Rahul Gandhi: ফলঘোষণার আগে শেয়ার বাজারে কারসাজি মোদি-শাহের? ৩১ লক্ষ কোটির ক্ষতিতে তদন্ত চাইলেন রাহুল
Share Market Manipulation Allegations: যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করলেন রাহুল।
নয়াদিল্লি: বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI-কে আগেই চিঠি দিয়েছে তৃণমূল। এবার নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে কারসাজি করে শেয়ার বাজারে লোকসান করানোর অভিযোগ তুললেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। রাহুলের দাবি, ৪ জুন শেয়ারবাজার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছোব বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ৪ জুনের আগে বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়েছিলেন অমিত শাহও। কিন্তু ৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর দাবির ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটেছে শেয়ারবাজারে। ৪ জুন শেয়ারবাজারে বড়সড় ধস নামে, খাদে চলে যায় শেয়ারসূচক। তাই যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করলেন রাহুল। (Rahul Gandhi)
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাহুল। সেখানে তিনি বলেন, "এই প্রথম বার আমরা দেখলাম, নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্টক মার্কেট নিয়ে টিপ্পনি করলেন। প্রধানমন্ত্রী তিন-চার বার দেশের উদ্দেশে বলেন, তর তর করে চড়বে শেয়ার বাজার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৪ জুন শেয়ার বাজার আকাশ ছোঁবে। কিনে রাখা উচিত আগে থেকে। অর্থমন্ত্রীও সেই কথাই বলেন। ১৯ মে, ২৮ মে শেয়ার বাজার রেকর্ড গড়বে বলে মন্তব্য করেন মোদি। এর পর ১ জুন ভুয়ো বুথফেরত সমীক্ষা সামনে আসে।" (Share Market Manipulation Allegations)
রাহুলের দাবি, বিজেপি-র অভ্য়ন্তরীণ সমীক্ষায় দল ২২০ আসন পাচ্ছে বলে উঠে আসে। অর্থাৎ ৪০০ পার যে হবে না, তা জানতেন বিজেপি নেতারা। ৩ জুন শেয়ার বাজারে সব রেকর্ড ভেঙে যায়। আর ৪ জুন একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে। রাহুল জানিয়েছেন, ৩১ মে শেয়ার বাজারে বেশ কিছু সংস্থার গতিবিধি চোখে পড়ে। ৩০ তারিখের তুলনায় দ্বিগুণ লেনদেন চোখে পড়ে। রাহুলের প্রশ্ন, "এঁরা কারা? এঁরা সেই লোক, যাঁরা জানতেন যে কিছু একটা ঘটছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা টাকা ঢালেন। কিন্তু এরপর খুচরো ব্যবসায়ীদের ৩১ লক্ষকোটি টাকা ক্ষতি হয়।"
এদিন রাহুল বলেন, "এটা ভারতের শেয়ার বাজারের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। এ নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলতে চাই আমরা। কেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৫ কোটি বিনিয়োগকারী পরিবারকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশ দিলেন? শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের নির্দেশ দেওয়াই কি কাজ ওঁদের? শেয়ার বাজারে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে যে সংস্থার বিরুদ্ধে SEBI তদন্ত করছে, সেই সংস্থার চ্যানেলেই ওই ইন্টারভিউ দিলেন? বিজেপি, সন্দেহভাজন বুথফেরত সমীক্ষাকারী সংস্থা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কী সংযোগ? একদিন আগে বিনিয়োগ করে এত টাকা বিনিয়োগ তুললেন কারা? কাদের জন্য ৫ কোটি মানুষের এত টাকা ক্ষতি হল? আমরা যৌথ সংসদীয় তদন্ত চাই। কারণ এটা একটা বড় দুর্নীতি। কোটি কোটি খুচরো বিনিয়োগকারীদের বলি করে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা লাভ করেছে কেউ। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেয়ার কেনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এটা অপরাধ। যৌথ সংসদীয় কমিটিকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে।"
আরও এককদম এগিয়ে রাহুল জানান, শিল্পপতি গৌতম আদানির চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে শেয়ার কিনতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল। SEBI আগে থেকেই তদন্ত করছে আদানিদের বিরুদ্ধে। ওই চ্যানেলের কী ভূমিকা, তাও খতিয়ে দেখার দাবি তোলেন রাহুল।
মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে, শেয়ার বাজার নিয়ে ইতিবাচক বার্তা দেন শাহ। তাঁকে বলতে শোনা যায়, " ৪ জুনের আগে শেয়ার কিনে রাখুন। তার পরে বাজার চড়বে।" এর পর বুথফেরত সমীক্ষায় মোদির নেতৃত্বে বিজেপি ৪০০ আসন নিয়ে প্রত্যাবর্তন করছে বলে দাবি করা হয়। সেই রিপোর্ট সামনে আসতেই রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে যায় শেয়ারের সূচক। কিন্তু মঙ্গলবার ফলঘোষণার পর ৪০০০ বেশি পয়েন্ট পড়ে যায়, যাতে বিনিয়োগকারীদের ৩১ লক্ষ কোটি টাকা ডুবে যায়। (Share Market Manipulation Allegations)
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই SEBI-কে চিঠি দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে ওই চিঠিতে জানান, বুথফেরত সমীক্ষার মাধ্যমে কারসাজি করে সূচককে চড়ায় তোলা হয়েছিল কি না, সেই নিয়ে পূর্ণ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কারণ বুথফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করে যে সংস্থা, তাদেরকেই নিজস্ব সমীক্ষা করার বরাত দিয়েছিল বিজেপি। ফলে বিজেপি যে ৪০০ পার করতে পারবে না, সেই খবর আগেই বিজেপি নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে গিয়ে থাকতে পারে। অর্থাৎ ভুয়ো বুথফেরত সমীক্ষাকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। বাজারের এই ওঠানামায় কোন কোন সংস্থা লাভবান হয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে দাবি জাননা সাকেত।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও সেই নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সাজানো বুথফেরত সমীক্ষাকে সামনে রেখে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিনিয়োগকারীদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। শেয়ার বাজারে কারচুপি করা অর্থনৈতিক অপরাধের মধ্যে পড়ে। এক্ষেত্রে একযোগে তদন্তের দাবি তুলেছেন তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh:'হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে', মোদির কাছে নীতীশদের দাবি নিয়ে কটাক্ষ দিলীপের