পঞ্চায়েত ভোট: বাঁকুড়ার রানিবাঁধে বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থীর মৃত্যু, আহত তৃণমূল কর্মী
বাঁকুড়া: পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন দাখিলের তৃতীয় দিনেও জেলায় জেলায় অব্যাহত উত্তেজনা। আর বুধবার, একেবারে ঝরল প্রাণ। বাঁকুড়ার রানিবাঁধে বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ করেছে বিজেপি। অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধেই হামলার অভিযোগ করেছে তৃণমূল। সংঘর্ষে ১ তৃণমূল কর্মীও আহত। তাঁকে আনা হচ্ছে কলকাতায়।
উত্তর ২৪ পরগনা থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। বাঁকুড়া থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর। মনোনয়ন দাখিলের তৃতীয় দিনেও জেলায় জেলায় অব্যাহত অশান্তি। বুধবার সকাল থেকে দিকে দিকে বিরোধীদের মনোনয়ন পেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল পরিস্থিতি।
বাঁকুড়ায় এদিন মহকুমাশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র তুলতে যান সিপিএমের মহিলা প্রার্থী রীতা বাউড়ি। অভিযোগ, তৃণমূলের মহিলা কর্মীরা দফতরের ভিতর থেকে তাঁকে চুল ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে বার করে দেন। তাঁর অভিযোগ, ধাক্কা দিয়ে চুলের মুঠি ধরে বের করে দেওয়া হয়। যদিও, অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা যুব সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শান্ত ভাবে মনোনয়ন পেশ হচ্ছে। রানিবাঁধে বিডিও অফিস থেকে বিজেপি প্রার্থীকে মারধর করে বার করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসক দল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে বিজেপি প্রার্থী সবেজান বিবির হয়ে মনোনয়নপত্র তোলেন তাঁর স্বামী মীর রবিউল। অভিযোগ, এই খবর চাউর হতেই বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন তৃণমূলকর্মীরা। তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতেও বিজেপি সমর্থকদের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে ঝাঁটা-লাঠি নিয়ে বসিরহাট-ন্যাজাট রোড অবরোধ করে বিজেপি সমর্থকরা।
পঞ্চায়েতের মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে উঠছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ২ ও ৩ তারিখ মিলিয়ে তৃণমূল ১৬১৪টি মনোনয়ন দাখিল করেছে। বিজেপি করেছে ১১৪৩টি। সিপিএম ৩৫১টি। কংগ্রেস ১২৭টি এবং নির্দলরা ২০০টি মনোনয়ন দাখিল করেছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, এরওপর বিরোধীরা কী করে বলছে, তাদের মনোনয়ন জমা দিতে আটকানো হচ্ছে? দলের মহাসচিব বলেন, তৃণমূলের নামে মিথ্যা প্রচার হচ্ছে। বিরোধীদের কোথায় মনোনয়ন দিতে আটকানো হয়েছে?
মঙ্গলবার পাল্টা মারের দাওয়াই দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তারপরই বুধবার পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় তৃণমূলকে পাল্টা মারের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। শাসক দলের দাবি, বুধবার বিডিও অফিস থেকে রাজবাঁধের দিকে ফেরার সময় তাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালায় বিজেপি। বিজেপি নেতা রমন শর্মার পাল্টা দাবি, বিজেপি কর্মীরা কাউকে মারেনি। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই গন্ডগোল বেধেছে।
এদিন বিজেপির পাশাপাশি আক্রমণের মুখে পড়েছে সিপিএমও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র নিতে বিডিও অফিসে গেলে সেখানে তাঁদের মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জাহাঙ্গির খান অবশ্য দাবি করেছেন, এরকম কিছু ঘটেছে বলে তাঁর জানা নেই।
মুর্শিদাবাদে আবার কংগ্রেস-সিপিএম দু’পক্ষকেই আটকানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ডোমকলে বিডিও অফিসের সামনে এখন এভাবেই কার্যত পাহারা দিচ্ছে যুবকরা। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল কাউকে মননোয়ন জমা দিতে ঢুকতেই দিচ্ছে না! বহরমপুরে মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরোনোর সময় এক কংগ্রেস প্রার্থীর নথি নিয়ে তৃণমূল টানাটানির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য পরিস্থিতি মিটে যায়।