Subha Paul Exclusive: বায়ার্নের বিশ্বব্যাপী খোঁজে নির্বাচিত হাওড়ার শুভ, দেশকে গর্বিত করার স্বপ্ন নিয়ে উড়ান ভরার অপেক্ষায়
ওর গোল করার খিদে ও পজিশানিং সেন্স মনে ধরেছে বায়ার্নের কোচদের, জানিয়েছেন শুভর ক্লাব সুদেভার কর্ণধার অনুজ গুপ্তা
কলকাতা : হাওড়ার সালকিয়া থেকে দিল্লি হয়ে মিউনিখ। হাওড়ার গলিতে ফুটবলে হাতেখড়ি থেকে ব্যাভারিয়ান জায়ান্টদের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ভবিষ্যতের তারকা ফুটবলারদের সঙ্গে নিজেকে আরও শানিয়ে তোলার সুযোগ। শুভ পাল। গত আই লিগে দিল্লির ক্লাব সুদেভা এফসি-র হয়ে গোটা দেশের নজর কাড়া ছেলেটি এবার ধরছে জার্মানির পথ। বায়ার্ন মিউনিখের বিশ্বব্যাপী তরুণ তুর্কিদের খোঁজে নির্বাচিত হয়েছে সে। প্রথম ভারতীয় হিসেবে যে কীর্তি গড়েছে শুভ। বায়ার্নে মিউনিখে গিয়ে অনুশীলনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে পেশাদার চুক্তির পথও খুলে যেতে পারে তাঁর সামনে।
বিশ্বের ৬৪টি দেশ জুড়ে মোট ৬৫৪ জন তরুণ ফুটবলারদের প্রাথমিকভাবে স্কাউট করা হয়েছিল জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখের তরফে। সেখান থেকে বেশ কয়েক দফা ছাঁটাই-বাছাইয়ের পরে ক্রমে ১০০ জন, তারপর ৩৫ জন ও সবশেষে ১৫ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর বিশ্বব্যাপী বায়ার্নের যে ফুটবলারের খোঁজে নির্বাচিত ১৫ জনের চূড়ান্ত তালিকায় ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে সুযোগ পেয়েছেন শুভ পাল। বায়ার্ন মিউনিখের তরফে যে ১৫ জনের দলের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে 'ওয়ার্ল্ড স্কোয়াড'। গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই হয়েছে অনলাইনে।
ওয়ার্ল্ড স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে শুধু সুযোগ পাওয়া শুভ পালের নাম জ্বলজ্বল করছে বায়ার্ন মিউনিখের ওয়েবসাইটেও। আপাতত জার্মান চ্যাম্পিয়নদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি মাসের শেষেই গোটা বিশ্ব থেকে বেছে নেওয়া এই ১৫ জনকে প্রাথমিক পর্বের অনুশীলনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে মেক্সিকোতে। সেখানে দু-সপ্তাহের অনুশীলন চলবে। যে পর্বে ওয়ার্ল্ড স্কোয়াডের সদস্যরা খেলবেন তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ। তারপর করোনা পরিস্থিতি ও বাকি সবকিছু বিচার করে সুবিধা মতো মিউনিখে নিয়ে যাওয়া হবে শুভদের।
অগাস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে বায়ার্ন মিউনিখের মাঠে শুরু হবে চূড়ান্ত তথা মূল পর্বের অনুশীলন। যেখানে প্রাক্তন বায়ার্ন মিউনিখ অধিনায়ক তথা জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপজয়ী ক্লাস আগেনথেলার ও বায়ার্নের যুব দলের আন্তর্জাতিক কোচ ক্রিস্টোফার লোচ শুভদের ট্রেনিং দেবেন। যে দু'জন যুক্ত ছিলেন গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময়েও। পাশাপাশি বায়ার্নের এই সুযোগের পাশাপাশি ক্লাব তথা জার্মান কিংবদন্তি অলিভার কানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা জানানোও হয়েছে সকলকে।
গত মার্চে আই লিগ শেষের পর সপ্তাহ খানেক জন্য হাওড়ার সালকিয়ার সীতানাথ বোস লেনের বাড়িতে ফিরলেও তারপরই ফের দিল্লি ফিরে যান শুভ। লকডাউনের মাঝেও সুদেভার অ্যাকাডেমিতে চালিয়ে গিয়েছেন কড়া অনুশীলন। আর এবার তার সামনে নিজেকে বিশ্বমঞ্চে মেলে ধরার অনন্য সুযোগ। প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই সুযোগ কতটা চ্যালেঞ্জের জানতে চাইলে শুভ বলেছেন, 'ঈশ্বরের কৃপায় এই সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ পেয়ে সত্যিই দারুণ খুশি। ভারতের প্রথম ফুটবলার হিসেবে এই সুযোগটা পেয়েছি বলে বাড়তি চিন্তা করছি না, কোচও বলেছেন নিজের খেলাটা উপভোগ করতে। আর আশা রাখি ভারতের নাম উজ্জ্বল করতে পারব বিশ্বমঞ্চে, ভরসা রাখি গোটা ভারতকে পাশে পাব।'
শুভ পালের নির্বাচন যার সুবাদে তিনি সুদেভা এফসি-র মালিক অনুজ গুপ্তা। এবিপি লাইভের সঙ্গে গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাঝে অনুজ বলছিলেন, 'বায়ার্নের পক্ষ থেকে গত মার্চ নাগাদ সেরা ফুটবলারদের ম্যাচের ভিডিও চেয়ে পাঠানো হয়। শুভ আমাদের ক্লাবের অন্যতম সেরা ফুটবলার, তবে সত্যি বলতে ভিডিও পাঠালেও প্রথমে প্রত্যাশা সেভাবে কিছু ছিল না। তবে একের পর এক রাউন্ড যেভাবে ও এগোচ্ছিল, তাতে ভরসাটা তৈরি হচ্ছিল। ইন্টারভিউতে বসছে হয়েছে আমাকেও। বায়ার্নের যে কোচরা স্কাউটিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তারা জানিয়েছেন, সব সময় গোল করার খিদে ও ঠিক পজিশানিং সেন্সের সুবাদেই ওঁকে নির্বাচিত করেছেন তারা।'
ছোটবেলায় হাওড়ায় ফুটবলের হাতেখড়ির পর ২০১৫-১৬ সালে দিল্লির সুদেভা এফসিতে পেশাদারি চুক্তি পান শুভ। তারপর থেকে ক্রমাগত স্ট্রাইকার হিসেবে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক গ্রুপে নজর কাড়তে থাকেন। ২০১৯ সালে কল্যাণী আয়োজিত হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ স্যাফ কাপে ছিলেন টপ স্কোরার। যেখানে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়। নিয়মিতভাবেই বিবিয়ানো ফার্নান্ডেজের দলের সদস্য ২০০৪ সালে জন্মানো শুভ। বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে খেলার পর চলতি বছরে শেষ হওয়া আই লিগে প্রথমবার সিনিয়র সুদেভা দলে খেলার সুযোগ পান শুভ।
দিল্লি থেকে দূরভাষে শুভ এবিপি লাইভকে বলছিলেন, 'দুবাইতে অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে খেলে ফেরার পর আই লিগের চারটে ম্যাচে খেলেছিলাম। তবে সেবার মাত্র দুটো গোল করতে পেরেছিলাম।' যে প্রসঙ্গে সুদেভার কর্ণধার অনুজ বলছিলেন, 'দুটো গোল করলেও বেশ অনেকগুলো গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল ও। বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলার ক্ষমতার জন্যই কোচ ওঁকে অধিনায়কের আর্মব্যান্ডও তুলে দিয়েছিলেন। গোল চেনার পাশাপাশি এরিয়াল বলে দক্ষতা ও বল নিয়ে দ্রুত গতি বাড়ানোর ক্ষমতা শুভ-র শক্তি।'
সুদেভার কর্নধারের প্রত্যাশা চোটমুক্ত থেকে শুভ যদি নিজের স্বাভাবিক ছন্দে ফুটবল খেলতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে অনেক বড় সুযোগ হয়তো অপেক্ষা করছে ওঁর জন্য।