উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে নাবালিকার পাচার রুখে দিলেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী
মেয়েটিকে বিমানবন্দরে ছাড়তে জয়ন্তকে ৩ হাজার টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু জয়ন্ত ইতস্তত করলে ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়. ৩০ হাজার টাকা।
সনৎ ঝা, শিলিগুড়ি: নাবালিকার পাচার রুখে পুলিশের সংবর্ধনা পেলেন শিলিগুলির এক ব্যবসায়ী। শিলিগুড়ির জয়ন্ত কুমার সিংহ গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করেন। গাড়ি ভাড়া দিতে দিতে তাঁকে চালকদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে মাঝেমধ্যে তিনি নিজেও গাড়ি চালান। গত ২৮ জুনও একটি গাড়ি ভাড়া চেয়ে তাঁর কাছে একটা ফোন এসেছিল। ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলা হয়, জলপাইগুড়ির বেলাকোবায় তাঁর বোন থাকেন। তাঁকে ১ জুলাই বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে হবে। ওই ব্যক্তি বলেছিলেন যে, তিনি পঞ্জাবের জলন্ধর থেকে ফোন করছেন। তবে ১ জুলাইয়ের উড়ান বাতিল হয়ে যায়। জানানো হয়, ৬ জুলাই ওই বিমান যাত্রা করবে।
কথা মতো ওই দিন জয়ন্ত নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাত্রীকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে বেলাকোবায় যান। সেখানে তিনি এক নাবালিকাকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যান। মেয়েটির সঙ্গে কোনও জিনিসপত্রও ছিল না। আর তাছাড়া, তার সঙ্গে কেউ ছিলও না। সে একাই গাড়ির জন্য দাঁড়িয়েছিল। এই ঘটনায় সন্দেহ দানা বাঁধে জয়ন্তর মনে। গাড়িতে যেতে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরপর যে ব্যক্তি মেয়েটিকে নিয়ে আসতে বলেছিলেন তাঁকে ফোন করেন জয়ন্ত।পঞ্জাবের ওই ব্যক্তি বলেছিলেন যে, তাঁর বোনকে নিয়ে আসতে হবে বিমানবন্দরে। তিনি বলেন, মেয়েটির পরিচয়পত্র না থাকলে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তখন ওই ব্যক্তি জয়ন্তকে এক মহিলার ছবি পাঠান। বলেন, ওই মহিলা মেয়েটির মা। কিন্তু মেয়েটির পদবীর সঙ্গে ওই মহিলার পদবী মিলছিল না। এ কথা জানিয়ে তিনি ফের ওই ব্যক্তিকে ফোন করার পর মেয়েটিকে বিমানবন্দরে ছাড়তে জয়ন্তকে ৩ হাজার টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু জয়ন্ত ইতস্তত করলে ভাড়া বাড়িয়ে করা হয় ৩০ হাজার টাকা।
এতেই জয়ন্তের মনে যে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল, তা আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। তিনি অনুমান করেন, ওই নাবালিকাকে হয়ত এভাবে পাচার করা হচ্ছে। এরপর আর দ্বিধা করেননি জয়ন্ত। মেয়েটিকে বেলাকোবায় ফিরে আসেন। সেখানে খোঁজখবর করে মেয়েটিকে তার পরিজনদের হাতে তুলে দেন। সেই সঙ্গে যে ফোন করেছিল, তার কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিমও ফেরত দেন জয়ন্ত। স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এক্ষেত্রে জয়ন্ত যে ভূমিকা পালন করেছেন, তার প্রশংসা করেছে পুলিশ।
টাকার টোপেও যে জয়ন্ত তাঁর কর্তব্যবোধ ভুলে যাননি, সেজন্য তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিভিন্ন মহল। এভাবে এক নিরীহ নাবালিকাকে এভাবে পাচার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করায় তাঁর দায়িত্ববোধের প্রশংসা সবাই করছেন। উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়েই ওই নাবালিকাকে পাচারের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন জয়ন্ত। তাঁর এই নিঃস্বার্থ কাজ ওই নাবালিকার জীবনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আশঙ্কা রুখে দিয়েছে। গতকাল এই দৃষ্টান্তমূলক কাজের জন্য জয়ন্তকে সংবর্ধনা জানালেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার।