অস্ত্র হাতে খড়গপুরে মিছিল: দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা
কলকাতা: রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে মিছিল করলে আইন আইনের পথে চলবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির পরই, সশস্ত্র অবস্থায় মিছিল করার জন্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে রুজু হল মামলা। যদিও, দিলীপ ঘোষ তাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
এদিনই পুরুলিয়ার সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অস্ত্র নিয়ে মিছিল করলে আইন আইনের পথে চলবে। X, Y কেউ নয়। আমি, তুমি কেউ নও। মুখ্যমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির পরই, অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার জন্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে রুজু হল মামলা।
বুধবার রামনবমী উপলক্ষ্যে খড়গপুরের ইন্দা থেকে রামমন্দির পর্যন্ত একটি মিছিলে অংশ নেন দিলীপ ঘোষ। সেখানে তাঁর হাতে ছিল অস্ত্র। স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই মিছিল নিয়েই মামলা রুজু করেছে পুলিশ। দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ২৫ (১এ) এবং ৩০ নম্বর ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
অস্ত্র আইনের ২৫ (১এ) ধারায় অস্ত্র তৈরি বা বিক্রি, কোথাও পাঠানো, প্রকাশ্যে দেখানো বেআইনি। এই ধারায় সর্বনিম্ন ৩ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের সংস্থান রয়েছে। অস্ত্র আইনের ৩০ নম্বর ধারাটি হচ্ছে অস্ত্র সংক্রান্ত লাইসেন্সের নিয়মভঙ্গের জন্য। এতে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং দু’হাজার টাকা জরিমানার সংস্থান রয়েছে।
দিলীপ ঘোষ অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁর সঙ্গে তৃণমূল পরিচালিত খড়গপুর পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। তাহলে তাঁর একার বিরুদ্ধে মামলা কেন?
খড়গপুরের পাশাপাশি কলকাতায়, পোস্তা, ভবানীপুর এবং এন্টালি থানাতেও বিনা অনুমতিতে অস্ত্র নিয়ে মিছিলের অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, নির্দিষ্ট ধর্মীয় মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শন হলে সেজন্য আলাদা করে অনুমতি নেওয়া হয়। কিন্তু, কলকাতায় সশস্ত্র মিছিলের আয়োজকরা মিছিলের অনুমতি নিলেও, তাতে অস্ত্র থাকার কথা বলা হয়নি।
এডিজি আইনশৃঙ্খলা অনুজ শর্মা জানিয়েছেন, মারণাস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা বেআইনি। স্থানীয় থানায় অভিযোগ অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন আইনের পথে চলবে। অবস্থার দিকে নজর রাখছি। সশস্ত্র মিছিল নিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রীও সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, কয়েকটা বিজেপি নেতা, বাংলার কালচার জানে না, বাংলাকে ভালবাসে না... তরোয়াল নিয়ে নেমেছে। চমকাতে ধমকাতে। রাম তরোয়াল নিয়ে (যুদ্ধ) করেছিল?
যদিও, বিজেপির দাবি, মিছিলে যা দেখা গেছে, তা অস্ত্র নয়! দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, তরোয়াল, ত্রিশূল তো অস্ত্রই নয়। তৃণমূল তো পিস্তল, বোমা দিচ্ছে। কিন্তু, এই তত্ব মানতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার সভা থেকে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, দুর্গার হাতে যা শোভা পায়, যারা দাঙ্গা করতে চায়, তাদের হাতে তা শোভা পায় না। কাল আরেকটা দল যদি বলে আমরাও তরোয়াল নিয়ে মিছিল করব, তাহলে তরোয়ালে-তরোয়ালে লড়াই হবে?
যদিও, অস্ত্র হাতে মিছিলের নেপথ্যে যুক্তি দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। গতকাল তিনি বলেছিলেন, রামচন্দ্রর হাতে অস্ত্র থাকত, এটা ঐতিহ্য, তাই অস্ত্র নমিয়ে মিছিল হবেই। কিন্তু, বিজেপি যুক্তি সাজালেও, শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার বিষয়টিকে ভালভাবে দেখছে না তৃণমূল।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, অজ্ঞ লোকেরা বাচ্চাদের হাতে অস্ত্র দিচ্ছে। আমাদের সমাজ এত ঠুনকো নয়। অস্ত্র দিয়ে সব জয় করা যাবে না। সব মিলিয়ে অস্ত্র-মিছিল এবং তাকে কেন্দ্র করে মামালা রুজু-- এসব নিয়ে এখন তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।