অন্য ভূমিকা, রক্ত দিয়ে প্রসূতির জীবন রক্ষা চিকিৎসকের
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে প্রাণ বাঁচাতে নামেন খোদ চিকিৎসক। অপারেশন থিয়েটার থেকেই চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন তিনি নিজেই রক্ত দেবেন। ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজেই রক্ত দেন। সেই রক্ত দেওয়ার পর নিজেই তা নিয়ে আসেন।
রানা দাস, কাটোয়া: প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মাঝেমাঝেই গাফিলতির অভিযোগ ওঠে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। এবার চিকিৎসক নিজেই রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচালেন এক প্রসূতির। ঘটনা কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের। হাসপাতালের চিকিৎসক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় নিজেই অস্ত্রোপচার করেন। শিশুর জন্মের পর ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দেন তিনি। সেই রক্ত নিজেই হাতে করে নিয়ে এসে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন সদ্যোজাত শিশুর মায়ের।
মুর্শিদাবাদ জেলার সালারের বাসিন্দা বছর ২৯ এর মধুমিতা হাজরা। শনিবার ভোর তিনটে নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। হাসপাতাল থেকে স্ত্রী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে মধুমিতা হাজরার। কাটোয়া ব্লাড ব্যাঙ্কে ফোন করে এ পজিটিভ তিন বোতল রক্ত চাওয়া হয়। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়, তাদের কাছে মাত্র দু’বোতল রক্ত রয়েছে। দু’বোতল রক্ত দেওয়ার পরেও প্রসূতি শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। প্রসূতির দুটো কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: WB Election 2021: বিজেপি প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ, কোনও পরিবর্তন নয়, কড়া বার্তা সায়ন্তনের
সে সময়ে পরিবারের সদস্য বলতে ছিলেন এক মহিলা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে প্রাণ বাঁচাতে নামেন খোদ চিকিৎসক। অপারেশন থিয়েটার থেকেই চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিজেই রক্ত দেবেন। ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজেই রক্ত দেন। সেই রক্ত দেওয়ার পর নিজেই তা নিয়ে আসেন। এরপর সেই রক্ত দেওয়া হয় প্রসূতিকে। চিকিৎসক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, সেই মুহূর্তে এক বোতল রক্ত পাওয়া না গেলে প্রসূতিকে বাঁচানো যেত না। তাই তখন একটা কথাই মাথায় ছিল যে প্রসূতিকে বাঁচাতে হবে। রক্তদাতা খোঁজার মতো সময় ছিল না। তাই নিজেই রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
মধুমিতা হাজরার পরিবারের সদস্যরা জানান সাতসকালে রক্তদাতা জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব ছিল। উল্লেখ্য, মাসখানেক আগে এই কাটোয়া হাসপাতাল থেকে প্রসূতিদের ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। আর কয়েকদিন আগে এক প্রসূতিকে হাসপাতালের বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রসূতি গাছতলাতে প্রসব করেন এক পুত্র সন্তান। সেই নিয়ে হইচই পড়ে যায়। স্বাস্থ্য দফতর তার তদন্ত শুরু করেছে। আর সেই হাসপাতালের চিকিৎসক রক্ত দিয়ে মুখ রাখলেন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসকদের।