Satipith: 'মন্দিরে কোনও মুসলিম কর্মী রাখা যাবে না', ঐতিহ্যপূর্ণ মাইহারের সতীপীঠে জারি ফতোয়া
Madhyapradesh Temple: ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মা সারদা মন্দির কমিটির অধীনে কাজ করছেন দু'জন মুসলিম। তাঁদের না সরানোয় মার্চ মাসের শেষে ফের চিঠি পাঠিয়ে সরকারি নির্দেশিকা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার মাইহার একদিকে সতীর একান্ন পীঠ হিসেবে বিখ্যাত অন্য দিকে ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের অন্যতম ঘরানা সৃষ্টি হয়েছে এই মাটিতেই। এখানকার দেবী সারদার মন্দিরে সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য বাবা আলাঊদ্দিনের সুর-ঝংকারে গড়ে উঠেছিল তা এক সরকারি নির্দেশিকায় প্রশ্নের মুখে। এই সম্প্রীতির ঐতিহ্য একদিনে গড়ে ওঠেনি। শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদ নিয়ে আলাউদ্দিন ভাগ্যান্বেষণে মাইহার যান। সেখানে রাজ দরবারে তাঁর ঠাঁই হয়। মাইহার রাজসভায় উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সৃষ্টি করেছিলেন মাইহার ঘরানা ।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে এই ঘরানার শিল্পী হিসেবে পন্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ আলি আকবর খান, অন্নপূর্ণা দেবী, পন্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এই মন্দিরের এক হাজার তেষট্টিটি সিঁড়ি বেয়ে উঠে দেবী সারদার সামনে বসে নানান রাগ বাজিয়ে শোনাতেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব। সুরের মুর্চ্ছনায় মুগ্ধ হতেন ভক্ত থেকে সঙ্গীতপ্রেমীরা।
এবার সরকারি নির্দেশে সেই মন্দির থেকে বিতাড়িত হতে হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বী কর্মচারীদের। মধ্যপ্রদেশ সরকারের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বিভাগ থেকে মন্দির প্রবন্ধক কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনও মুসলিম কর্মচারীকে রাখা যাবে না। জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের তরফে মধ্যপ্রদেশের ধর্ম ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ঊষা সিং ঠাকুরের কাছে এই আবেদন জানানো হয়েছিল। তারপরেই ১৭ জানুয়ারি তড়িঘড়ি এই নির্দেশিকা জারি হয়।
অথচ ৫০২ খ্রীষ্টাব্দে গুপ্ত যুগে তৈরি হওয়া মধ্যপ্রদেশের ভোপালের এই মন্দির ছিল সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মা সারদা মন্দির কমিটির অধীনে কাজ করছেন দু'জন মুসলিম। জানুয়ারির ওই নির্দেশিকার পরেও তাঁদের না সরানোয় মার্চ মাসের শেষে ফের চিঠি পাঠিয়ে সরকারি নির্দেশিকা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষকে। একই সঙ্গে শাক্ত ধর্মের পীঠস্থান মা সারদা দেবীর পূণ্য তীর্থ বলে মাইহারে মদ -মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও শাক্ত উপাসনার সঙ্গে মদ ও মাংসের যোগাযোগ দীর্ঘ সময়ের । তবুও জারি হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা।
আরও পড়ুন, 'রুদ্রমূর্তি থেকে সংহাররূপী', কালীর নামেই লুকিয়ে আছে পুরাণের ভয়ঙ্কর সব কাহিনি
মানবদরদী বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব এক মহামারির পর অসংখ্য অনাথ শিশুর দায়িত্ব নেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সঙ্গীতচর্চার মাধ্যমে পরবর্তীকালে তৈরি হয়েছিল 'মাইহার ব্যাণ্ড'। উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবের ঘরে থাকত মা ভবতারিণী, ভগবান কৃষ্ণ এবং প্রভু যিশুর ছবি। তাঁর পুত্র উস্তাদ আলি আকবর খানও সেই ঐতিহ্যকে বহন করেছেন আজীবন। যে মন্দিরের মাকে নিজের তৈরি সুর উৎসর্গ করে শোনাতেন খাঁ সাহেব সেখানেই আজ ধর্মীয় বিদ্বেষের ফতোয়া।