One Nation One Election: চলতি অধিবেশনেই সংসদে পেশ 'এক দেশ এক নির্বাচন' বিল? তৎপরতা তুঙ্গে, সংখ্যায় যদিও সংশয়
Narendra Modi: দিল্লির একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, 'এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে প্রথমে নাগরিকদের মতামত জানতে আগ্রহী কেন্দ্র। এর পরই বিলটি নিয়ে আলোচনা হবে।
নয়াদিল্লি: চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই সংসদে পেশ হতে পারে 'এক দেশ এক নির্বাচন' বিল। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্টে আগেই অনুমোদন দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা। সেই নিয়ে সর্বসম্মতি আদায় করতে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হতে পারে বলে খবর। সেখানে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিলের সঙ্গে যুক্ত অন্যদেরও রাখা হতে পারে বৈঠকে। সব রাজ্যের বিধানসভার স্পিকারদেরও ডাক পড়তে পারে দিল্লিতে। এমনকি সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে খবর। (One Nation One Election)
দিল্লির একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, 'এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে প্রথমে নাগরিকদের মতামত জানতে আগ্রহী কেন্দ্র। এর পরই বিলটি নিয়ে আলোচনা হবে। কারণ বিলটি পাস করাতে বেগ পেতে হতে পারে কেন্দ্রকে। প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল, তাই সর্বসম্মতি আদায় নিয়ে ধন্দ রয়েছে। 'এক দেশ এক নির্বাচন বিল' বিল আইন হিসেবে কার্যকর করতে হলে, আরও ছয়টি সংশোধনী বিল আনতে হবে, সংশোধন করতে হবে দেশের সংবিধান। সেক্ষেত্রে সংসদে দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন পড়বে মোদি সরকারের। (Narendra Modi)
এই মুহূর্তে সংসদের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA-র। কিন্তু এবারের লোকসভা নির্বাচনে আগের সেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই বিজেপি-র। আসন সংখ্যাও কমেছে অনেকটা। বিল পাসের ক্ষেত্রে জোট শরিকদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। সেই কারণে বিল পাস করাতে গেলে রাজ্যসভায় অন্তত ১৬৪ জন সাংসদের সমর্থন পেতে হবে। অথচ সংসদের উচ্চকক্ষে ২৪৫টি আসনের মধ্যে, NDA-র দখলে ১১২, বিরোধীদের দখলে ৮৫টি আসন। অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশ নয়। লোকসভার মোট আসন সংখ্যা যেখানে ৫৪৫, সেখানে NDA-র আসন সংখ্যা ২৯২। দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন পেতে অন্তত ৩৬৪ সাংসদের সমর্থন পেতে হবে।
কিন্তু এক্ষেত্রে পরিস্থিতির উপর সবকিছু নির্ভর করছে। কারণ বিল পাস করানোর ক্ষেত্রে ভোটাভুটিতে কতজন সাংসদ অংশ নিচ্ছেন, কত জন উপস্থিত রয়েছেন সংসদে, তা গুরুত্বপূর্ণ। সংসদে উপস্থিত এবং ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়া সাংসদদের নিরিখে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্ণয় করাও হতে পারে। দেশের সমস্ত নির্বাচন একসঙ্গে করাতে বেশ কয়েক বছর ধরেই সক্রিয় মোদি সরকার। তাদের দাবি, এতে সময়, টাকা বাঁচবে। বার বার নির্বাচন করাতে গিয়ে উন্নয়নের কাজ থমকে থাকবে না। যদিও গোড়া থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A শিবির। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে, বিরোধীদের একেবারে নিকেশ করে ফেলতেই মোদি সরকার 'এক দেশ এক নির্বাচন' আইন চালু করতে চাইছে বলে অভিযোগ তাদের। শুধু তাই নয়, 'এক দেশ এক নির্বাচন' আসলে নির্বাচন তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা বলেও মত বিরোধীদের একাংশের।
লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে প্রথম ধাপে বিধানসভা নির্বাচন এবং দ্বিতীয় ধাপে ১০০ দিনের মধ্যে পৌরসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন করাই লক্ষ্য কেন্দ্রীয় সরকারের। সেই লক্ষ্যে 'এর দেশ এক নির্বাচন' নীতির প্রস্তাব এনেছে তারা। রামনাথ নেতৃত্বাধীন কমিটি যে রিপোর্ট দেয়, তাতে প্রথম ধাপে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনগুলি সেরে ফেলার এবং পরবর্তী ১০০ দিনের মধ্যে পৌরসভা, পঞ্চায়েত স্তরের রাজ্যের স্থানীয় নির্বাচন সেরে ফেলার সুপারিশ করা হয়। এতে অহেতুক খরচ বন্ধ হবে, দেশের শাসন কার্যে বিবর্তন ঘটবে এবং দেশ লক্ষ্যপূরণের পথে এগোতে পারবে বলে জানানো হয়।
যদিও এর তীব্র বিরোধিতা করছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, 'এক দেশ এক নির্বাচন' চালু হলে, রাজ্যের স্থানীয় সমস্যাগুলি উপেক্ষিত থেকে যাবে। একসঙ্গে সব নির্বাচন হলে বড় দলগুলি যে পরিমাণ অর্থ খরচ করবে, তার সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না ছোট দলগুলি। পাশাপাশি, নির্বাচনের পর পর সরকার পড়ে গেলে, কী ঘটবে, সেই নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার উল্লেখ নেই বলেও দাবি বিরোধীদের। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও 'এক দেশ এক নির্বাচন' করানোর প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। কেন্দ্রকে সেই নিয়ে চিঠিও দেন তিনি। তাঁর দাবি, এই নীতি চালু হলে দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এই নীতি ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী। মমতা প্রশ্ন করেন, "এক দেশের ধারণাটা ঠিক কী? ভারতীয় সংবিধান কি 'এক দেশ এক সরকার' নীতিতে চলে?" কংগ্রেস, সিপিএম-সহ অন্য বিরোধী দলগুলিও 'এক দেশ এক নির্বাচন' নীতিকে 'অগণতান্ত্রিক' বলে উল্লেখ করে।
শুধু তাই নয়, 'এক দেশ এক নির্বাচন' নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে যে কমিটি গঠন করা হয়, সেই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কোবিন্দ ছাড়াও ওই কমিটিতে ছিলেন শাহ, রাজ্যসভায় প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা গোলাম নবি আজাদ, অর্থ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এনকে সিংহ, লোকসভা সেক্রেটারি জেনারেল সুভাষ সি কাশ্যম, বর্ষীয়ান আইনজীবী হরিশ সালভে, ভিজিলান্স কমিশনের প্রাক্তন প্রধান সঞ্জয় কোঠারি, যাঁরা মোটামুটি ভাবে বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ফলে বিশেষ একটি দলের রাজনৈতিক স্বার্থ মাথায় রেখেই এই নীতি আনতে এত তৎপরতা বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা।