠালেন কৃষ্ণের কাছে। যাতে কৃষ্ণ এসে বলপূর্বক অপহরণ করে উদ্ধার করেন। এই সংবাদ যখন কৃষ্ণের কাছে পৌঁছল তিনিও আকুল হলেন রুক্মিণীর প্রতি। এই সময়ে জরাসন্ধের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলে দেরি হয়ে যেত। রুক্মিণীর বিয়ে হয়ে যেত চেদিরাজ শিশুপাল এর সঙ্গে। তাই রুক্মিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষ্ণ যুদ্ধ ছেড়ে এসে তাঁকে হরণ করলেন এবং স্ত্রীর মর্যাদা দিলেন। গবেষক দীপঙ্কর বসুর মতে, “ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে ভগবান নিজের ওপর অখ্যাতির গ্লানি টেনে নিলেন। যে জরাসন্ধ কে তিনি ১৭ বার যুদ্ধে হারিয়েছেন তাকেই এবার রণক্ষেত্র ছেড়ে দিয়ে ‘রণছোড়’ নাম নিলেন কৃষ্ণ।” তবে এটা মনে হতেই পারে সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনীকে উদ্ধার করা যুদ্ধের চেয়েও বড় কর্তব্য মনে করেছিলেন।
নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ির মতে, “গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে যে উপদেশ দিয়েছেন তাতে যুদ্ধের থেকেও বেশি কর্ম করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ক্ষত্রিয়ের ধর্ম যুদ্ধ করা। সেই যুদ্ধ করতেই অর্জুনকে উদ্বুদ্ধ করেছেন কৃষ্ণ।” তাঁর মতে, “কৃষ্ণের এরকম যুদ্ধ ছেড়ে পালানো একবার নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ভাবে পালিয়েছেন তিনি। তবে সেটা একেবারেই স্ট্র্যাটেজিক কারণে। প্রথমে পিছিয়ে এসে পরে আবার জয় করে নিয়েছেন। ‘রণছোড়জী’ তাঁর এক ধরণের লীলা। রাজনীতি, কূটনীতি হোক বা গোপিনীদের সঙ্গে প্রেম। সবেতেই কৃষ্ণ তুখোড় কৌশলী।” এভাবেই শ্রীকৃষ্ণ আমাদের শেখালেন বড় কিছু অর্জন করতে গেলে কখনো কখনো কিছু জিনিস ছাড়তে হয়। সব সময় পরাজয়টাই শেষ কথা হয় না। পরাজয়ের মাধ্যমে আরও অনেক কিছু জিতে নেওয়া যায়।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)