মুখে পঞ্চব্যঞ্জন, পরনে ব্লেজার! জেলেও মেজাজেই উদয়ন
বাঁকুড়া: গত কয়েকমাস ধরে সে নাকি শুধু মদ আর সিঙ্গাড়া খেয়ে কাটিয়েছে। পুলিশের জেরার মুখে এমনই দাবি করেছে উদয়ন দাস। তবে লক আপে তার খাবারের আব্দারে কোনও কমতি নেই। ভোরবেলা ঘুম থেকে ডাকতে গেলে সটান না করে দিচ্ছে খুনের ঘটনায় এই অভিযুক্ত। কীর্তি নিয়ে প্রশ্ন করলে পুলিশকেও চোখ পাকাতে ছাড়ছে না। খুনে অভিযুক্ত উদয়ন দাস লক আপে আছে বহাল তবিয়তেই! টেনশনের লেশমাত্র নেই। মঙ্গলবার আদালত থেকে লক আপে ফিরে ভাত, ডাল সেদ্ধ, বেগুন ভাজা, আলু চোখা, গাজর-আলু ভাজা আর ডিমের ডালনা দিয়ে পরম তৃপ্তিতে রাতের খাওয়া সারে সে। তারপর নিশ্চিন্তে কম্বল জড়িয়ে লম্বা ঘুম দেয়। সকালে সাড়ে ছ’টা নাগাদ থানার এক পুলিশকর্মী চা-বিস্কুট নিয়ে উদয়নকে ডাকতে চান। কিন্তু, উদয়ন পিছন ফিরে মেজাজের সঙ্গে জানিয়ে দেয় এখন খাব না। গ্রেফতারের আগে তিন মাস স্নান না করলেও, লক আপে উদয়নের চাহিদার শেষ নেই। পুলিশ সূত্রে দাবি, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠেই উদয়ন টুথপেস্ট আর ব্রাশ চায়। তারপর দাঁত মেজে, চুল আঁচড়ে গায়ে চাপিয়ে নেয় ব্লেজার। প্রথমে চা বিস্কুটে ও পরে মুড়ি বেগুনি দিয়ে প্রাতরাশ সারে। পুলিশ সূত্রে দাবি, সকাল থেকে একেবারে ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও, একবারই উদয়নের মেজাজ একটু বিগড়েছে। এক পুলিশকর্মী নাকি উদয়নকে রসিকতা করে বলেন, তোর মাথায় এত দুর্বুদ্ধি! সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে উদয়ন। পুলিশ কর্মীকে চোখ পাকিয়ে বলে, হু আর ইউ? এরপর আবার নীল রঙা ব্লেজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে পায়চারি শুরু করে দেয় সে। পুলিশ সূত্রে দাবি, ঘুমনোর সময় ছাড়া এই ব্লেজারটিকে সে কখনও কাছছাড়া করছে না। এক পুলিশকর্মী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, এই ঢলঢলে ব্লেজারটি তার এত প্রিয় কেন? জবাবে নাকি উদয়ন জানিয়েছে, আগে তার চেহারা ভাল ছিল। গত কয়েকমাসে খারাপ হয়েছে। পাশাপাশি উদয়ন এও জানিয়েছে, গত কয়েকমাস ধরে সে শুধু মদ আর সিঙ্গাড়া খেয়ে কাটিয়েছে। মঙ্গলবার আদালতে উদয়নের একটি প্রশ্ন শুনেও পুলিশকর্মীদের অনেকে অবাক হয়ে গেছেন। সূত্রের খবর, এক পুলিশকর্মীকে উদয়ন চোস্ত ইংরেজিতে প্রশ্ন করে, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি তো মৃত্যুদণ্ড? উত্তরে পুলিশ কর্মী বলেন, হ্যাঁ। এরপর উদয়ন ফের প্রশ্ন করেন, আচ্ছা এখন আদালতে তোলা থেকে মামলার নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত কত সময় লাগতে পারে? উত্তরে পুলিশকর্মী বলেন, ২-৩ বছরও লেগে যেতে পারে। এই শুনেই উদয়ন চুপ করে যান। পুলিশকর্তাদের একাংশের অনুমান, উদয়ন বুঝতে পারছে মিথ্যের জাল বুনে সে বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। সম্ভবত সেইজন্যই সে শাস্তির কথা জানতে চাইছে।