দুর্গাপুরে তরুণীর রহস্যমৃত্যু, ট্রলি ব্যাগে মিলল পচা গলা বিবস্ত্র দেহ, গ্রেফতার সস্ত্রীক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার
পশ্চিম বর্ধমান: দুর্গাপুরে তরুণীর রহস্যমৃত্যু! ট্রলি ব্যাগে মিলল পচা গলা বিবস্ত্র দেহ! গ্রেফতার সস্ত্রীক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার!
দুর্গাপুরের বেনাচিতির এই বহুতলের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন রাজীব কুমার। বছর পঁয়ত্রিশের এই যুবক বাঁকুড়ার মেজিয়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। তাঁর স্ত্রী মণীষাও দুর্গাপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় কর্মরত। দম্পতির ৪ বছরের ছেলে রাঁচিতে থাকে।
বৃহস্পতিবার সকালে একটি ফোনের সূত্র ধরে বহুতলে আসে পুলিশ। ম্যানেজার যে ফ্লোরে থাকেন, সেই ফ্লোরে লিফটের সামনে একটি স্টোর রুম থেকে পাওয়া যায় এই নীল ট্রলি ব্যাগ!! চেন খুলতেই চমকে ওঠেন পুলিশকর্মীরা!! দেখেন এক তরুণীর বিবস্ত্র দেহ!! পচন ধরে গলে গিয়েছে!!
তদন্তে জানা যায়, তরুণীর নাম শিল্পা অগ্রবাল। রাজীব মেজিয়ার যে ব্যাঙ্কে ম্যানেজার, সেখানেই ব্যাঙ্ক-মিত্র হিসেবে কাজ করতেন শিল্পা! এই ঘটনার পরতে পরতে রয়েছে রহস্য!!
পুলিশ সূত্রে খবর, আসানসোলে মাসির বাড়ি যাচ্ছি বলে, গত ৯ তারিখ বাড়ি থেকে বেরোন শিল্পা। কিছুক্ষণ পরে চলে যায়। এই পরিবারের দাবি, শিল্পা আসানসোলে ছিল না। তাহলে কোথায় ছিলেন শিল্পা? ৯ তারিখই রাত সাড় নটা নাগাদ, দুর্গাপুরে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন ব্যাঙ্কের চুক্তিভিত্তক কর্মী এই তরুণী! আর ওই দিন সন্ধেতেই ম্যানেজারের স্ত্রী দু’দিনের জন্য রাঁচি চলে যান!!!
কিন্তু কীভাবে মৃত্যু হল বাঁকুড়ার এই তরুণীর? পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দাবি করেছেন, ১০ তারিখ মাঝরাতে তিনি পাশের ঘরে গিয়ে দেখেন শিল্পা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঘাবড়ে গিয়ে দেহ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন!!
এখানেই শেষ নয়!! ধৃত ম্যানেজারের দাবি, সোমবার তাঁর স্ত্রী রাঁচি থেকে দুর্গাপুর ফেরেন। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে নীল রঙের ট্রলি ব্যাগটি ঘর থেকে বের করে লিফটের সামনের স্টোর রুমে রেখে দেন। ক’দিন ধরে পড়ে থাকায় গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছিলেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা! অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ গিয়ে, উদ্ধার করে শিল্পার পচাগলা মৃতদেহ!!!
কিন্তু, বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় ম্যানেজার ও তাঁর ব্যাঙ্ককর্মী স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এটাকে খুন বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা মনে করছেন, অপরাধ ঢাকতেই আত্মহত্যার গল্প ফাঁদছেন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। পুলিশ জানিয়েছে, ট্রলিব্যাগটি সেলোটেপ দিয়ে মোড়া ছিল এবং ভিতরে প্রচুর ন্যাপথলিন ছিল মৃতের পরিবারের দাবি, অপহরণ করে খুন করা হয়েছে শিল্পা অগ্রবালকে। মৃত তরুণীর আত্মীয়ের দাবি, শিল্পার থেকে এক লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন ম্যানেজার। সেই টাকাই ফেরত আনতে সম্ভবত গিয়েছিল সে।
সবমিলিয়ে দুর্গাপুরে বাঁকুড়ার তরুণীর মৃত্যু ঘিরে ক্রমেই ঘণীভূত হচ্ছে রহস্য! উত্তর খুঁজছে পুলিশ।