Parrot Fever: ইউরোপে টিয়াপাখি জ্বরের প্রকোপ, বেশ কয়েক জনের মৃত্যু, জানুন রোগের উৎস-উপসর্গ
Parrot Fever in Europe: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির পোষা বা উড়ে আসা পাখির সংস্পর্শে এসে, অথবা পোলট্রির হাঁস-মুরগি থেকেও সংক্রমিত হয়েছেন অনেকে, দাবি WHO-র।
নয়াদিল্লি: এবার 'প্যারট ফিভারে'র প্রকোপ ইউরোপের একাধিক দেশে। এখনও পর্যন্ত এই টিয়াপাখি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। একাধিক দেশ থেকে সংক্রমণের খবর আসছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO). অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডসেই অধিকাংশ আক্রান্তের বাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির পোষা বা উড়ে আসা পাখির সংস্পর্শে এসে, অথবা পোলট্রির হাঁস-মুরগি থেকেও সংক্রমিত হয়েছেন অনেকে, দাবি WHO-র। (Parrot Fever)
এখনও পর্যন্ত তথ্য মিলেছে, সেই অনুযায়ী, এ বছরের শুরু থেকেই টিয়াপাখি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছিল। ২০২৩ সালেও বেশ কয়েক জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত কয়েক দিনে পর পর পাঁচ জনের মৃত্যুতেই টনক নড়েছে সর্বস্তরের। ক্ল্যামিডিয়া গোত্রের ব্যাকটিরিয়া থেকে এই টিয়াপাখি জ্বর হয় বলে জানা গিয়েছে। বুনো এবং ঘরোয় পাখির সংস্পর্শে এলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে, আবার পোলট্রির হাঁস-মুরগি থেকেও ছড়াতে পারে। (Parrot Fever in Europe)
বিশেষজ্ঞদের দাবি, সংক্রমিত পাখিকে দেখে রোগ বোঝার উপায় নেই। তাদের শরীরে কোনও উপসর্গ না-ই থাকতে পারে। কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস এবং রেচনক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের শরীর থেকে রোগের ব্যাকটিরিয়া ছড়াতে পারে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে, আক্রান্ত পাখিদের রেচনক্রিয়ায় বিষাক্ত হয়ে ওঠা ধূলিকণা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসগ্রহণের সময়, তা থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়। আবার সরাসরি যদি আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে আসেন বা সরাসরি কামড় বসায় পাখি, অথবা কেউ যদি নিজের মুখ দিয়ে পাখির মুখ স্পর্শ করেন, সেক্ষেত্রেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তবে আক্রান্ত পাখির মাংস রান্না করে খেলে সংক্রমণ ছড়ায় না বলে দাবি আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন।
তবে কোনও মানুষ যদি টিয়াপাখি জ্বরে আক্রান্ত হন, তাঁর থেকে অন্য কারও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। এক জনের থেকে অন্য জনের শরীরে যদিও বা সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তবে সাধারণত কিছু বাছাই করা ক্ষেত্রেই এমন ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, সরাসরি আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে এসে পড়লে রোগ ছড়ায়, দাবি WHO-র।
যে বা যাঁরা টিয়াপাখি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা গিয়েছে। যেমন, আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে আসার পাঁচ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাথার যন্ত্রণা, পেশির যন্ত্রণা, শুকনো কাশি, জ্বর এবং কাঁপুনি টিয়াপাখি জ্বরের মূল উপসর্গ। সংক্রমণের মোকাবিলা করতে অ্যান্টিবায়োটিক দেন চিকিৎসকরা। টিয়াপাখি জ্বরে মৃত্যু পর্যন্ত হয়, তবে সংখ্যা বেশ কম।
এমনিতে অস্ট্রিয়াতে প্রতি বছর হাতেগোনা কিছু মানুষ টিয়াপাখি জ্বরে আক্রান্ত হন। ২০২৩ সালে সেখানে টিয়াপাখি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪, নিশ্চিত ভাবে যাঁদের সংক্রমণকে টিয়াপাখি জ্বর বলে চিহ্নিত করা গিয়েছিল। এ বছর মার্চ মাস পর্যন্ত সেখানে বেশ কয়েক জন টিয়াপাখি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এঁদের কেউই দেশের বাইরে যাননি, কোনও বুনো পাখির সংস্পর্শেও আসেননি বলে জানা গিয়েছে। তাই পোষা পাখি, নাকি অন্যের থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, উঠছে প্রশ্ন।
ডেনমার্কেও টিয়াপাখি জ্বরে বছরভর ১৫ থেকে ৩০ জনের আক্রান্ত হওয়ার নিদর্শন রয়েছে। এবছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সেখানে ২৭ জন আক্রান্ত। যদিও WHO-র আধিকারিকদের মতে, বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি। ২৩ জনের সংক্রমণকে শুধুমাত্র চিহ্নিত করা গিয়েছে। সেখানে ১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ১৫ জনের আবার নিউমোনিয়াও ধরা পড়েছে। ডেনমার্কেই চার জন মারা গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে কেউ সরাসরি পাখির সংস্পর্শে এসেছিলেন, কেউ শুধু দানা খাওয়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েক জন এমনও রয়েছেন, যাঁরা পাখির সংস্পর্শে যাননি।
জার্মানিতে ২০২৩ সালে টিয়াপাখি জ্বরে আক্রান্ত হন ১৪ জন। এ বছর এখনও পর্যন্ত পাঁচ জন রোগীর হদিশ মিলেছে। প্রত্যেকের নিউমোনিয়াও ধরা পড়েছে। মোট ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এঁরা সরাসরি পাখি এবং মুরগির সংস্পর্শে এসেছিলেন। ২০১৭ সাল থেকে সুইডেনে টিয়াপাখি রোগের দাপট বাড়ছে। গত বছর নভেম্বরের শেষে এবং ডিসেম্বরের শেষে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৬। এ বছর এখনও পর্যন্ত ১২ জন সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে।