এক্সপ্লোর
Advertisement
স্টারলাইট কারখানা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে অগ্নিগর্ভ তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন, পুলিশের গুলিতে মৃত ১১
চেন্নাই ও নয়াদিল্লি: তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে বেদান্তর স্টারলাইট তামার কারখানা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল পরিস্থিতি। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলি। নিহত কমপক্ষে ১১ জন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। গত মাসাধিককাল ধরেই তামিলনাড়ুর এই বন্দর শহরে দূষণের আশঙ্কায় কারখানা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। আজ সেই বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার ধারণ করল। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত পুলিশ গুলি চালায়। ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী এই ঘটনাকে 'রাষ্ট্রের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের নৃশংস দৃষ্টান্ত' বলে অভিহিত করেছেন।
এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে তামিলনাড়ু সরকার। সাধারণ মানুষের কাছে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে ওই কারখানার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দিয়েছে রাজ্যের এআইএডিএমকে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ই পালানিস্বামী নিহতদের পরিবারবর্গকে ৯ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও আহতদের ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই কারখানার বিরোধিতা করছিলেন। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁদের দাবিতে কর্ণপাত করেনি বলে আন্দোলনকারীদের দাবি। এরইমধ্য খবর আসে যে, প্রাথমিক ২৫ বছরের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কারখানা সম্প্রসারণের জন্য কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স চেয়েছে। এই খবর আন্দোলনে ঘৃতাহুতি দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষ বিক্ষোভস্থলে সমবেত হন। তাঁরা কারখানা পর্যন্ত মিছিল করার অনুমতি চান। কিন্তু সেই অনুমতি দেওয়া না হলে তাঁরা জেলা কালেক্টরেট পর্যন্ত মিছিল করার চেষ্টা করেন। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে অনেক পুলিশ কর্মী জখম হন। বিক্ষোভকারী রাকালেক্টরেট অফিসে ঢুকে সরকারি সম্পত্তিতে ভাঙচুর চালায়।
কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রাজ্যের মন্ত্রী জয়কুমার বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গুলি চালনা ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। কারণ, বিক্ষোভ চূড়ান্ত হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল। তিনি জানান, পরিস্থিতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে সাহায্য করতে পাশের জেলাগুলি থেকে তুতিকোরিনে নিয়ে আসা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী। ঘটনাস্থলে চেন্নাই থেকে রওনা দিয়েছেন পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ডিএমকে-র এমকে স্ট্যালিন এই ঘটনার জন্য এআইএডিএমকে সরকারকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, এলাকার মানুষ দীর্ঘগিন ধরেই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। কিন্তু প্রশাসন তাঁদের উদ্বেগ দূর করার কোনও চেষ্টাই করেনি। ওই কারখানা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিও তিনি জানিয়েছেন।
রাজনীতিতে যোগদানকারী অভিনেতা কমল হাসানও পুলিশের গুলি চালনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, আন্দোলনকারীরা নাগরিক, অপরাধী নন..তাঁদেরকেই এভাবে প্রাণ দিতে হল। উল্লেখ্য, কমল হাসান এর আগে কারখানার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, সরকারের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। কারণ, আন্দোলনকে উপেক্ষা করেছিল সরকার।
উল্লেখ্য, ২০১৩-র মার্চে এই কারখানা থেকে গ্যাস লিক করেছিল বলে অভিযোগ। সেই গ্যাসের প্রভাবে অসংখ্য মানুষ শ্বাসকষ্ট, বমি ও গলায় সংক্রমণের মতো সমস্যার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিয়মভঙ্গের অভিযোগে কারখানাটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল কারখানাটি ফের খোলার অনুমতি দেয়।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বলেছেন,তুতিকোরিনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মানুষকে খুন করা হল। তাঁর ট্যুইট- 'স্টারলাইট কারখানার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী নয়জনের পুলিশের গুলিতে মৃত্যু রাষ্ট্রের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের নৃশংস দৃষ্টান্ত। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ওই নাগরিকদের খুন করা হয়েছে। ঘটনায় শহিদ ও জখমদের পরিবারবর্গকে আমি সমবেদনা জানাচ্ছি'।
The gunning down by the police of 9 people in the #SterliteProtest in Tamil Nadu, is a brutal example of state sponsored terrorism. These citizens were murdered for protesting against injustice. My thoughts & prayers are with the families of these martyrs and the injured.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) May 22, 2018
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
জেলার
জেলার
ব্যবসা-বাণিজ্যের
Advertisement