মেঘ-কালো আকাশের দিকে মুখ তুলে এক বুক বাতাস ভরে নিয়েই ফের ডুব। বাতাস নাকি, বিশ্বাস! ভরা গঙ্গায় সাঁতরে চলেছে মাত্র এগারো বছরের ‘ছোট্ট জলপরি’। কানপুরের মেয়ে চলেছে বারাণসীর ঘাটে। দূরত্ব ৫৫০ কিলোমিটার। অলিম্পিক্সের প্রায় ১৩টা ম্যারাথনের সমান। আর হাতে সময় মাত্র ৭০ ঘণ্টা! না, রেকর্ড নয়। সাঁতরে গল্প লিখতে চাইছে শ্রদ্ধা শুক্ল। ‘স্বচ্ছ গঙ্গা’-র গল্প। দূষণে বেহাল গঙ্গার হাল ফেরানোর বার্তা দিতেই গত রবিবার থেকে সাঁতরে চলেছে শ্রদ্ধা। বাকিটা অবশ্য ব্যক্তিগত। ছোট মুখে একটাই কথা— ‘‘আমার তো সাঁতারেই শান্তি।’’ বাবা ললিত শুক্লর মনে অবশ্য শান্তি নেই। যত ক্ষণ না মেয়ে নিরাপদে গিয়ে পৌঁছচ্ছে বারাণসীর ঘাটে। বারাণসী মানে, গত লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র। ১৯৮৬-তে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’। খুদে শ্রদ্ধার তা জানার কথা নয়। গঙ্গা বাঁচাতে ফের পাঁচ বছরের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন মোদী। তবু শ্রদ্ধার সফর শুরু কানপুরের আবর্জনায় ভরা সেই দূষিত গঙ্গার পাড় ধরেই। তার যাত্রা শেষ হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার। ভরা বর্ষায় এই মুহূর্তে উপচে পড়ছে গঙ্গা। ছোট্ট জলপরি তবু ভয়হীন। প্রথম দিনই সে প্রায় ১০০ কিলোমিটার সাঁতরে পৌঁছেছে উন্নাওয়ের চন্দ্রিকা ঘাটে। সপ্তাহ পার করেও দিনে সাত ঘণ্টা করে সাঁতারে বিরাম নেই শ্রদ্ধার। গঙ্গা যে তাকে বাঁচাতেই হবে! বাবা অবশ্য মেয়েকে একা জলে ঠেলে দিতে চাননি। মেয়ের পিছু-পিছু তিনিও চলেছেন নৌকোয়। সঙ্গে মজুত দুধ আর পেষাই করা শুকনো ফল। শ্রদ্ধার বাড়ি উত্তরপ্রদেশের কানপুর-ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। তার বাবার কথায়, ‘‘মেয়ে আমার ১ বছর বয়স থেকেই সাঁতার কাটছে।’’ গঙ্গা পরিচ্ছন্ন রাখার বার্তা দিতে এর আগেও ২০১৪-য় কানপুর থেকে ইলাহাবাদ পর্যন্ত ২৮২ কিলোমিটার গঙ্গা পাড়ি দিয়েছিল শ্রদ্ধা। দেশের হয়ে অলিম্পিক্সে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন রয়েছে ছোট্ট শ্রদ্ধার। হাতছানি দিচ্ছে ইংলিশ চ্যানেলও। তবে আপাতত তার লক্ষ্য শুধুই দেশের সর্বত্র গঙ্গা বাঁচানোর বার্তা পৌঁছে দেওয়া। মেয়ের এই গোটা সফরের ভিডিও তুলে রাখছেন ললিত শুক্ল। পরে যা তিনি তুলে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের হাতে। ছোট্ট জলপরির এই সফর শেষের অপেক্ষায় দিন গুণছে বারাণসীও। মহাভারত-এর কাহিনি অনুযায়ী, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ‘পাপ’ থেকে উদ্ধার পেতে শিবের খোঁজে এই শহরেরই এসেছিলেন যুদ্ধজয়ী পাণ্ডবেরা। এ বার সাঁতরে আসছে বছর এগারোর খুদে শ্রদ্ধা শুক্ল। তার চোখেও যে ‘পুণ্য’ অর্জনেরই স্বপ্ন। আর ছোট্ট ছোট্ট কাঁধে স্বেচ্ছায় তুলে নেওয়া গঙ্গা দেখভালের ভার।