Rajasthan Assembly Elections 2023: কাজের খতিয়ান দীর্ঘ, তা-ও সঙ্কটে রাজস্থান কংগ্রেস, মাথাব্যথার কারণ গহলৌত-সচিন দ্বৈরথ
Ashok Gehlot vs Sachin Pilot: গহলৌত সরকারের বিরুদ্ধে যদিও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেননি সচিন। বরং পূর্বতন বসুন্ধরা রাজের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন।
নয়াদিল্লি: বিধানসভা নির্বাচনে বাকি আর কয়েক মাস (Rajasthan Assembly Elections 2023)। তার আগেও রাজস্থান কংগ্রেসে (Rajasthan Congress) সঙ্কট। ফের সেখানে অশোক গহলৌত (Ashok Gehlot) বনাম সচিন পায়লট (Sachin Pilot) দ্বন্দ্ব হাওয়া পাচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেখানে একদিনের অনশন এবং ধর্না ঘোষণা করেছেন সচিন। আর তাতেই রাজস্থান কংগ্রেসের ফাটল আরও চওড়া হচ্ছে। কারণ সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনশনে বসার ঘোষণা করে সচিন আদতে গহলৌত-সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
একদিনের অনশনে বসছেন সচিন পায়লট
গহলৌত সরকারের বিরুদ্ধে যদিও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেননি সচিন। বরং পূর্বতন বসুন্ধরা রাজের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু সব জেনেও গহলৌত সরকার সেই নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ সচিনের। তাতেই রবিবার একদিনের অনশনে বসার ঘোষণা করেছেন সচিন। মঙ্গলবার অনশনে বসবেন তিনি। তাঁর এই ঘোষণায় স্বভাবতই অস্বস্তিতে রাজস্থান কংগ্রেস।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই গহলৌত সরকারের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করছেন সচিন। তাঁর দাবি, ২০১৮ সালে দুর্নীতিকে সামনে রেখেই রাজস্থানে ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। কিন্তু আবগারি মাফিয়া থেকে বেআইনি খনন, জমি জবরদখল এবং ললিত মোদি হলফনামা মামলা, কোনও বিষয়েই পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে কী জবাব দেবে কংগ্রেস সরকার, প্রশ্ন সচিনের।
রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনে মেরেকেটে ছ’মাস বাকি। তার আগে নিজের অবস্থানের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে সচিন জানিয়েছেন, গহলৌত সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তাকে হাতিয়ার করতে পারে বিরোধী দলগুলি। গোপন সমঝোতার অভিযোগও খাড়া করা হতে পারে। তাতে কংগ্রেস কর্মীরাও হতাশ হতে পারেন। ভাবতে পারেন কথার সঙ্গে কাজের বিস্তর ফারাক রয়ে গিয়েছে। তাই তাঁর বক্তব্য, “প্রতিশ্রুতি অধরা রেখে পরবর্তী নির্বাচনে এগোতে পারব আমরা। আমাদের কাছে সব প্রমাণ রয়েছে। তদন্ত শুরু হওয়া উচিত। নির্বাচন আসছে। আদর্শ নির্বাচনী বিধিও জারি হয়ে যাবে। মানুষের কাছে জবাবদিহির দায়বদ্ধতা রয়েছে আমাদের।”
সচিন জানিয়েছেন, দলীয় নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি। মানুষের বিশ্বাস ধরে রাখতে গেলে অবিলম্বে পদক্ষেপ করা জরুরি। কিন্তু গোটা ঘটনায় নীরবতা পালন করছেন গহলৌত। কংগ্রেসের তরফে যদিও ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা চোখে পড়েছে। বিবৃতি প্রকাশ করে দলের তরফে বলা হয়েছে, মানুষের কল্যাণে তাদের সরকার একাধিক প্রকল্প চালু করেছে। কাজের ভিত্তিতেই মানুষের কাছে ভোট চাইবে দল। সরকারি প্রকল্প, দলের প্রচেষ্টাকে সামনে রেখেই নির্বাচনী প্রচার চলবে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের কথায়, “প্রশাসনিক দক্ষতার নিরিখে রাজস্থান দেশের মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে। রাজস্থানে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ও অসামান্য সাফল্য পেয়েছে। রাজস্থানের প্রতি দলের একাগ্রতাই তা সম্ভব করেছে তা।” তবে দলের তরফে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও, গহলৌত সরকারের জন্য তো বটেই, রাজস্থানে কংগ্রেসের জন্যও সচিনের ঘোষণা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশেরও।
সচিন এবং গহলৌত দ্বৈরথ নতুন কোনও ঘটনা নয়। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে, যা গোপন নেই কারও কাছেই। ২০১৮ সালে রাজস্থানে কংগ্রেস বিজয়ী হওয়ার পর সচিনই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে শোনা যায়। জানা যায়, পাঁচ বছরের মেয়াদকাল সচিন এবং গহলৌত নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সেই অনুযায়ী, অভিজ্ঞ হওয়ার দরুণ প্রথম আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর কথা ছিল গহলৌতের। পরের আড়াই বছর সচিন মুখ্যমন্ত্রীর আসন সামলাবেন বলে কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও, বাস্তবে তা ঘটেনি। ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হয়েই থাকতে হয়েছে সচিনকে। ২০২০ সালে তা নিয়ে বিদ্রোহও ঘোষণা করেন পায়লট। নিজের অনুগামী ২০ জন বিধায়ককে নিয়ে দিল্লির কাছে রিসর্টে আশ্রয় নেন। আসন ছাড়া না হলে তিনি দল ভেঙে বেরিয়ে যাবেন হুঁশিয়ারি দেন।
কিন্তু কৌশলে তাঁকে মাত দেন গহলৌত। সচিনের ডাকে তেমন কেউ সাড়া দেননি। উল্টে বিদ্রোহ ঘোষণার জন্য ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারাতে হয় তাঁকে। রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্বও হাতছাড়া হয় শাস্তিস্বরূপ। এর পর, ২০২২ সালে সনিয়া গান্ধী খোদ রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব হস্তান্তরিত করতে নির্দেশ দেন গহলৌতকে। তাতে নিজের দলবল নিয়ে শক্তি প্রদর্শন করেন গহলৌত।
রাহুল গান্ধীর সুপারিশ করা ‘এক ব্যক্তি , এক পদ’ নীতির বিপরীত পথে হেঁটে গহলৌত জানিয়ে দেন, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিত্ব এবং মুখ্যমন্ত্রিত্ব, দুই পদই নিজের দখলে রাখবেন তিনি। এর পর সনিয়া খোদ দেখা করেন গহলৌতের সঙ্গে। দলের অসন্তোষের কথা জানান। তাতে ক্ষমাও চান গহলৌত। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ ছেড়ে দিলেও, মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়েননি তিনি। রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের চেয়ারপার্সনও তিনি।
নির্বাচনের আগে পুরনো ক্ষত ব্যথা ধরাচ্ছে কংগ্রেসকে
তার পর থেকে কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে একাধিক বার সচিন এবং গহলৌতের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ঘোচানোর চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু হয়নি কাজের কাজ। এখন নির্বাচনের আগে পুরনো ক্ষত ব্যথা ধরাচ্ছে।