"বাইরে থেকে এসে আমায় জ্ঞান দেবে মানতে পারব না", নাম না করে প্রশান্ত কিশোরকে আক্রমণ তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের
২১-এর বিধানসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূলের জয় নিশ্চিত করতে, নানারকম কৌশল নিয়েছে নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা "আই-প্যাক"। কিন্তু এ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই ক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করেছে...
উত্তর ২৪ পরগনা: মিহির গোস্বামীর পর এবার নাম না করে প্রশান্ত কিশোরকে তুলোধনা করলেন তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। বিধানসভা ভোটে দাঁড়াবেন না বলেও জানিয়ে দিলেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে জোর ধাক্কা খাওয়ার পরই, প্রখ্যাত নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে গাটছঁড়া বেঁধেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল।
২১-এর বিধানসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূলের জয় নিশ্চিত করতে, নানারকম কৌশল নিয়েছে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা "আই-প্যাক"। কিন্তু এ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই ক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করেছে।
কয়েকদিন আগে কোচবিহারের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামীও পিকে-র কাজে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন! বলেছিলেন, কোনও রাজনৈতিক দল ঠিকাদারি সংস্থাকে চালাতে গেলে ক্ষতির সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। দলটা কর্মীরাই চালায়। আইপ্যাক নামক কোনও ঠিকাদারি সংস্থা যদি দল পরিচালনা করে তাহলে ভাল হয় না।
এবার এ নিয়ে মুখ খুললেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক। বলেন, বাইরে থেকে রাজনীতি করা লোক, এবার বাইরে থেকে এসে যেসব জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, আমার বিধানসভা কেন্দ্রে আমার লোকের থেকে যা জানতে চাইছেন, তাতে সম্মানহানি হচ্ছে, অনেকেই ফোন করছেন। আমি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। ২০-২২ বছরে এসে যে একদিনের জন্য রাজনীতি করেনি, সে আমায় জ্ঞান দেবে মানতে পারছি না।
মুকুল রায় যখন তৃণমূলে তখন শীলভদ্র দত্ত, তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন! একসময় তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনাও জোরাল হয়েছিল! ২০১৫ সালে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে শীলভদ্রকে সাসপেন্ডও করেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব! গত অগাস্ট মাসেই তাৎপর্যপূর্ণ ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘দমবন্ধ হয়ে আসছে। মন চাইছে মুক্ত আকাশে মুক্তি।’
গতকাল সভামঞ্চ থেকে শীলভদ্রকে বলতে শোনা যায়, দল যদি পদত্যাগ করতে বললে তিনি সময় অপচয় করবেন না। বলেন, আমি সিড়ি ভেঙে উপড়ে উঠেছি, অন্য কিছু নয়, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে অনেক কিছু করতে পারিনি, কাউকে দোষ দিচ্ছি না, দোষ আমার। দল অনেক বড় পদ দিয়েছে, সাধারণ সম্পাদক করেছে, কী কারণে আমি সাসপেন্ড হয়েছিলাম, কেনই বা সাসপেনশন তুলে নেওয়া হল জানি না। দলের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলিনি, দল যদি পদত্যাগ করতে বলে একটুও সময় নেব না।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ব্যারাকপুরের দু’বারের তৃণমূল বিধায়ক কি তাহলে ভোটের আগে দলবদল করতে পারেন? যদিও এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ব্যারাকপুরের বিধায়ক। বলেন, এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি, দলের বিরুদ্ধে কোনও কথা বাইরে বলব না।
তবে দলবদলের জল্পনা উস্কে দিয়েছেন ব্যারাকপুর বিজেপির আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহ। তিনি বলেন, অনেক বিধায়কই আসবেন। অনেকে কাজ করতে পারছেন না। দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাংলার উন্নতি করতে গেলে বিজেপির সঙ্গেই আসতে হবে।
যদিও দলের বিষয়, দলেই আলোচনা করে মেটানোর কথা বলছে তৃণমূল। খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, এমনিতেই ওনার জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে, দাঁড়াবেন কি দাঁড়াবেন না, সেটা ওনার বিষয়, কিন্তু যদি মানঅভিমান নিয়ে সুব্রত বক্সিকে জানান।
শীলভদ্র দত্ত কি শেষ অবধি আদৌ কোনও বড় পদক্ষেপ নেবেন? নিলেও ব্যারাকপুরের রাজনীতিতে তার প্রভাব কতটা পড়বে? এ সব নিয়েই এখন জোর জল্পনা।