Nishikant Dubey: 'হিন্দুদের অস্তিত্ব সঙ্কটে', বাংলা-বিহারের ৫ জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুললেন BJP সাংসদ
Lok Sabha: তাঁর দাবি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশের ফলে এই পাঁচ জেলার জনবিন্যাস পাল্টে গিয়েছে।
নয়াদিল্লি: পৃথক কোচবিহার রাজ্য থেকে উত্তরবঙ্গকে দেশের উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন পরিষদে শামিল করার দাবি লাগাতার তুলে আসছে রাজ্য বিজেপি। এবার সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বিহারের পাঁচ জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুললেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। মালদা, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে বিহারের কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলেছেন। তাঁর দাবি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশের ফলে এই পাঁচ জেলার জনবিন্যাস পাল্টে গিয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল না করা হলে হিন্দুদের অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। (Nishikant Dubey)
টাকার বিনিময়ে আদানিদের বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে এর আগে অভিযোগ করেছিলেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত। বৃহস্পতিবার সংসদে বাংলা ও বিহারের পাঁচ জেলা নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি জানান তিনি। নিশিকান্ত বলেন, "আমাদের পাপুর জেলায় দাঙ্গা বেধেছিল যে বাংলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ এবং সেখানকার লোকজন, মালদা এবং মুর্শিদাবাদ থেকে এসে আমাদের লোকজনকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। পর পর হিন্দুদের গ্রাম খালি হয়ে যাচ্ছে।" (Lok Sabha)
নিশিকান্ত আরও বলেন, "মুর্শিদাবাদ এবং মালদা থেকে লোক এসে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশ কোনও কাজ করছে না। আমার অনুরোধ, মালদা, মুর্শিদাবাদ, আরারিয়া, কিষাণগঞ্জ এবং কাটিহার নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হোক। নইলে হিন্দু থাকবে না। NRC চালু করুন। কিছু করতে না পারলে, আগে কমিটি পাঠান। ধর্মান্তরণ এবং বিবাহের ক্ষেত্রে অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হোক।"
এ নিয়ে তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় বলেন, "বিজেপি বাংলায় কিছু করতে পারছে না। হারাতে পারছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই এসব করছে। জঘন্য কথা সব। নিশিকান্ত দুবে যা বলছেন, এর চেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক কথা আমি শুনিনি। এমন চললে তো আর একটা দেশে পাকিস্তান হয়ে যাবে! সুকান্ত বলছেন উত্তরবঙ্গকে আলাদা করতে হবে, ইনি বলছেন, মুসলিম জেলাকে আলাদা করতে হবে, এগুলি বাংলাকে ভাগ করার চক্রান্ত। আমরা এসব হতে দেব না।"
সিপিএম-এর রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "নির্বাচনের আগে থেকেই মোদি একটি কুপ্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন, হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটা প্রবণতা ছিল তাঁর। নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে খানিকটা পিছু হটলেও, একেবারেই হতদ্যোম হননি। তাই দলের লোকেদের দিয়ে এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবি তুলছেন। সুকাব্তবাবু মন্ত্রী হয়ে উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে যুক্ত করতে বলছেন, নিশিকান্ত এখন এসব বলছেন। আসলে এদের উদ্দেশ্য হল, দেশটাকে টুকরো টুকরো করা। যত টুকরো হবে, তত বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ক্ষমতা বাড়বে। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে RSS-এর হিন্দুরাষ্ট্রের বিরোধিতা করবে। ভয় থেকেই এসব করছেন। স্পিকারের উচিত ছিল না, ওঁকে সংসদে দাঁড়িয়ে বিভাজনমূলক মন্তব্য করতে দেওয়ার। দেশটাকে যদি ভাঙতে চান, সরাসরি বলুন। কেন মানুষের মধ্যে এসব বিভ্রান্তি তৈরি করছেন? এখনও ওদের মাথা থেকে হিন্দুরাষ্ট্রের ভূত যায়নি। ওই ভূত তাড়ানোর জন্য পথে নামতে হবে সকলকে।"
এর আগে বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও সম্প্রতি এমন দাবি করেন। তাঁর দাবি ছিল, "অসমে মুসলিম জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে, যা ১৯৫১ সালে ছিল ১২ শতাংশ। আমরা জেলার পর জেলা হারিয়েছি। আমার জন্য এটা জীবন-মরণের সওয়াল।" বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও সম্প্রতি বলেন, "যারা অনুপ্রবেশ করে ঢুকছে, তারা হিন্দু,-মুসলিম, দুই পক্ষেরই জায়গা নিয়ে নিচ্ছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মন্তব্যকে পূর্ণ সমর্থন করি।" এর পরই গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছে উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন সুকান্ত মজুমদার। বিজেপি-র অনন্ত মহারাজ আবার পৃথক গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য আগে গঠন করতে হবে বলে সুর চড়িয়েছেন। এই আবহে বাংলা ভাগের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে তৃণমূল।