জোয়ারে গঙ্গায় ভেসে গেল অস্থায়ী জেটি, ভদ্রেশ্বরে ডুবে মৃত ৩, নিখোঁজ ২, হাসপাতালে ভর্তি আরও ৭
হুগলি: কালনা-শান্তিপুর ঘাটের নৌকাডুবির আতঙ্ক ফিরে এল হুগলির ভদ্রেশ্বরে। জেটি ভেঙে জলে ডুবে মৃত্যু অন্তত ৩ জনের, এখনও নিখোঁজ ২। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ৭। ঘড়িতে তখন সকাল ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া ঘাট থেকে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর যাওয়ার জন্য বাঁশ ও কাঠের তৈরি অস্থায়ী জেটির ওপর দাঁড়িয়েছিলেন বহু যাত্রী। হঠাৎই গঙ্গায় জোয়ার আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, জলের তোড়ে ভেঙে যায় জেটি। গঙ্গায় তলিয়ে যান জেটিতে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা। বেশ কয়েকজন মানুষকে দেখা যায় জলে ভেসে রয়েছেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বানটা চলে যেতেই স্রোতে জেটি ভেঙে গেল। ঘাটের মাঝি ও স্থানীয় বাসিন্দা ও মৎস্যজীবীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন উদ্ধারকাজে। কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও ডুবে যান অসংখ্য যাত্রী। তাঁদের অনেককে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশ, দমকল ও পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দল। কলকাতা থেকে আসে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরাও। নামানো হয় ডুবুরি। আহত আবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কয়েকজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি ৭ জন। এখনও নিখোঁজ কয়েকজন। হতাহতদের পরিবারক আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। মৃতদের পরিবার পিছু ২ লাখ। আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। গাফিলতি আছে কিনা দেখছি। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন যেখান দিয়ে যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ, সেই ফেরিঘাটেই চরম উদাসীন প্রশাসন। যার ফল, এদিনের দুর্ঘটনা। ফেরিঘাটে পারাপারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদেরও অভিযোগ, প্রশাসনকে বার বার বলেও কোনও কাজ হয়নি। পারাপারের জন্য ঘাট লিজ দেয় ভদ্রেশ্বর পুরসভা। তাই, ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরসভারই। যদিও গাফিলতির কথা অস্বীকার করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মনোজ উপাধ্যায়। তাঁর দাবি, যাত্রীদের বারণ করা হয়েছিল বান আসছে, জেটিতে উঠবেন না, কিন্তু শোনেনি। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যের মন্ত্রীর আশ্বাস, অতি দ্রুত সারানো হবে জেটি। প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের ১৫ই মে কালনা থেকে শান্তিপুর যাওয়ার পথে রাতে গঙ্গায় ডুবে যায় শতাধিক যাত্রীবোঝাই নৌকা। বহুজনের মৃত্যু হয়। এদিন ভদ্রেশ্বরে যাত্রীবোঝাই জেটি ভেঙে মৃত্যু হল বেশ কয়েকজনের। ফিরে এল সেই আতঙ্ক আর স্বজন হারানোর যন্ত্রণা।