Khawaja Asif: আফগানদের দেশ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ, পাকিস্তান বলল, ‘আর কোনও সম্পর্ক নেই’, শরণার্থী সঙ্কটের আশঙ্কা
Pakistan-Afghanistan Conflict: শুক্রবারই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সমাপ্তি ঘটে।

ইসলামাবাদ: সীমান্ত সংঘাতের মধ্যেই দেশে বসবাসকারী আফগান নাগরিকদের হুঁশিয়ারি। পাকিস্তান থেকে আফগান নাগরিকদের বেরিয়ে যেতে বললেন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। আফগানিস্তানের সঙ্গে এতদিনের সম্পর্কের সমাপ্তিরও ঘোষণা করলেন তিনি। পাক মন্ত্রীর এই ঘোষণায় উদ্বেগে আন্তর্জাতিক মহল। পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। নতুন করে শরণার্থী সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। (Khawaja Asif)
শুক্রবারই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সমাপ্তি ঘটে। সেই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবর্তে হুঁশিয়ারির সুর শোনা যায় আসিফের গলায়। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের মাটিতে বসবাসকারী সমস্ত আফগান নাগরিককে নিজের দেশে ফিরে যেতে হবে। এখন নিজেদের সরকার আছে তাঁদের, কাবুলে নিজেদের খেলাফত আছে। আমাদের দেশের সম্পদ আমাদের ২৫ কোটি পাকিস্তানি নাগরিকের জন্যই বরাদ্দ’। (Pakistan-Afghanistan Conflict)
পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, পাকিস্তান সরকারের তরফে খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডি খান, চারসাড্ডা, ট্যাঙ্ক, লক্কি মারওয়াত, মারওয়াত, মালাকান্দ পেশোয়ারের শরণার্থী শিবিরগুলি যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে বলা হয়েছে ইতিমধ্যেই। মন্ত্রী তালাল চৌধরি পাক নাগরিকদের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে আফগান শরণার্থীদের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা না করা হয়, তাঁদের বাড়ি ও দোকান ভাড়া না দেওয়া হয়। শরণার্থী হিসেবে যে কাগজ দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদও আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক।
Geo News-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ জানান, নাগরিকদের মধ্যে কোনও শত্রুতা না থাকলেও, শত্রুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে কাবুলের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক নেই ইসলামাবাদের। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে শরণার্থী সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। Al Jazeera-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানে বসবাসকারী এক আফগান শরণার্থী বলেন, "আমি পাকিস্তানেই জন্মেছি। যেটুকু পেয়েছি, তা দিয়েই জীবন গড়ে তুলি। এখন পাকিস্তান সরকার চায়, আমরা চলে যাই। সীমান্ত খোলার অপেক্ষা করছি। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে না বাড়ি আছে আমাদের, না যাওয়ার জায়গা আছে।"
অন্য একজন বলেন, "১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। পাকিস্তানের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। কিন্তু ভাবতে পারিনি এভাবে চলে যেতে হবে। ট্রাক ভাড়া করার টাকা পর্যন্ত নেই আমাদের।" এই মুহূর্তে রোজকার ব্যবহারের জিনিসপত্র যেটুকু সম্ভব গুছিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিভাগের পরিসংখ্য়ান বলছে, ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব করে দেখলে পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগান নাগরিকের সংখ্য়া ২৩ লক্ষের বেশি।
সংঘাত কাটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে। সামধান সূত্র বের করতে কাতারের দোহায় শীঘ্রই বৈঠকে বসার কথা দুই দেশের আধিকারিকদের। তার আগেই যদিও ইসলামাবাদকে দুষতে শুরু করেছে তালিবান। তাদের দাবি, ইসলামাবাদ ফের আকাশপথে একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে। ডুরান্ড লাইন বরাবর বোমাবর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিও ভেঙে গিয়েছে বলে দাবি উঠছে।
আসিফও আফগানিস্তানের সঙ্গে এতদিনের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘অতীতের মতো কাবুলের সঙ্গে সেই সম্পর্ক আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় ইসলামাবাদের পক্ষে। বহু বছর ধরে ধৈর্য দেখিয়ে আসছে ইসলামাবাদ। কিন্তু কাবুলের তরফে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি’। আসিফের দাবি, সীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে কাবুলকে ৮৩৬টি ‘প্রতিবাদ পত্র’ এবং ১৩টি ‘রাজনৈতিক বার্তা’ পাঠানো হয়। কিন্তু আর কোনও প্রতিবাদ পত্র পাঠানো হবে না, শান্তির আবেদন জানানো হবে না। কাবুলে কোনও প্রতিনিধি পাঠাবে না ইসলামাবাদ। বরং কড়া ভাবে সন্ত্রাসের জবাব দেওয়া হবে।
আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার জন্য এর আগে ভারতের ঘাড়ে দোষ চাপান আসিফ। ভারতের হয়ে আফগানিস্তান আসলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। শুক্রবারও একই দাবি করেন আসিফ। তাঁর বক্তব্য, ‘কাবুলের শাসকরা ভারতের কোলে বসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। ওই শাসকরা একসময় আমাদের নিরাত্তার ঘেরাটোপে ছিলেন, আমাদের দেশের মাটিতে লুকিয়ে ছিলেন’।
পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার আছে বলেও জানিয়েছেন আসিফ। তাঁর দাবি, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে ১০ হাজার ৩৪৭টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে পাকিস্তানে, যাতে ৩ হাজার ৮৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিরীহ মানুষ থেকে সেনাকর্মীরা মারা গিয়েছেন। বার বার সেই নিয়ে বার্তা দেওয়া হলেও কাবুলের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আফগানিস্তানের তালিবান সরকার যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।






















